রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সভাপতির পাওয়ারর প্র্যাকটিস করে ঘনিষ্ঠ ৩ জন শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যদের মাস্টার্স পরীক্ষার ফল বিপর্যয়, সেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ উঠেছে। মাস্টার্সের ৮টি কোর্সের মধ্যে ৫টি কোর্সের পরীক্ষক ছিলেন সভাপতি নিজেই। একইভাবে থিসিস গ্রুপের ক্ষেত্রে একাই ৬টি কোর্সের ৩টি কোর্সের পরীক্ষক ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের সভাপতি ড. সৈয়দ মো: আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ তুলেছেন উক্ত বিভাগের (২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে (৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর এম.এস.এস পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ও তদন্ত পূর্বক ফলাফল পরিবর্তনের আবেদন জানান তারা।
আবেদনপত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, অনার্স পরীক্ষায় ২৯ জনের মধ্যে ১১ জন ৩.৫০ এর বেশি সিজিপিএ অর্জন করে। এদের মধ্যে একজন (মোস্তাকিম খান) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম স্থান লাভ করে অগ্রণী ব্যাংক স্বর্ণ পদক পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে এবং আরো একজন (সুলতান কবির) ২য় স্থান লাভ করে ইউজিসি বৃত্তি লাভ করেন।
কিন্তু বর্তমান সভাপতি ড. সৈয়দ মো: আব্দুল্লাহ্ আল মামুন চৌধুরী সভাপতি হওয়ার পর থেকে বিভাগের সকল শিক্ষার্থীর জীবনে দুঃসময় নেমে আসে। তার স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ছাত্র-ছাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, পক্ষপাতিত্ব এবং ক্লাস ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা ও অনৈতিক কার্যকলাপের ফলে আমাদের মাস্টার্স (এম.এস.এস-২০১৯) পরীক্ষার ফলাফলে নজিরবিহীন বিপর্যয় ঘটেছে।
অভিযোগের একাংশ- গত ১১/১১/২০২০ তারিখে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় যে, ২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৩ জন (থিসিস গ্রুপ) শিক্ষার্থী ৩.৫০ বা তার(৩.৫০’র) বেশী সিজিপিএ অর্জন করতে পেরেছে। সম্মান পরীক্ষায় অনুষদে প্রথম হওয়া ছাত্র (মোস্তাকিম খান) সহ মোট ১১ জন প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্ত এবং অন্যান্য অনেক শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্খিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
আবেদনপত্রে আরো বলা , “শুধুমাত্র সভাপতি মহোদয়ের ঘনিষ্ঠ ৩ জন ছাত্র-ছাত্রী মো: মাহমুদুল হাসান (অনার্সে ২১তম), মো: মোকারম হোসেন (অনার্সে ৫ম) এবং শারমিন আক্তার জ্যোতি (অনার্সে ৬ষ্ঠ) ৩.৫০ বা তার বেশি সিজিপিএ অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। এমনকি, এই ফল অনুসারেও যে (মো: মাহমুদুল হাসান) প্রথম স্থান অধিকার করেছে অনার্সে তার সিজিপিএ ৩.৩০ (২১তম) ছিল।”
এমতাবস্তায় বিভাগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী নৈতিক স্খলনকে দায়ী করে শিক্ষার্থীরা অভিযোগগুলো বিবেচনায় নিয়ে সকল পরীক্ষার উত্তরপত্র ও থিসিসের পুনঃমূল্যায়ন এবং ফলাফল পরিবর্তন করে নতুন ফল ঘোষণা দাবি করেন। তাছাড়া পরীক্ষা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তির দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়ম অনুসরণ করেই পরীক্ষা নেয়া ও ফল প্রকাশ করা হয়। এর বাহিরে কিছু হয় না। এখানে পক্ষপাতিত্বের কিছু নেই। বিভাগের সভাপতির যতটুকু দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন ততটুকুই করি।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের ভালো কিছুর জন্যই আমাদের কঠোর হতে হয়। এটাকে ভয়ভীতি হিসেবে নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। শিক্ষার্থীরা যেসকল অভিযোগ দিয়েছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিবে এতে আমার আপত্তি নেই।
Development by: webnewsdesign.com