নন এমপিওভূক্ত প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। অথচ জোর করে ছাত্র বেতন আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
তথ্য আছে, অধিকাংশ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাল ফান্ড আছে। মালিক, পরিচালক কিংবা উদ্যোক্তাগণ বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি কিংবা কোন গ্রুপ পরিচালিত। এরা চাইলেই শিক্ষকদের এক বছরের বেতন নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে পারত। তারা তা না করে শিক্ষক আর ছাত্র/ছাত্রী-অভিভাবকদের মুখোমুখি করছে।
আধুনিককালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য আর শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করা হয়েছে।শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এটা দিয়ে ব্যবসা করা উচিত নয়। এটি করুণা কিংবা দান নয়, পরিণত করতে হবে অধিকারে। শিক্ষা ব্যবসা নয়, শিক্ষা সেবায় রূপান্তরিত করতে হবে।
মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের ভরণপোষণের দায় প্রথমত রাষ্ট্রের, দ্বিতীয়ত প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের। অভিভাবকদের দায়ও নেই, চুক্তি ও নেই। কিন্তু,রাষ্ট্র কিংবা পরিচালকদের দায় ও চুক্তি উভয়ই আছে।
তথ্য আছে, প্রতিষ্ঠান মালিকদের অনেকেই বিশাল বিত্তবৈভব ও সম্পদের মালিক। অথচ এরা নির্বিকার। চাপ দেয় শিক্ষকদের বেতন উঠানোর জন্য।শিক্ষকরা অনন্যোপায় হয়ে অভিভাবকদের সাথে ধস্তাধস্তি তে লিপ্ত হয়।
এ সকল প্রতিষ্ঠানে প্লে-নার্সারি তে মাসিক পরীক্ষায় প্রবেশ পত্র সিস্টেম চালু করে অবুঝ নিষ্পাপ শিশুদের উপর মানসিক নিপীড়ন চালায় কর্তারা। এই যে সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক এক্সাম, এগুলো পরীক্ষা নয় বেতন আদায়ের ফন্দী। বাচ্চাদের কাছে বেতনের কথা বলে শ্রেণী শিক্ষকের চাপ প্রয়োগ কোন আইন, কিসের শিক্ষা মাননীয় স্পীকার?
শিক্ষার এ দৈন্যতা আর শিক্ষকদের এ দৈন্যদশা থেকে মুক্তির একটি উপায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা। স্কুল-কলেজ বেসরকারী ভাবে চালানো বন্ধ করা।কেউ চাইলে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে আগেই টাকা জমা রাখা এ আইন চালু করা।
করোনাকালে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন প্রদানে রাষ্ট্র ও পরিচালকদের মুখ্য ভূমিকা পালন করা উচিত । অভিভাবকদের চাপ প্রয়োগ না করে সমঝোতা, সহনশীলতা ও আলাপ-আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। অফিসিয়াল আদেশ দিয়ে নয়।
উপরন্তু করোনার এ দুর্যোগের সময় মানবিকতাই বড়। একজনের সংকট সমাধানে আরেকজনের উপর জুলুম করা বড় অমানবিক। এ সময়ে শিক্ষকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে নিযুক্ত হওয়া দোষের কিছু দেখি না। সম্মানহানিরও কিছু নয়।
বিভিন্ন সুত্রে খবর পাওয়া গেছে, সরকারী -বেসরকারী, এমপিও-নন এমপিও,প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জোর জবরদস্তি, হুমকি -ধমকী, অফিস আদেশ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। এমন কি টিফিনের টাকা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ফি, কোচিং ফি ইত্যাদি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এগুলো আসলেই ডাকাতি। আরো খবর আছে, টাকা তুলে মালিকরা নিয়ে নিচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন ঠিকই বকেয়া থাকছে। এ যেন হরিলুটের দেশ। কর্তৃপক্ষ ফান্ড থেকে ভর্তুকি দিয়ে শিক্ষকদের পাওনা পরিশোধের কোন কথা শোনা যাচ্ছে না। এটাই ছিল বড় মানবিকতা এ সময়ে।
সংকট বিশ্বব্যাপী। মহামারী সারা দুনিয়ায়। বাংলাদেশে সরকারী স্কুল কলেজের শিক্ষকরা এবং এমপিওভূক্ত কর্মচারীরা বিনা কর্মেই টাকা পাচ্ছেন মাসে মাসে। এটা কি যুক্তিযুক্ত? এটা কি বৈধ? এটা কি জায়েজ?
সেদিন সরকারী কলেজের এক সহযোগী অধ্যাপক বিস্তর প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে তিনি মাসে মাসে বেতন পান এই করোনাকালে তার জন্য মহা আনন্দিত উল্লেখ করে বেসরকারী শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপনের কথা বর্ণনা করে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। এ জন্য তিনি অভিভাবকদের তিরস্কার, দোষারোপ ও ভর্ৎসনা করে মাসের শুরুতেই বন্ধ স্কুলে গিয়ে বেতন পরিশোধের নসিহত করলেন। নতুবা পাপ হয়ে যাবে।
অথচ তিনি না পড়িয়ে গলধঃকরণ করেছেন জনগণের ট্যাক্সের টাকা। একটু ও অনুশোচনা নেই। তার বেলায় আর ধর্ম নেই, নেই নসিহত। একটি জনপদে কোন মানুষ ও প্রাণী যদি না খেয়ে মরে থাকে এর শতভাগ দায় সেই রাষ্ট্রের। প্রফেসর সাব সেটি জেনেও সেদিকে একটু কথা না বলে অভিভাবকদের গালমন্দ করেছেন। এটাই কি শিক্ষা?
সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধকালীন সময়ে শিক্ষকদের যারা মোটা অংকের বেতন পান। সেটা ভাগাভাগি করুন। বিষয়টা আজগুবী মনে হলেও সরকার চাইলে করতে পারে। দেশের আইনগুলো তো আর ওহী নয়, যে বদলানো যাবে না।
লেখক: গোলজার আহমদ হেলাল
সহ-সভাপতি, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব।
Development by: webnewsdesign.com