ইফতারির সময় যা করতে হবে :
১. ইফতারিতে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যেইসব খাবার তৈরি করা হয় যথা পেয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে।
২.একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা যাবে না। অনেকে ইফতারিতে বসেই খেতে খেতে ইসোফেগাস তথা গলবিল পর্যন্ত খেয়ে ফেলে তা কখনোই করা যাবে না।
৩। ইফতারীতে ইসুপগুলের শরবত, ডাবের পানি, ইত্যাদি খাওয়া যাতে পারে আর শর্করা জাতীয় খাবার যথা খেজুর, পেয়ারা, ছোলা, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
৪। ইফতারি হতে হবে লাইট মিল কিংবা অল্প পরিমান খাবার তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নেয়া ভাল। সম্ভব হলে তারাবীর নামাজের আগেই খেয়ে নিতে হবে।তাহলে খাবারের পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নামাজ পড়তে গেলে নামাজের সময় এক প্রকার ব্যায়াম হয়ে যাবে এবং সেটা খাবার পরিপাকের ক্ষেত্রে সহায়ক সেই সাথে এসিডিটি হবার ঝুঁকি কমে যাবে।
৫। অবশ্যই রোজার মাসে এসিডিটি থেকে বাচার জন্য ডিনার কিংবা সেহরি উভয়ক্ষেত্রে শোয়ার ১ ঘন্টা আগে খাবার শেষ করতে হবে এবং খেয়ে অবশ্যই কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তারপর ঘুমাতে হবে।অন্যথায় এসিডের ব্যাক ফ্লো হয়ে GERD এর মত রোগ হতে পারে।
৬। টক জাতীয় ফলে যদিও প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি থাকে তথাপি টক জাতীয় ফলে সাইট্রিক এসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল সাবধানতার সাথে খেতে হবে। ভাল হয় রাতের খাবার শেষ করে খেলে।
৭। টমেটো ইফতারির সময় অনেকের প্রিয় খাবার তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমান সাইট্রিক এসিড ও ম্যালিক এসিড থাকে এবং এটা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে তাই টমেটো বেশী পরিমান না খাওয়াই উত্তম।
৮। ঝাল খাবার পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমান বাড়িয়ে দেয় তাই কাচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।
৯। গরম খাবার যথা চা, কফি ইত্যাদি পাকস্থলিতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণের পরিমান বাড়িয়ে দেয় তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করে চলা উচিত।
সেহরির সময় যা করণীয়:
ফজর নামাজের সময় হবার আগ পর্যন্ত সেহরি করা যায়।রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেরিতে সেহরি করার কথা বলেছেন। এটা সুন্নাত, এই সুন্নাত পালনের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। দেরিতে সেহরি করার জন্য এই কারণে বলা হয়েছে যেনো সেহরি করে ফজর নামাজ এর প্রস্তুতি নেওয়া যায় আর ফজর নামাজ এর প্রস্তুতি নিয়ে নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে যে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে তা খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। যদি কেউ ফজরের সময় হবার ১-২ ঘন্টা আগে সেহরি করে তাহলে সে তো আর সেহরি শেষ করে ২ ঘন্টা বসে থাকবেনা বরং শুয়ে পরবে আর খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে যাওয়া এসিডিটির অন্যতম কারণ। তাই দেরিতে সেহরি করা সুন্নাত আর সেহরি করে নামাজ পড়ে তারপর ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্যও উত্তম।
সেহরির খাবারেও এসব জিনিস পরিহার করা উচিত যা পাকস্থলীতে এসিডিটি করে। যেমন চর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, চা কফি ইত্যাদি।
এবার আলোচনায় আসি, যাদের পূর্ব থেকেই এসিডিটি কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের করণীয় কি?
মূলত যাদের এসিডিটির সমস্যা কিংবা গ্যাস্ট্রিক রোগ রয়েছে তারা গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ খেতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এবং রোযা রাখতে পারবেন আর সাথে সাথে উপরের নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে।গ্যাস্ট্রিক এর কয়েক ধরনের ঔষধ রয়েছে তার মধ্যে এন্টাসিড কিংবা ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী । এন্টাসিড প্লাস সিরাপ সন্ধ্যায় খাবারের পরে খাওয়া যায় আর ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল ভোর রাত্রে খেলে উপকার পাওয়া যায়। ল্যান্সোপ্রাজল এর কার্যকারীতা দীর্ঘসময় থাকে।
তথাপি মেডিসিন নেওয়ার পরেও যদি কারো রোজা রাখতে বেশি কষ্ট হয় অথবা যদি প্রচণ্ড বুকে ব্যাথা উঠে তাহলে তার জন্য বিশেষজ্ঞ দীনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রোজা ভংগ করার অবকাশ রয়েছে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র রমযান মাসের গুরুত্ব বুঝে সিয়াম সাধনা করার তাওফীক দান করুন।
Development by: webnewsdesign.com