রাজশাহী সিটি কর্পোরেশরে ১০৮০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন

শনিবার, ২৬ জুন ২০২১ | ৫:৩৭ অপরাহ্ণ

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশরে ১০৮০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন
apps

আয় ও ব্যয় সমপরিমাণ ধরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ১০৮০ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩৬ টাকা ১৬ পঁয়সার প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগর ভবনের সিটি হলরুমে আয়োজিত জরুরী সাধারণ সভায় (বাজেট সভা) এই বাজেট অনুমোদন করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। সভায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও অনুমোদিত হয়। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩ হাজার ৩২৯ টাকা ৯২ পঁয়সা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৫৬১ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৭ টাকা ৯৬ পঁয়সা।

সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় চার নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ এবং মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।

সভায় রাসিক মেয়র বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করি। এরপর থেকে আমি ও আমার পরিষদ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং রাজশাহীকে আধুনিক, উন্নত, বাসযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও মডেল মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করি। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় ২৯৩১ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেন। এছাড়া তিনি রাজশাহীর উন্নয়নে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এজন্য রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

মেয়র বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে আমরা সর্বদা মানুষের পাশে আছি। ২০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদেরকে খাদ্য ও ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। রামেক হাসপাতালকে ২টি অত্যাধুনিক ভেন্টিলেটর উইথ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা প্রদান করা হয়েছে। ১২টি কেন্দ্রে ফ্রি র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। রাজশাহী সদর হাসপাতাল চালুর প্রচেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণ ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

প্রথম ঢেউয়ে সরকারিভাবে প্রাপ্ত ১৫৯৪.৮৫ মে. টন চাল ১০ কেজি করে এক লক্ষ ঊনষাট হাজার চারশত পঁচাশি জন মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি। সরকারিভাবে প্রাপ্ত ৫৭ লক্ষ টাকা ও ২৯০০ প্যাকেট শিশু খাদ্য বিতরণ করেছি।ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩৩৮.৮৩২ মে. টন চাল, ৬১.০৮৪ মে.টন ডাল, ৬৪.৩৪৩ মে. টন আলু, ১৫.০০৮ মে.টন আটা সহ তেল, লবন, সবজি, পোলাও চাল, সেমাই, চিনি প্রদান করেছি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ‘তে সরকারিভাবে প্রাপ্ত ৮৫.৫৫ মে.টন চাল প্রায় ৮ হাজার ৫শ ৫৫ জন মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। শহীদ কামারুজ্জামান ও জাহানারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০ হাজার পরিবারকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ১৮টি পেশাজীবী সংগঠনের ৪৬১৫ জনকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেছি। রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমেও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এভাবেই সব সময় মানুষের পাশে থেকে করোনা মোকাবেলায় আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় ৯টি অগ্রাধিকার কর্মকৌশল ঠিক করেছি। সেগুলো হচ্ছে, পরিকল্পিত নগর অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে রুট পর্যায়ে নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন। উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সবুজায়ন ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ/ উন্নয়ন এর মাধ্যমে নগরীর পরিবেশ উন্নয়ন। অপ্রচালিত আয়ের খাত সন্ধানের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি। নগর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ।

রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের মাধ্যমে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি। কর্ম সম্পাদনে গতিশীলতা আনয়ন ও সেবার মান বৃদ্ধি। দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। আর্থিক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। উন্নত চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করার নিমিত্তে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান/ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা

মেয়র আরো বলেন, রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর যখন রাজশাহীকে বদলে দিতে কর্মযজ্ঞ শুরু করবো, ঠিক সেই মুহুর্তে রাজশাহীতেও করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়, স্থবির হয়ে যায় কার্যক্রম। তবে বর্তমানে করোনা মহামারির মধ্যেই প্রকল্পটির আওতায় সড়ক, ড্রেনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধিসহ নানাবিধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মহানগরীর উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে।

ইতোমধ্যে আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় হতে বুধপাড়া পূর্ব-পশ্চিমমুখি ৬.৭৯৩ কিলোমিটার ৪ লেন সংযোগ সড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক ও ফ্লাইওভারটি গত ১৩ মার্চ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি শুভ উদ্বোধন করেন। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত চার দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কটি ৩০ ফুট থেকে ৮০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কটি দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি সড়কবাতিতে আলোকায়ন করা হয়েছে।

উপশহর মোড় হতে সোনাদিঘী মোড় এবং মালোপাড়া মোড় হতে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ওয়ার্ড রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণসহ ৯টি প্রাইমারি নর্দমার পাশে সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক সংলগ্ন পবা উপজেলাধীন হারুপুর মৌজায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ‘গৃহায়ন পদ্মা’ এবং ছোটবনগ্রামে ৬টি আধুনিক আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হবে। উপশহরে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

চলমান ও নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে মেয়র বলেন, করোনকালেও মহানগরীর উন্নয়ন থেমে নেই। মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির আওতায় ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন রাস্তা এবং নর্দমা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ নতুন বিলসিমলা বন্ধগেট রেল ক্রসিং হতে সিটি হাট পর্যন্ত, ভদ্রা রেল ক্রসিং হতে নওদাপাড়া নতুন বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এবং তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক, সড়ক বিভক্তিকরণ ও ফুটপাথ নির্মাণ কাজে ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

