রাজশাহীতে ৩৬ জাতের টমেটো উৎপাদন হয়। এরমধ্যে তিন জাতের আবাদ বেশি। জেলার তিনভাগের দুই ভাগের বেশি টমেটো উৎপাদন হয় গোদাগাড়ীতে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ফলে টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ২শো কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।
এবছর জেলায় ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। প্রতিহেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২২ মেট্রিকটন। গতবছর ৩ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছিল পুরো জেলায়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু অসাধু চাষি ও ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক টমেটো গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারজাত করেন। এটা নিরুৎসাহিত হলে টমোটে উৎপাদনের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে- এবছর জেলার মতিহার থানা এলাকায় টমেটো চাষ হয়েছে ১৪ হেক্টর জমিতে, বোয়ালিয়া ৫ হেক্টর, পবায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া তানোরে ২৫ হেক্টর, মোহনপুরে ১৫ হেক্টর, বাগমারায় ২২৫ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৯০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৬০ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, চারঘাটে ২ হেক্টর ও বাঘায় ৪০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়।
সেই হিসেবে রাজশাহী জেলায় বরাবরের মতোই টমেটো চাষে প্রথমে রয়েছে গোদাগাড়ী। এবছর দ্বিতীয়তে রয়েছে পবা উপজেলা। আর দুই হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ নিয়ে উপজেলারগুলো মধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছে চারঘাট।
গোদাগাড়ীর হুজরাপুরে টমেটো চাষী মঞ্জুর রহমান জানান, ‘তিনি ‘বিপুল প্লাস’ জাতের টমেটোর চারা জমিতে বপন করেছিলেন। গাছে টমেটো এসেছে। আর কিছুদিন পর বিক্রি করা যাবে।’
কৃষি অফিস বলছে, টমেটোর বিভিন্ন জাতের মধ্যে গোদাগাড়ীতে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ‘বিপুল প্লাস’। এবছর ৮শো হেক্টর জমিতে এই জাতের টমেটোর চাষ হয়েছে। ‘ভিএল ৬৮২’ জাতের টমেটো চাষ হয়েছে ৬৬০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ‘ইউএল ৭৪২’ জাতের টমেটো চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- গোদাগাড়ীতে আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরে টমেটো চাষ শুরু হয়। এটা মূলত বর্ষাকালীন টমেটো। এই উপজেলায় প্রায় ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয়। যার সবগুলো হাইব্রিড। অন্য যেকোনো মাঠ ফসলের তুলনায় টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। কম করে প্রতিমণ ১ হাজার টাকা করে হলেও ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। যা ধান কিংবা অন্য ফসল চাষে সম্ভব নয়।
চাষী নাশিদুর আলম জানান, ‘টমেটো চাষের প্রথম দিকে ভালোই দাম পাওয়া যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পুরো জমির টমেটো কিনে নেয়। দুই-তিন মাসের মধ্যে টমেটো নিয়ে জমি ছেড়ে দেয়। তবে বেশির ভাগ চাষী নিজেরাই টমেটো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে।’
তিনি আরো জানান, ‘টমেটো ব্যবসায়ীরা মূলত বাইরের। তারা এখানে এসে থাকেন। এর পরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টমেটো কিনে ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যায়। সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও থাকে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা জানান, ‘গতবছর ১৫০ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পরিবহন ও প্রমিক মিলে আরো ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। টমেটো কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে সবমিলে ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতিবছর।’
তিনি আরো জানান, টমেটো উৎপাদন মৌসুম সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত (চার মাস) ধরা হয়। এই অঞ্চলে টমেটো দু’বারে চাষ হয়। এর মধ্যে একটি রবির আগে উঠে। এই টমেটোর বেশি দাম পান চাষীরা। যা বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। বরি মৌসুমের টমেটো বিক্রি হয় ৫০ থেকে সর্বনিম্ন ৫ থেকে ১০ টাকায়। এ পাঁচ থেকে ১০ টাকা মৌসুমের শেষ সময়ে দাম।’
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল জানান, ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয় রাজশাহীতে। এক কথায় টমেটো অর্থকরি ফসল। জেলায় সবচেয়ে বেশি গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষ হয়। আগাম উঠায় চাষিরা বাজারে ভালো দাম পান। চাহিদা বাড়ায় প্রতি বছরই চাষের পরিধি বাড়ছে। আধুনিক চাষের কলাকৌশল নিয়ে সবসময় মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পাশে আছেন।
Development by: webnewsdesign.com