স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনার ঝূঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে গ্রিণ জোনে চিহ্নিত করা হলেও রাজশাহীতে মাক্সসহ স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা কাটেনি এখনো। ফলে যাত্রীবাহী বাসে পথে ঘাটে, বাস ও ট্রেনে সর্বত্রই উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। যদিও করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই নির্দেশনায় রয়েছে গণপরিবহণে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার। কিন্তু রাজশাহীর আন্তঃপরিবহণ ও দূরপাল্লার অধিকাংশ পরিবহণসহ ট্রেনেও মাস্ক ব্যবহারে যাত্রীদের উদাসীনতা দেখা গেছে। এমনকি বাসে হাঁফ যাত্রী পরিবহণের সিদ্ধান্ত হলেও সেটিও মানা হচ্ছে না। যাত্রীদের মুখের মাস্ক কারো পকেটে, কারো বা মুখে, কারো কারো থুতনিতে দেখা গেছে। নিয়ম মানতে বলারও কাউকে দেখা যায়নি। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে নগরীর শিরোইল, রেলগেট ও ভ্রদা মোড়ের বাসস্ট্যান্ড, বাস্ট্যান্ডে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। চলন্ত বাসগুলোতেও যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক পড়ায় উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। শুধু তাই নয়, অটো বা অটোরিক্সাগুলোর চালক থেকে শুরু করে অনেক যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। সেই সঙ্গ পথচারীদের একই অবস্থা।

ভদ্রা মোড়ে কয়েকজন যাত্রীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ওমিক্রনিয়ে সরকারে দেওয়া নতুন নির্দেশণার কথা শুনেছেনা তারা। তবে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে জানেন, কড়াকরি করা হলে এটা জেনে কাছে মাস্ক রাখছি। কিন্ত সব সময় পড়তে ভালোলাগেনা।
নগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে এক যাত্রী বুলবুল হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় যাবো। শ্যামলী ট্রাভেলসের টিকিট কেটেছি। নতুন করে ওমিক্রনের সংক্রমণের কারণে আমি চিন্তিত। সরকারি নির্দেশনা জারি করার আগে থেকেই মাস্ক পড়ছি। কিন্তু নির্দেশনা জারি করার পরেও বাসের অন্যযাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখছিনা।’
এদিকে আন্তঃপরিবহণ ও দূরপাল্লার পরিবহণে যাত্রীদের তেমন ভিড় ছিলো না। তবে বাসে আসন সংখ্যার চেয়ে যাত্রী সমান/অতিরিক্ত ছিল। প্রায় প্রতিটি আসনেই যাত্রী ছিল।

এ বিষয়ে একতা পরিবহনের ড্রাইভার মামুন বলেন, ‘আমাদের পরিবহন সরকারি নির্দেশনা মেনেই চলছে। এজন্য সে সকলযাত্রী আমরা উঠাচ্ছি না যাদের করোনার টিকা দেয়া নেই। তাছাড়া মাস্ক পরিধানএবং দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করছি। কিন্তু সব সিটেই যাত্রী তোলা হচ্ছে।’
এমপি সাফারি পরিবহনের টিকিট মাস্টার ডাবলু বলেন, ‘করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নতুন করে চিন্দার ভার তৈরি করেছে। এখন আবারও বাধ্যতামূলক ভাবেই মাস্ক পড়তে হবে। ভ্যাকসিনের টিকা সনদ নিয়ে নতুন বিড়ম্বনা তৈরি হচ্ছে। তবে সিট সংখ্যার বেশি কোনো যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না।’
অপরদিকে, রেলওয়ে স্টেশনে মাস্ক না পরেই যাত্রীসহ রেলওয়ে কর্মচারীদেরও ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। এবিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীদের উদ্যেশ্যে একটু পর পর বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। যাতে যাত্রীরা সকলেই মাস্ক পড়েন। টিকেট চেকিং এর জন্য টিকিট মাস্টার ছাড়া আর টিকিট কেনাযাত্রী ছাড়া ট্রেনে কোনো স্বজনকেও উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। প্লাটফর্মেও হাঁটতে দেওয়া হচ্ছে না।’

উল্লেখ্য, দেশে গত কয়েকদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। শুক্রবার শনাক্তের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে নতুন ধরন ওমিক্রন উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ১১ জানুয়ারি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখাসহ ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন, সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের করোনার টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখার কথা বলা হয়েছে।