মরক্কোর আল কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ধারণা করা হয়, ৮৫৯ সালে এই বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আবাসিক ছিল না। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক দিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের প্রথম হিসেবে ধরা হয়, সেটি হলো নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়।
নালন্দা একটি সংস্কৃত শব্দ। নালাম শব্দের অর্থ পদ্ম। এই পদ্মকে জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। আর দাঁ শব্দের অর্থ দেয়া। তাই নালন্দা শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ‘জ্ঞান দেয়া’। নালন্দার সঙ্গে সম্পর্কিত রয়েছে একটি ভিন্ন ধারণাও। কথিত আছে, ঐশ্বরিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত সাপ ‘নাগা’ থেকেও নালন্দা শব্দের আবির্ভাব হতে পারে।পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। সেখানেই অবস্থান করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করত আর বিদ্যার্থীরা জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করত।
কথিত আছে, মৌর্য সম্রাট অশোক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে নালন্দায় প্রথম বৌদ্ধ উপাসনালয় গড়ে তোলেন, যা পরে বৌদ্ধ গবেষণার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। সেই সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এত জনপ্রিয় ছিলো যে, বিদ্যা অর্জন করতে চীন, তিব্বত, গ্রিস, কোরিয়া, তুরস্ক ও পার্সিয়া থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসত।সম্রাট হর্ষবর্ধনের শাসনকালে আশপাশের গ্রামসহ মোট ২০০টি গ্রাম নিয়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছিল। ১৪ হেক্টর জমি নিয়ে লাল ইটের ভবনের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়টি আজও সে সময়ের উচ্চতর সভ্যতা ও সংস্কৃতির উদাহরণ। মূল ভবনে রয়েছে আলাদাভাবে ৮টি কম্পাউন্ড। রয়েছে ১০টি মন্দির, ধ্যানকক্ষ, পাঠদান কক্ষ। স্থাপত্যকে আরও সুন্দর করতে প্রতিটি ভবনের সামনেই ছিল জলাধার আর চিত্তাকর্ষক উদ্যান।
নালন্দার বিখ্যাত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে জীবক, পাণিনি, কুটিলা, বিষ্ণু শর্মার মতো জনপ্রিয় শিক্ষকের নাম। এই প্রতিষ্ঠানটি বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা ও গবেষণার জন্য তৈরি হলেও সেখানে ধনুর্বিদ্যা, রাজ্য শাসনবিদ্যা,সমরবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, হিন্দুদর্শন, বেদ, ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্ব, চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ ৬৮টি বিষয় পড়ানো হতো।অনেকেই এ বিদ্যাপীঠকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। একবার নয় বরং তিনবার। প্রথমে এই বিদ্যাপীঠকে ধ্বংস করা হয় মিহিরাকুলার নেতৃত্বে। এরপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ করে বাংলার শাসক শশাঙ্ক। ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে তৃতীয়বারের মতো আক্রমণ করে তুর্কি যোদ্ধা বখতিয়ার খিলজি। যে কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় মাটির অতলে তলিয়ে যায়।
২০০৬ সালে চীন, জাপান ও সিঙ্গাপুরের সহায়তায় মাটিচাপা পড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। উদ্ধারকাজের পর যে বিষয়টি সবার নজরে আসে সেটি হলো, প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠে ১০ হাজার শিক্ষার্থী ও ২ হাজার শিক্ষকের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা ছিল। সবশেষ ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আবারও চালু করা হয়।
সূত্র: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
Development by: webnewsdesign.com