সিএন্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। যানজট নিরসনে ভদ্রা, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্ত্বর, বর্ণালী, নতুন বিলসিমলা, বহরমপুর, রাজশাহী কোর্ট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং-এ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণে নক্সা প্রণয়ন কাজে পরামর্শক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। গোরস্থানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন, ৪টি কাঁচা বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয় সমূহের উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, গণশোচাগার নির্মাণ, ফুটওভার ব্রীজ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কে আন্তর্জাতিক মানের একটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, ৪টি ওয়ার্ড কার্যালয়-কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ কাজে নক্সা প্রণয়নাধীন পর্যায়ে রয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদ জুন, ২০২৪ এর মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মহানগরীকে নতুন রূপে দেখা যাবে।

১৬৪ কোটি ১৯ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে আলুপট্টি মোড় হতে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত ২.৫ কিলোমিটার সড়কটি ৪লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ওয়ার্ডসমূহে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। সিটি বাইপাস রাস্তা ৪ লেনে উন্নীতকরণ ও উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। উক্ত সড়কে দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর স্মরণি সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়াও নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনে নর্দমা নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। ৪৯ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও নর্দমা সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প চলমান।

সিটি মেয়র জানান, ৫টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৪৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এঁর সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প এবং ১১৫৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর প্রাকৃতি জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটির সরকারের অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৯৬৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন’ এবং ৭১১ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল সায়েন্স সিটি ও সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প প্রণায়নাধীন।

মেয়র বলেন, পরিবেশের উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম চলমান আছে। নগরীর প্রধান সড়ক বিভাজক, সড়ক দ্বীপে এবং ফুটপাথে লাগানো হয়েছে সৌন্দর্য্যবর্ধক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সবুজ হয়েছে প্রায় ৩০ কি.মি. রাস্তার সড়ক বিভাজন ও চত্বর। বিভিন্ন মোড় ও চত্বর পরিকল্পিতভাবে ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। নানা ফুল পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ছে। নগরের চারদিকে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং পদ্মা নদীর চরে সবুজ বনায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরে আরো ৫০ হাজারের অধিক গাছের চারা রোপন করা হবে। নতুন সড়কের আইল্যান্ড ও সড়কের পাশে ফুলের গাছ রোপণ করে সৌন্দর্য্যবর্ধণ করা হবে। নওদাপাড়া শিশু পার্কের সামনে ৪ বিঘা জায়গার উপরে রাসিকের নিজস্ব নার্সারী গড়ে তোলা হয়েছে।

পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়ে তুলতে প্রথম মেয়াদে ১ জুলাই ২০০৯ সালে রাত্রীকালীন বর্জ্য আবর্জনা অপসারণ কার্যক্রম চালু করেছিলাম। ২য় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রামেক হাসপাতাল এবং সকল ক্লিনিকের আউট হাউজ মেডিকেল বর্জ্য পরিবেশসম্মত ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনায় প্ল্যান্ট স্থাপন করে কর্যক্রম চলমান আছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে ৫টি আধুনিক এসটিএস নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং আরো ৬টি এসটিএস নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। ফগার মেশিনে কীটনাশক স্প্রে ও লার্ভিসাইড ব্যবহারের কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে আছে।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য মহানগরী নয়, একটি কর্মঞ্চল মহানগরী গড়তে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে, বিসিক শিল্পনগরী-২, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও চামড়া শিল্পপার্ক। এই তিনটি শিল্পাঞ্চলে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিসিক শিল্পনগরী-২ এর ভূমি উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে লক্ষাধিক ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির ব্যাপারে মেয়র বলেন, পিপিপি এর আওতায় নির্মাণধীন সিটি সেন্টার, স্বপ্নচুড়া প্লাজা, দারুচিনি প্লাজা, বৈশাখী মার্কেটসহ অন্যান্য বহুতল ভবন যত দ্রুত সম্ভব চালুর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অপ্রচলিত খাতে আয় বৃদ্ধি ও প্রচলিত আয়ের খাতসমূহ তথ্য প্রযুক্তির অধিক ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের আয়তন প্রায় তিনগুন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনকে চারটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। অনলাইনে সেবার প্রাপ্তির জন্য স্মার্ট রাজশাহী এ্যাপস চালু করা হয়েছে।

এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, আলোকায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিকেএসপি প্রতিষ্ঠাসহ ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা, লালনশাহ পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। মহানগরীর উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও সুসম্পর্ক বজায় রাখা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের রাজশাহীতে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী করা হচ্ছে।
সভায় রাসিক মেয়র বলেন, অদৃশ্য ভাইরাসকে মোকাবেলা করে আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। করোনা সংকটের এ মূহুর্তে জাতীয় বাজেটের আলোকে রাজশাহী মহানগরীর উন্নয়ন ও নাগরিকসেবা বৃদ্ধিতে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সেই লক্ষ্যে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে প্রয়োজন সকল নাগরিকের পরিপূর্ণ আন্তরিকতা ও সহযোগিতা। কর্পোরেশনের যেমন দায়িত্ব রয়েছে নগরবাসীর নাগরিক স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা, তেমনিভাবে নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে কর্পোরেশনকে তার কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা। তাই আমি নাগরিক দায়িত্ব পালন, নিয়মিত কর পরিশোধসহ সিটি কর্পোরেশনের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মহানগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

সভামঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসাম বাবু, প্যানেল মেয়র-২ ও ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন, সচিব মোঃ মশিউর রহমান। সভায় রাসিকের কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

Development by: webnewsdesign.com