মুক্তমত : পেঁয়াজ ডুবিয়ে নয় চুবিয়েই হোক রান্না

রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২০ | ২:৫৯ অপরাহ্ণ

মুক্তমত : পেঁয়াজ ডুবিয়ে নয় চুবিয়েই হোক রান্না
apps

‘ওয়েডিং সিজন’ নামে সপ্তম ঋতুর আবির্ভাবে শীত ঋতুর শীতলতা খানিক দূরে আছে। হাড়ে কামড় দেওয়া শীতের কারণে ঘরের মধ্যেও কান ঢাকা টুপি ও উলের মোজা ছাড়া গতি নেই। মোজা জোড়াকে আবার চুলার নিচে রেখে একটু গরম করে পরলে আরাম দ্বিগুণ।
‘সৌখিনের মরণ শীতে আর ভাতে’….. ওয়েডিং সিজনের গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম মেন্দি, হলদি, বিয়ে, ওয়ালিমায় উইন্টার কালেকশনের উলেন শাড়ি, পেটিকোট, ব্লাউজ না থাকায় বাধ্য হয়ে সামার কালেকশন পরে যেতে হয়।

সিলেটের অভিজাত দুই কনভেনশন সেন্টার আমানুল্লাহ ও কুশিয়ারা শহরের কোলাহল থেকে দূরে, ঠান্ডাও তাই একটু বেশি লাগে। এই দুই ভেন্যুতে রাত্রিকালীন বিয়ের দাওয়াতই বেশি থাকে।
ওয়েডিং ফটোগ্রাফারের চিত্রগ্রহণ আর সিনেমাটোগ্রাফির চোটে শীত বেচারা ভাঙা রকেট নিয়ে মঙ্গল গ্রহের পথে। তার উপর রয়েছে আই ফোনের লেটেস্ট ক্যামেরা ও কনভেনশন সেন্টারের ক্যামেরা বান্ধব চিপা চাপা।
অমলিন স্মৃতিকে ধরে রাখতে সব চিপায় একটা সুযোগ নিতে হয়। কিন্তু অভ্যাগতদের সবার একই বাসনা, তাই লাইনে না দাঁড়িয়ে উপায় নেই।

গত সপ্তাহের তীব্র শৈত্য প্রবাহের সময় বিবাহ-বৌভাতের অনুষ্ঠান ছিলো বেশি। পুত্রকন্যাদের ঘোর আপত্তির মুখে শাড়ির সাথে আমার মোজা পরা হয়নি। তাও মোজা জোড়া লুকিয়ে রাখি ব্যাগে, বেশি ঠেকায় কাজে লাগবে।
সেদিন বিয়ে খেয়ে কুশিয়ারা থেকে ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত প্রায়। মোজা জোড়া পায়ে চাপিয়ে গাড়িতে বসেছি কুর্ছি মুরগির মতো।
বড়সড় এক জটলার কারণে অনিচ্ছায় গাড়ি থামাতে হয়।। আমাদের অতিউৎসাহী ড্রাইভার মামার চেষ্টায় জটলার কারণ উদঘাটনে সময় লাগেনা।
ট্রাকে করে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি হেতু এই জটলা, ঘটনা তদন্তে এমন রিপোর্ট পেয়ে শীত ভুলে আমিও একটু নড়েচড়ে বসি।
টিসিবির পেঁয়াজ নিশ্চয়ই সস্তা হবে। আমার অনুরোধে ড্রাইভার মামা লাইনে দাঁড়িয়ে পাঁচ কেজি পেঁয়াজের ব্যাগ নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে হাজির। এক কেজির দামে পাঁচ কেজি, প্রশান্তিতে আমার শীত পালায়। সেই সাথে আরো পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কেনার দুর্দান্ত ইচ্ছাও দমন করতে পারি না।
সাথে থাকা বিভিন্ন বয়সী অভিভাবকরা নিজেদের প্রেস্টিজ ইস্যু অক্ষুন্ন রাখতে লাইনে দাঁড়ানো থেকে আমাকে বিরত রাখেন। করিৎকর্মা ড্রাইভার মামা অবশ্য আবারও লাইনে দাঁড়িয়ে আরো পাঁচ কেজি নিয়ে এসেছেন।

আছিয়াতো মহামূল্যবান দশ কেজি পেঁয়াজ এক সাথে দেখে আনন্দে আত্মহারা। অনেক দিন পর পেঁয়াজ চুবিয়ে নয়, ডুবিয়ে রান্না হবে ঘরে। বেচারি পেঁয়াজের দুঃখে চাকুরিতে ইস্তফা দিতে চেয়েছে কতবার। আমার অনুরোধে ঢেকি গিলে কোনমতে চাকুরিতে বহাল আছে।
বছরের শেষে সুসংবাদ হিসেবে পেঁয়াজের দাম নাগালে আসলো মনে হয়। এমন সুখানুভূতি বেশি দিন স্থায়ী হলো না। নতুন বছরের শুরুতে পেঁয়াজ নাকি আবার ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে কোথাও, কোথাও। ‘পেঁয়াজ ডুবিয়ে নয় চুবিয়েই রান্না হউক।’
পঁয়ত্রিশ টাকা কেজির পেঁয়াজ পাওয়ার আশায় শৈতপ্রবাহের মধ্যরাত্রিতে হিমুর মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার পরিকল্পনা মন্দ হবে না। কিন্তু শীতের কামড়ে আমার বড্ড ভয়। পরিকল্পনা বাতিল করতেই হলো।
ছায়া যুদ্ধ, ছায়া জাতিসংঘ, ছায়া মন্ত্রীসভার মতো পেঁয়াজের ছায়া রান্নার তত্ত্বটাও মন্দ হবে না।

Development by: webnewsdesign.com