মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২নং গিয়াসনগর ইউনিয়নের আকবরপুর পুরাতন জামে মসজিদের নামে ব্যাংকে জমানো টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আবুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে আদালত।
গত মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশ ব্যাুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এর দেয়া এক প্রতিবেদনের আলোকে মৌলভীবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১নং আমলী আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান, মামলার ১নং আসামী আবূল হোসেনের বিরুদ্ধে আকবরপুর মসজিদের তিনলক্ষ সাতাত্তর হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে দন্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় এবং অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে সমন জারি করেছেন।
পিবিআই প্রতিবেদনে মসজিদ নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় ওই মামলার বাদী এড. নিয়ামুল হক এর আইন পেশার সাইনবোর্ড ছিড়ে ফেলাসহ বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন ও মসজিদের নামে ব্যাংকে জমানো তিনলক্ষ সাতাত্তর হাজার টাকা উত্তোলন পূর্বক খরচের ভাউচার নেই মর্মে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বাদীর সি.আর ৭৯/২১ ইং মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর তারিখে মৌলভীবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১নং আমলী আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান এর আদালতে আসামী মো: আবুল হোসেন, মো: মিটুন মিয়া, মো: মোহন মিয়া, নজির মিয়া, রসিক মিয়া, ছমরু মিয়া, সিজিল মিয়া, মিজান আহমেদ, মো: মসুদ মিয়া, মো: আক্কাছ মিয়া, রাসেল মিয়া ও নুরুল ইসলামদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. ইজাজুল ইসলাম (তানভীর) এর মাধ্যমে জানা যায়, আকবরপুর পূরাতন জামে মসজিদ একটি ওয়াকফকৃত মসজিদ যার ই.সি নং-১৮০২৬। ওই মসজিদে বিগত ১৯৯৭ সালের ২০ মে তারিখে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসক দুইজন যুগ্ম মোতাওয়াল্লী নিয়োগ করেন, যার মধ্যে মামলার ১নং আসামী আবুল হোসেন এবং বাদীর দাদা এম এ গফুর। তিনি মারা যাওয়ায় তার আপন ভাই আব্দুল খালিক মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর স্থলাবিসিক্ত পরবর্তী যুগ্ম মোতাওয়াল্লী গোলাম আক্তাররের আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে। বিগত ১৯৯৭ সালের ২০ মে তারিখে ১নং বিবাদী আবুল হোসেন ওই মসজিদে যুগ্ম মোতাওয়াল্লী নিয়োগ পাবার পর থেকে অন্য মোতাওয়াল্লী এম এ গফুর গংদের বাদ দিয়ে ওয়াকফ প্রশাসকের আদেশ অমান্য করে সকল আসামীদের সঙ্গে নিয়ে এককভাবে মসজিদের সকল কাযক্রম পরিচালনা করে আসছেন এবং সমজিদে আদিপত্য বিস্তার করে মসজিদের নামের ২শত ৪০ শতক জমি আসামীদের নামে লীজ গ্রহণ করে আসছেন। এছাড়া বাদীর দাদা ওই মসজিদের নামে ৯৪ শতক জমি এবং গ্রামের মুসল্লিগনসহ মোট ২শত ৪০ শতক জমি মসজিদের নামে দান করলেও ১নং আসামী আবুল হোসেন দান সক্রান্ত কোন দলিল দেখাতে পারেন নি।
জানা যায়, মসজিদে দুইজন মোতাওয়াল্লী নিয়োগ থাকা সত্তেও আবুল হোসেন বে-আইনী উপায়ে এককভাবে মসজিদের সকল অডিট করেন। অডিট খরচের ভাউচার সংযুক্ত করার নির্দেশ প্রদান করলেও আবুল হোসেন তা পালন করেননি। এছাড়াও আবুল হোসেন মসজিদের নামে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিঃ মৌলভীবাজার শাখা থেকে তিনলক্ষ সাতাত্তর হাজার টাকা উত্তোলন করে ওই টাকা মসজিদের খাতে খরচের কোন হিসেব বা ভাউচার দেখাতে পারেন নাই বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, মামলার বাদী এড.নিয়ামুল হক বিগত ২০২০ সালের ১৯ জুন তারিখে ১নং বিবাদী আবুল হোসেনের নিকট মসজিদের আয় ব্যয়ের হিসাব চাইলে ১নং বিবাদী আবুল হোসেনের হুকুমে সকল বিবাদীগন পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাটিসোটা, দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ বাদীর ওপর অতর্কিত হামলা করে এবং বাদীর বাড়ীর পাশের আইনজীবী সম্বলিত সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলে।
এর পর বাদী আদালতে বিগত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে সি.আর ৭৯/২১ ইং মামলা দায়ের করলে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মৌলভীবাজারের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করে আসামী মো: আবুল হোসেন, মো: মিটুন মিয়া, মো: মোহন মিয়া, নজির মিয়া, রসিক মিয়া, ছমরু মিয়া, সিজিল মিয়া, মিজান আহমেদ, মো: মসুদ মিয়া, মো: আক্কাছ মিয়া, রাসেল মিয়া, নুরুল ইসলাম কর্তৃক আকবরপুর পুরাতন জামে মসজিদে আধিপত্য বিস্তার করে বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি ধামকি ও বাদীর সাইন বোর্ড ছিঁড়ে ফেলার এবং আবুল হোসেন কর্তৃক মসজিদের নামীয় আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লি: থাকা মসজিদের তিনলক্ষ সাতাত্তর হাজার টাকা উত্তোলন করে খরচের হিসেব না দেখানোর সত্যতার প্রতিবেদনও দাখিল করেছেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী এড. নিয়ামুল হক বলেন, আবুল হুসেন দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর যাবত মোতাওয়াল্লী হিসেবে অনেকটা স্বেচ্ছাচারীভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মসজিদটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মূলত তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা সচেতন মহল প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপর মামলা হামলাসহ নানাভাবে নির্যাতন করে আসছেন।
Development by: webnewsdesign.com