রূপগঞ্জে বিলুপ্তির পথে শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির ঘর

বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২:২২ অপরাহ্ণ

রূপগঞ্জে বিলুপ্তির পথে শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির ঘর
apps

আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে গ্রামেও। মাটির ঘর/ ছনের ঘরের জায়গায় তৈরি হচ্ছে প্রাসাদসম অট্টালিকা। মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইট পাথরের দালান কোটা। একটু সুখের আশায় মানুষ কত কিছুই না করছে। মাটির ঘরের শান্তি ইট পাথরের দালান কোঠায় খুঁজে পাওয়া ভার।

তারপরও মানুষ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নগরায়ণের সাথে সাথে পাকা দালান কোঠাই তৈরি করছেন। এতে করে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর।

প্রতিটি গ্রাম হবে শহর “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই শ্লোগানকে “সামনে রেখে গ্রামে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের নির্দশন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির তৈরি ঘর।

যাকে গ্রামের মানুষ খুব শখ করে বলতো, গরিবের এসি ঘর। কিন্তু ইট পাথর এর আভিজাত্যের দাপটে, মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন মাটির ঘর তেমন একটা পড়ে না বললেই চলে।

খুব বেশী দিন আগের কথা নয়, ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো মাটির ঘর। গ্রামের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে পাকা দালানে সংখ্যা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সেই পুরনো মাটির ঘর।

এক সময় রূপগঞ্জ উপজেলা দুইটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের প্রায়, প্রতিটি গ্রামে এ মাটির বাড়ি-ঘর, মাটির দোতলা ঘর চোখে পড়তো। যেখানে লাল বা চিপটে মাটি সহজলভ্য সেখানে এ ঘরগুলো বেশি তৈরি করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর।

এই ঘর শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে গ্রামের হত দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান ও এই মাটির ঘর তৈরি করতেন।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকেই মাটির ঘর তৈরীর প্রচলন ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে এই ঘর ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে ২-৩ ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেয়া তৈরি করা এই মাটির বাড়িতে গৃহিণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণসহ গ্রামাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন হওয়ায় গ্রামের মানুষরা ইট-সিমেন্টের বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন। ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বির্বতনে ইট-বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির ঘর।

উপজেলার রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইউনিয়নের বৈরাগবাড়ীর টেক এলাকার তারা মিয়া বলেন, বাপদাদার তৈরী মাটির ঘরে এখনও আমরা বসবাস করছি, মাটির তৈরি ঘর গুলি তে বিদ্যুৎ চলে গেলেও বাতাসের অভাব হয় না । বসবাস করতে ভাল লাগে। মনে হয় এসি রুমে বাস করচ্ছি।

একই এলাকার সমাজসেবক মাকসুদুল হাসান মতিন বলেন, মাটির তৈরি এই ঘর তারা পৈত্রিকভাবে পেয়েছেন। তাদের পূর্ব পুরুষরাও এই মাটির তৈরি ঘরেই জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাই এখনও তারা এই বাড়িগুলো ভাঙ্গেন নি।

রুপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগর পাড়া এলাকার সাংবাদিক নজরুল ইসলাম লিখন বলেন, মাটির তৈরী ঘর গুলো খুব আরামদায়ক, ফ্যান ছাড়া ঘুমানো যায়, তেমন অসুবিধা হয় না।

কিন্তু কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি জানান, যৌথপরিবারগুলি ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে, বিয়ের কিছুদিন পর বাবা, মা, ভাই, বোনকে ত্যাগ করে, ছোট পরিবার গঠন করতে আগ্রহী হচ্ছে।

গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার ফলেই গত ১০ বছরের মধ্যেই মাটির ঘর ভেঙ্গে পাকা দালান তৈরি করা হয়েছে। সেই সাথে এখন আর কেউ নতুন ভাবে মাটির ঘর তৈরি করতে চাচ্ছেন না, যার যেমন অর্থকরী আছে তা দিয়েই সকলেই ইট-সিমেন্ট দিয়ে পাকা বাড়ি তৈরি করছেন।

অনেকেই বলছেন এঅবস্থা চলতে থাকলে একসময় মাটির ঘর ছবি ছাড়া আর বাস্তবে থাকবে না।

Development by: webnewsdesign.com