খুলনায় তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন দুই ঘাতক। ফুলতলায় তরুণী মুসলিমা খাতুনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় আসামি রিয়াজ খন্দকার ও সোহেল সরদার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গত রোববার সন্ধ্যায় মুসলিমা হত্যাকাণ্ডে নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় মূল আসামি যুগ্নিপাশা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারেফ খন্দকারের ছেলে রিয়াজ খন্দকার ও শিলন সরদারের ছেলে সোহেল সরদার। তাদের দুই জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক নয়ন বিশ্বাস। জবানবন্দি শেষে তাদের দুইজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াছ তালুকদার জানান, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ইমদাদের মেয়ে মুসলিমা। সে একটি জুট মিলের শ্রমিক। হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন আগে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ওই জুট মিলের গাড়িতে মিলের সামনে নামে। সে সময় রিয়াজ সিগারেটের দোকানে বসে ধুমপান করছিল।
মুসলিমাকে দেখে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে রিয়াজের। মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিতে থাকে সে। প্রথম দিকে রিয়াজের ফাঁদে পা দিতে রাজি হয়নি মুসলিমা। পরে রিয়াজ ও সোহেল দুজনে মিলে পরিকল্পনা করতে থাকে কীভাবে মেয়েটিকে রাজি করা যায়। এরপর সোহেলকে দিয়ে মুসলিমার নিকট ফোন দেয়া হয়। তখন বলা হয় দেখা না করলে রিয়াজ আত্মহত্যা করবে। ২৫শে জানুয়ারি রাতে রিয়াজের ফোন থেকে সোহেল মুসলিমাকে ফোন দেয়। ঘর থেকে বাইরে আসলে তাকে নিয়ে প্রথমে বেজেরডাঙ্গা বাজারে নেয়া হয়। সেখানে রিয়াজ তাকে বিয়ের আশ্বাস দেয়। এরমধ্যে রিয়াজ তার দুঃসম্পর্কের দুলাভাই ইউসুফকে ফোন দিয়ে একটি ঘর প্রস্তুত করতে বলে। ইউসুফ ফোন করে যুগ্নিপাশা গ্রামের মুনসুরকে ঘরের জন্য জানায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা ৩ জন মিলে মুনসুরের একটি কক্ষে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পরে সোহেলকে ঘর থেকে বের হতে বলে রিয়াজ। প্রথমে মুসলিমাকে ধর্ষণ করে রিয়াজ। পরে সোহেল ওই ঘরে ধর্ষণের জন্য গেলে চিৎকার করে সে। পরে ঘর থেকে বের হয়ে আসে সোহেল। ধর্ষণ শেষে রিয়াজকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কথা বলে মুসলিমা। বাইরে এসে তারা দু’জন আলোচনা করে ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হলে তাদের বিপদ আছে। তারা দুজনে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। রাত দেড়টার দিকে মুনসুরের বাড়ি থেকে বের হয় ওই ৩ জন। নির্জন রাস্তায় এসে মুসলিমার মুখ চেপে ধরে সোহেল। গায়ের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয় রিয়াজ। মৃত্যুর পরও দুজনে তাকে ধর্ষণ করে। লাশ যেন কেউ শনাক্ত না করতে পারে সেজন্য রিয়াজ বাড়ি থেকে ধারালো বটি এনে দেহ থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে। দেহের অংশটি উত্তরডিহির ধান ক্ষেতে আর মাথাটি নিহতের পরিধেয় কাপড় দিয়ে আবৃত করে ওই এলাকার নির্মাণাধীন বাড়ির টয়লেটের বালুর নিচে পুতে রাখে তারা।
মুসলিমার লাশ উদ্ধারের সময় রিয়াজ ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল, লক্ষ্য রাখছিল পুলিশের গতিবিধির ওপর। মুসলিমার ফোন নম্বরের ইতিবৃত্ত বের করে রিয়াজকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। কিন্তু এর আগে ফুলতলা থেকে পালিয়ে যায় আসামি রিয়াজ। তিনি পালিয়ে তার বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে। ২৯শে জানুয়ারি সকালে পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে সোহেলকে গ্রেপ্তার করে। আর শুক্রবার রাতে র্যাব রিয়াজের মোবাইল ট্রাকিং করে ফরিদপুরের কানাইপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে ধর্ষণের সহযোগিতার অভিযোগে পুলিশ মুনসুর খাঁ (৮০) এবং ইউসুফ আলী (৬৩)কে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। ভিকটিম মুসলিমার মাথার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শেষে দাফন করা হয়েছে এবং তার মোবাইল ফোন, কানের দুল ও চেইন উদ্ধার হয়েছে। এরআগে গত বুধবার (২৬শে জানুয়ারি) সকালে ফুলতলার উত্তরডিহি এলাকার ধান ক্ষেত থেকে মুসলিমার মস্তকবিহীন বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করা হয়। তখন তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে লাশের আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (২৭শে জানুয়ারি) দাফন করা হয়। শনিবার (২৯শে জানুয়ারি) বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ফুলতলার যুগ্নিপাশার নির্মাণাধীন ভবনের বাথরুম থেকে মুসলিমার মস্তকটি উদ্ধার করে র্যাব। নিহত মুসলিমার বোন আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ফুলতলা থানায় অজ্ঞাত ৫/৬ ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা (নং-১৩) দায়ের করেন। প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে মোবাইলে কল পেয়ে মুসলিমা রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে বের হলে পরে তাকে পাশবিক নির্যাতন ও হত্যা করা হয় বলে এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন।
Development by: webnewsdesign.com