ময়মনসিংহে যৌতুক ও পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে হত্যা, পলাতক স্বামী

শনিবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২২ | ১:৪৫ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহে যৌতুক ও পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে হত্যা, পলাতক স্বামী
apps

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়া ও যৌতুক না দেয়ায় গৃহবধূ রোকসানা আক্তার সাদিয়াকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ করেছে স্বজনরা। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ভোর রাতে উপজেলার পাগলা থানার গৈয়ারপাড় গ্রামে। জানা গেছে, উপজেলার মাখল শেখ ভিটা গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে রোকসানা আক্তার সাদিয়ার (২২) সঙ্গে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী গৈয়ারপাড় গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে রাসেল মিয়ার (৩৩)। ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। এই দম্পত্তির সংসারে দেড় বছর বয়সী সানিল ও ছয় মাস বয়সী সাওয়াদ নামে দুই পুত্র সন্তান আছে। বিয়ের পরপরই সাদিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নিযাতন করে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা, আসসাবপত্রসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার যৌতুক আদায় করে রাসেল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। আরও চার লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে রাসেল মিয়া ও তার পরিবার। চাহিদামতো যৌতুক না পেয়ে গত ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ১৮ তারিখে সাদিয়াকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।

সালিশ বৈঠক করে আর মারধর করবে না, যৌতুক দাবি করবে না এই শর্তে সাদিয়াকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। সম্প্রতি ৪ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য সাদিয়ার উপর আবার চড়াও হয় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গত দুই মাস আগে সাদিয়ার পিতা মোফাজ্জল হোসেন মারা যান। সাদিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আর যৌতুক দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয়। এরইমধ্যে একই গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে রাসেল মিয়া। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই স্ত্রী সাদিয়াকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো তার স্বামী। একপর্যায়ে গতকাল ভোর রাতে সাদিয়াকে তার স্বামী রাসেল মিয়া ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন বেধড়ক মারধর করে ও গলাটিপে ধরলে সে মারা যায়। সাদিয়াকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। সাদিয়ার লাশ বাড়িতে এনে তার স্বামী ও স্বামীর ভাইয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সাদিয়ার মা আয়মননেছা (৫০) অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, ১০ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছি। আরও ৪ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে তার স্বামী রাসেল সব সময় জানোয়ারের মতো মারধর করতো। সাদিয়ার ভাই শাখাওয়াত (২৫) জানায়, ভোর বেলায় আমাদের বাড়িতে খবর পাঠানো হয় সাদিয়া অসুস্থ। খবর পেয়ে আমরা সাদিয়ার শ্বশুরবাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পর বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে একটি এম্বুলেন্সে সাদিয়ার লাশ ফেলে রেখে তার স্বামী রাসেল মিয়া পালিয়ে যায়। পাগলা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র রায় জানায়, সুরতহাল রিপোট অনুযায়ী লাশের গলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

Development by: webnewsdesign.com