মালয়েশিয়ায় মাথায় ভারী মেশিন পড়ে হৃদয় মণ্ডল নামের এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার দেশটির ক্লাং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গত ৩ জানুয়ারি মেগাটেক্স কোম্পানিতে বৈধ কাজের ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় যান হৃদয় মণ্ডল।
পরিবার জানিয়েছে, দেশটির সেলাংগরের বানতিং এলাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি পান তিনি। গত ২৮ জানুয়ারি কারখানায় কাজ করার সময় উপর থেকে ভারী মেশিন পড়ে গুরুতর আহত হন হৃদয়। পরে তাকে দেশটির ক্লাং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থেকে গত শুক্রবার তিনি মারা যান।
হৃদয় মণ্ডল সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মাত্র ১ মাস আগে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ করে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন তিনি। সেই ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, পরিবারে মাসের খরচ পাঠানোর আগেই দুর্ঘটনায় নিভে গেল তার প্রাণ।
হৃদয়ের বোন সালমা খাতুন বলেন, ‘আমরা ২ ভাই ১ বোন। আমাদের বড় ভাই বছর দশেক আগেই মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিল ছোট ভাই হৃদয়। অনেক আশায় ঋণ করে হৃদয়কে মালয়েশিয়ায় পাঠাই। এই ভাইটাকেও আমরা হারালাম।’
নিহতের মামা আনোয়ার হোসেন জানান, ৪ লাখ টাকা ঋণ করে মাত্র ১ মাস আগে তাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয় হৃদয়কে। এখন তার পরিবার কিভাবে চলবে ও ঋণ পরিশোধ করবে। এমনিতেই এই পরিবারের কোনো আয় রোজগার নেই।
জামতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন শেখ জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। এই পরিবারটি একেবারেই অসহায়। একজন নিঃস্ব হয়ে গেল। হৃদয়ের মা হুসনা খাতুন ধানের চাতালে কাজ করে কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের ভরণ-পোষণ করতেন। কিন্তু একে একে ২ ছেলেই তাকে ছেড়ে চলে গেল।
জামতৈল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারের জন্য যথাসাধ্য সহায়তা করব। ঋণ করে বিদেশে না যেতে উপদেশ আমরা দেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিদেশে যাওয়ার খরচ যোগাতে শেষ পর্যন্ত ঋণ করতেই হয়।’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের জেলা সমন্বয়কারী ফাহমিদা আহসান বলেন, ‘হৃদয়ের পরিবারের পাশে আমরা আছি। তার বিদেশযাত্রার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করব, যেনো পরিবার সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ পায়।’
এ দিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব এসএম জাহিদুর রহমান জানান, হাইকমিশন থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী হৃদয় হোসেন ক্ষতিপূরণসহ সব সুবিধা পাবেন।
Development by: webnewsdesign.com