ফুসফুসের প্রদাহজনিত সংক্রামক রোগ নিউমোনিয়া। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাসের মাধ্যমে এটি দেহে প্রবেশ করে। এটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় এবং ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। ফলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে কাশি বেড়ে যায়। বিশ্বজুড়ে নিউমোনিয়া সব বয়সি মানুষের জীবাণুঘটিত মৃত্যুর বড় কারণ হিসাবে চিহ্নিত। শিশুদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো এটি মারাত্মক হয়ে ওঠে। নবজাতক ও পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
* লক্ষণ
দুই মাসের কম বয়সি শিশুদের শ্বাস নেওয়ার হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, ২ মাস থেকে ১২ মাস বয়সি শিশুদের মিনিটে ৫০ বারের বেশি এবং ১২ মাস থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুর মিনিটে ৪০ বারের বেশি হলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। এর সঙ্গে শিশুর বুকের পাঁজরের নিচের অংশ দেবে গেলে, তা নিউমোনিয়ার অন্যতম লক্ষণ।
▶ তীব্র বা মাঝারি মাত্রার জ্বর।
▶ কাশি ও শ্বাসকষ্ট।
▶ শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া খাবারে অনীহা।
▶ শিশুর শরীর নীল বর্ণ ধারণ করতে পারে।
▶ ঘাম, অস্বস্তি ও ডায়রিয়া হতে পারে।
▶ বমি হতে পারে।
▶ খিঁচুনি ও শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে পারে।
নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে নয়। তবে রোগীর কাশি বা হাঁচি থেকে এ রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। একে ড্রপলেট ইনফেকশন বলা হয়।
* যেসব শিশুর ঝুঁকি বেশি
সাধারণ জ্বর ও নিউমোনিয়ার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। সাধারণ জ্বরে শিশুর সর্দি কাশি থাকলেও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় না। কিন্তু নিউমোনিয়া হলে শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
* যেসব শিশুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি
▶ অপুষ্টির শিকার ও নবজাতক।
▶ যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম।
▶ জন্মগত হৃদরোগ বা ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত শিশু।
▶ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত শিশু।
▶ ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে যারা বাস করে।
▶ অতিরিক্ত ভিড় ও বায়ুদূষণে যারা অবস্থান করে।
▶ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার শিশু।
* চিকিৎসা
নিউমোনিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে এটি প্রতিহত করা সম্ভব। সাধারণত উপসর্গের তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে নিউমোনিয়াকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়-খুব মারাত্মক, মারাত্মক ও সাধারণ নিউমোনিয়া। সাধারণ নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেই করা সম্ভব। মারাত্মক বা খুব মারাত্মক লক্ষণগুলো না থাকলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি না করেও চিকিৎসা করা যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা যাবে না।
এ সময় শিশুর খাবারের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। দুই বছরের কম বয়সি শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। কাশি হলে বুকে তেল মালিশ করার প্রয়োজন নেই। অহেতুক সাকশন যন্ত্র দিয়ে কফ পরিষ্কার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করাও ঠিক নয়। শিশুর সংকটাপন্ন অবস্থা যেমন-শ্বাসকষ্ট, বমি, খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
* প্রতিরোধ
মারাত্মক নিউমোনিয়ায় শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেশি। তাই নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সবচেয়ে জরুরি। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন ও সচেতনতাই যথেষ্ট।
▶ শিশুর জন্মের পর এক ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ খাওয়ান।
▶ অন্তত ছয় মাস শিশুকে নিয়মিত মায়ের দুধ দিন।
▶ বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
▶ শিশুকে চুলার ধোঁয়া, মশার কয়েল ও সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখুন।
▶ শিশুকে সময়মতো নিউমোনিয়ার টিকা দিন।
▶ নবজাতকের মায়েদের পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন।
লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, নিওন্যাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ঢাকা। শিশু ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
Development by: webnewsdesign.com