রাজশাহী জেরার দুর্গাপুরের আমগাছী একটি বাজার। এই বাজারটি বসে সপ্তাহে দুইদিন। খেজুর গুড়ের জন্য এ হাটটটি ব্যবসায়ীদের বাছে অনেকটা পরিচিত। শীতের এই মৌসুমে আশে-পাশের গ্রাম থেকে প্রচুর পরিমাণে গুড় এসে জড়ো হয় এ বাজারে। গতকাল সোমবারও এই হাটে বিপুল পরিমাণ গুড় এসে জড়ো হয়। সকাল থেকেই সেই গুড় কেনা-বেচা শুরু হয়। সবমিলিয়ে অন্তত ২০-২৫ লাখ টাকার গুড় কেনা-বেচা হয়, জানিয়েছেন হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা।
আমগাছী হাটের ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, ‘হাটে এখন আর কোনো পাটালি গুড়ই শতভাগ খাটি পাওয়া যায় না। পাটালি সব গুড়েই চিনি মেশানো থাকে। কোনটাতে কম আর বেশি। একমাত্র ছোলা বা লালি গুড় ভেজালমুক্ত। তবে ছোলা গুড় হাটে কম সবমিলিয়ে এক-দুই মণ ছোলা গুড়ও আসে না হয়তো।’
এ বাজারে গুড় বিক্রি করতে আসা আবু বাক্কার বলেন, ‘এখন ৫ কেজি গুড়ে অন্তত ১০ কেজি চিনি মেশানো হয়। তাতে ৫ গুড় হয়ে যাচ্ছে ১৫ কেজি। ফলে প্রতি কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা বেশি লাভ হচ্ছে। এক কেজি গুড় গতকাল এ বাজারে বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে। সেই হিসেবে একজান বিক্রেতা ৬ কেজি গুড় বিক্রি করলেও তাতে মেশানো হয়েছে অন্তত ৪ কেজি চিনি। বাজারে প্রতিকেজি চিনি পাওয়া যাচ্ছে ৮২-৮৩ টাকা দরে। কিন্তু সেটি গুড় করা হলে বিক্রি হচ্ছে অন্তত ১২০ টাকা দামে। তাই খেজুরের পাটালি গুড় মানেই চিনির গুড় নামে পরিচিত হয়েছে এখন।
ওই বাজারের ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, ‘এখন আর রাজশাহীতে কোনো বাজারেই খাটি খেজুর গুড় পাওয়া যায় না। সব বাজারেই চিনি মিশ্রিত গুড় বিক্রি হয়। তার পরেও খেজুর গুড়ের চাহিদা শীতের সময় বেশি বলে এ গুড়ই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তবে আগের মতো পাটালি গুড় আর বেশি দিন ক্রেতারা ঘরে রাখতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন। তাতে গুড়ে ছাতা (স্যাঁওলা) ধরে যাচ্ছে। খাটি গুড় মাসের পর মাস রাখলেও সহজে ছাতা ধরে না।’
আজ মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকার গুড় ব্যবসায়ী নাসিমুল ইসলাম বলেন, ‘গুড় তো বিক্রি করায় দায় হয়ে গেছে। বাজার থেকে এখন গুড় কিনলেই তাতে চিনি মেশানো থাকছে। তবে একেবারে গ্রাম থেকে ওয়ার্ডার করে খাটি গুড় আমরা কিছু সংগ্রহ করি। যেসব ক্রেতা ভালো মাণের গুড় খুঁজেন তাদের সেই গুড় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা কম দামের গুড় খুঁজেন তাদের বাজার থেকে কেনা গুড় দিচ্ছি। আবার কিনে নিয়ে গিয়ে দেখা যাচ্ছে এসে অভিযোগ করছে গুড়ে সাদা সাদা ছাতা পড়েছে। এটি হবেই।’
রাজশাহী নগরীর সালবাগান এলাকার সাদুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি রাজশাহীর সাহেব বাজার থেকে দুই কেজি খেজুর গুড় কিনে আনেন চার-৫দিন আগে। মেয়ে জামাই আসবেন তাঁদের পিঠা পুলি খাওয়াবেন। কিন্তু দুদিন পরে সেই গুড় বের করে দেখেন তাতে স্যাঁওলা জমে গেছে ওপরের অংশে।’ অগত্য সেই স্যাঁওলা তুলেই নিচের অংশ দিয়ে পিঠা বানিয়ে খান তাঁরা। কিন্তু আগের মতো গুড়ের পিঠার প্রকৃত স্বাদ ছিল না বলেও জানান তিনি।
ভেজাল গুড়ের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হবে কিনা এবিষয়ে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন আবু সাইদ বলেন, ‘শুধু চিনি মেশালো স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে এর সঙ্গে যদিও অন্য কোনো মেডিসিন মেশানো হয়, তাহলে পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের রোগ-বালাই হতে পারে।’
Development by: webnewsdesign.com