রামবি ভিসির গাড়ি-বাড়ি ব্যবহারে দুর্নীতির অভিযোগ

বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১ | ৫:১০ অপরাহ্ণ

রামবি ভিসির গাড়ি-বাড়ি ব্যবহারে দুর্নীতির অভিযোগ
apps

রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের বিরুদ্ধে এবার বাসা ও গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাসাটিকে গেস্ট হাউজ হিসেবে দেখিয়ে কৌশলে তিনি অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রামেবি সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী ভবন না থাকায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ডিভিশনাল কন্টিনিউইং এডুকেশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে রামেবির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রামেক হাসপাতালের পরিচালকের বাংলোটি ভিসির বসবাসের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ নেওয়া হয়।

পরে রামেবির অর্থায়নে প্রায় নয় লাখ টাকা ব্যয়ে সেটি সংস্কারও করা হয়। এরপর গত বছরের অক্টোবর থেকে ভিসির পরিবার সেখানে বসাবাস করছেন। তবে ভিসি সরকারি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বাসাটিকে কৌশলে গেস্টহাউস হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি বিধি মোতাবেক বেতন-ভাতা থেকে বাসা ভাড়া কর্তন না করে তা নিয়মিতভাবে উত্তোলন ও আত্মসাৎ করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুরু থেকেই ভিসি ঢাকায় থাকেন এবং মাঝে-মধ্যে রাজশাহীতে এলে বাসায় থাকেন। কিন্তু ভিসির নামে বরাদ্দকৃত বাসাটিতে তার ছেলে, ছেলের বউ, শ্যালিকা এবং মা-বাবা নিয়মিতভাবে বসবাস করছেন। ভিসি বাসা ভাড়া কর্তন না করলেও বাসায় ব্যবহƒত নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্রও (সাবান, টিসু, ফিনাইল, হারপিক ইত্যাদি) রামেবির স্টোর থেকে সরবরাহ করা হয়।

এক্ষেত্রে ভিসির বেতন স্কেল অনুযায়ী বাসা ভাড়া বাবদ ২২ হাজার সাতশ টাকা, বিদ্যুত বিল পাঁচ হাজার টাকা, ডিসের বিল এক হাজার দু’শ টাকা, ইন্টারনেট বিল দু’হাজার পাঁচশ টাকা এবং বাসায় ব্যবহƒত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামসহ প্রতিমাসে অন্তত ৩৫ হাজার টাকা তিনি আত্মসাৎ করছেন। এর আগে তিনি রামেকের অধ্যক্ষের বাসাটি আনঅফিসিয়ালি ফ্রি ব্যবহার করতেন।

এদিকে সূত্র আরো জানায়, ভিসির ছেলে এবং ছেলের বউ রাজশাহীর গোদাগাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। ভিসির ছেলে তার শশুরের পরিবার নিয়ে ভিসির সরকারি বাসায় বসবাস করেন এবং রামেবির ক্যারিবয় গাড়ি (রাজ-মেট্রো-১১-০১১৫) ব্যবহার করে নিয়মিত গোদাগাড়ীতে অফিস করেন।

শুধু তাই নয়, রামেবির ওই গাড়ি নিয়ে তারা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেন। ওই গাড়িটি একবার ঢাকা যাতায়াতে তেল ও টোল বাবদ প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে একবার গোদাগাড়ী যাতায়াতে তেল খরচ হয় প্রায় হাজার টাকা।

সূত্রমতে, ভিসির ছেলের ব্যবহƒত ওই গাড়ির পেছনে প্রতি মাসে রামেবির প্রায় সত্তর হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া ড্রাইভারের বেতন ও গাড়ির মেইনটেনেন্স খরচ তো রয়েছেই। এভাবে প্রায় দেড় বছর থেকে ভিসির ছেলে অবৈধভাবে রামেবির গাড়ি ব্যবহার করে রামেবি তথা সরকারি অর্থের ক্ষতি সাধন করছেন।

এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার ছেলে ডা. আস-আদ হাবীব বলেন, এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই বাসাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও রামেবির গাড়ি ব্যবহার করে অফিসে যাতায়াতের বিষয়টিও অসত্য বলে জানান তিনি।

বিশবিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ খালেদ বলেন, বাড়ি ভাড়ার টাকা বেতনের সঙ্গে আসে। তাই ভিসি স্যারই এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। তবে ভিসি’র ছেলের রামেবি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, রামেবির আইন ও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একের পর এক এডহক ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, জামায়াত-বিএনপি প্রীতি, শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকায় থাকা, অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা নেওয়া, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আসন বৃদ্ধি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে রামেবি ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের বিরুদ্ধে।

দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া/এসআরসি-২৪

Development by: webnewsdesign.com