যৌতুকের জন্য স্ত্রী নির্যাতন, সাময়িক বরখাস্ত রাজশাহীর এএসপি

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১২:৩৮ অপরাহ্ণ

যৌতুকের জন্য স্ত্রী নির্যাতন, সাময়িক বরখাস্ত রাজশাহীর এএসপি
যৌতুকের জন্য স্ত্রী নির্যাতন, সাময়িক বরখাস্ত রাজশাহীর এএসপি
apps

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলার আসামি রাজশাহী রেঞ্জের এএসপি রুবেল হককে সাময়িকভাবে বরখান্ত করা হয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে তাঁকে বরখান্তের আদেশ জারি করা হলেও তা গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীতে এসে পৌঁছেছে।

তবে এ খবর জানার পর স্ত্রী নির্যাতন ও বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে রুবেল হককে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কথা বলব না। এখন প্রশিক্ষণে আছি।’

বরখাস্ত হওয়ার পরও রুবেল প্রশিক্ষণে থাকার বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন বলেন, ‘রুবেল কী বলেছেন সেটা জানি না। তাঁর বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনটি গত সোমবার পেয়েছি। সরকার যখন বরখাস্তের অর্ডার জারি করে, তখন থেকেই এটা কার্যকর।’

রুবেলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চকযাদু গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে সায়মা সুলতানার সঙ্গে ২০২১ সালের ৩১ মে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের সময় নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন রুবেল। বিয়ের পর স্ত্রীকে সেখানে নিয়ে যান। পরে বদলি হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আসেন। তখন যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই সময় সায়মা থানায় গেলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি।

এরপর নির্যাতনের অভিযোগ করে ৯৯৯-এ ফোন করেন সায়মা। বাড়িতে পুলিশ এলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে সায়মা আদালতে মামলা করেন। মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রূপন কুমার দাশ ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। রুবেল জামিনে আছেন।

মামলার বাদী সায়মা বলেন, ‘বিয়ের আগেই খরচ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন রুবেলের বাবা। ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রমাণ রেখে টাকা দেওয়ায় ভীষণ চটেছিল রুবেলের পরিবার। পরে বিয়ের দিন আরও ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়। বিয়ের উপহার ও অন্যান্য খাতে খরচ করানো হয় আরও ৯ লাখ টাকা। এরপরও রুবেলের দাবি কমেনি।’

‘বিয়ের পর একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। দিতে না পারায় আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হতো। নির্যাতন সইতে না পেরে আদালতে মামলা করি।’

সায়মা বলেন, ‘এখন আলাদা থাকি, তবে ডিভোর্স হয়নি। গত বছরের ২৯ আগস্ট স্বামীর রিুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ করি। আদালতে মামলা করি ৬ সেপ্টেম্বর। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর রুবেলও তাঁর বাবাকে দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা করান। এতে আমিসহ আমার পরিবারের পাঁচজনের বিরুদ্ধেই উল্টো ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় সমন জারি করেন আদালত। ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হলে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২ অক্টোবর পর্যন্ত কারাভোগ করি। পরে জামিনে মুক্তি পাই।’

মামলা তুলে নিতে রুবেলের পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। সায়মা বলেন, ‘রুবেলের নির্যাতনের শিকার হয়ে গত বছরের ৯ ও ১০ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি ছিলাম। ১১ আগস্ট ছিল শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা। তাই অসুস্থ শরীর নিয়েও আমি নওগাঁ যাই। তারপর ১২ আগস্ট গ্রামের বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু রুবেলের বাবা জারজিস আলী যে মামলা করেছেন, এতে ঘটনার তারিখ দেখানো হয়েছে ১২ আগস্ট। এটি পুরোপুরি মিথ্যা। শুধু রুবেলের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে বাধ্য করতেই এই পাল্টা মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’

Development by: webnewsdesign.com