ষড়ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ ও মাঘ এ দু’মাস শীতকাল। বাংলা ঋতুক্রমে পৌষ মাসে শুরু হয় শীতকাল। প্রকৃতির নিয়মে উত্তুরে হাওয়ায় ভর করে প্রতিবারের মতো এবারও এসেছে পৌষ। গ্রামগঞ্জে শীতবস্ত্রহীন মানুষগুলো বড় কষ্ট করে অতিবাহিত করে শীতার্ত প্রহর। শীত গরীবের কাছে অত্যন্ত দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার। ঠাণ্ডায় প্রাণহানিও শীতকালের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে শৈত্যপ্রবাহ। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে উত্তরাঞ্চলে শীত বরাবরই বেশি। হিমালয় পাদদেশীয় এই অঞ্চলে শীত দুর্যোগ হয়ে আবির্ভূত হয়। শীতের আগমন যেন গরিবের জন্য অভিশাপ। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় এসব মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। একটি কাঁথা কিংবা কম্বল দিয়ে শীত নিবারণ করা যেন তাদের কাছে অনেক কিছু। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরের ফুটপাতগুলোতে বেড়ে যাচ্ছে ঠিকানাবিহীন এসব অসহায় মানুষের সংখ্যা। শীতকাল আবার কারো কারো জন্য আনন্দেরও বিষয়।
শীত মানেই কুয়াশা-মোড়ানো ভোরে চুলোর পাশে বসে পিঠা খাওয়া। ঝরা পাতা জড়ো করে জ্বালিয়ে আগুন তাপানো। গল্পের আসরে বসে ধূমায়িত চা-কফির উষ্ণ স্বাদ। দীর্ঘ রাতে লেপ-কম্বলের ওম লাভের আনন্দ। কিন্তু যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের জন্য শীত মানে ভয়াবহ দুঃসংবাদ। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় কয়েক দিন ধরে তীব্র শীত পড়ছে। কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও শ্রমিকরা। গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে দুস্থ মানুষ। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক টুকরো শীতের কাপড় তাদের জন্য যেন শত আরাধনার ধন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রও নেই শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
সারাদেশে এবার জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। বলাবাহুল্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শীতের প্রাবল্যের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। কোথাও খুব শীত পড়ে কোথাও মাঝারি কোথাও আবার এই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সেই অর্থে শীতের দেখাই নেই। তবে এবার কিন্তু দেশ জুড়ে শীতের প্রকোপ একটু বেশি বলা যেতে পারে। এই ডিসেম্বরে উত্তরাঞ্চলে শীতের দাপটে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় স্থানগুলোতে কুয়াশার দাপটে বিমান, বাস, রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। শুধু সাধারণ মানুষের কথাই বা বলি কেন, দেশের মানুষের কাছে শীতকাল যতটা না আনন্দ নিয়ে আসে তার থেকে উত্তুরে হাওয়ায় থাকে দুঃখের নিঃশ্বাস। কেননা দেশের বড় একটা সংখ্যার মানুষই বসবাস করে দারিদ্র্য সীমার নিচে যারা বছরভর পরনের কাপড় যোগাড় করতে হিমশিম খায় তাদের কাছে শীতের পোশাক বাহুল্য বৈকি।
শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করার জন্য আমরা রকমারি শীত বস্ত্র পরিধান করি। কিন্তু আপনি যে পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছেন সেই পথে বসবাসরত মানুষগুলোর দিকে কি একটু খেয়াল করেছেন? হয়তো ব্যস্ততার মাঝে খেয়াল করা হয়ে উঠে না। চলার পথে একটু থেমে, খেয়াল করুন তাদের দিকে। দেখতে পাবেন যে, শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করার জন্য তাদের কেউ কেউ একটি চটের বস্তা গায়ে দিয়ে শুয়ে রাত কাটানোর প্রহর গুনছে, কেউ আবার একটি পলিথিন ব্যাগকে আশ্রয় করে শুয়ে আছে, আবার কেউ শীতের তীব্রতাকে মেনে নিয়েই কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ আবার শুকনো খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে উত্তপ্ত রবির আলোর জন্য, যা তাদের জন্য একটু উষ্ণতা বয়ে নিয়ে আসবে। সময় এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার। আসুন একবার অসহায় মানুষের কথা ভাবি এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। একটি কাপড় দিয়ে হলেও শীতার্তের পাশে দাঁড়ান। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করা মহৎ ও পুণ্যময় কাজ।
আমাদের দেশের খোদ রাজধানীতেই এরকম হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর কী অবস্থা একবার কল্পনা করুন। আপনাদের একটি মোটা কাপড় কোনো অসহায় দরিদ্র মানুষকে দিলে আপনার কিছুই কমে যাবে না। বরং আপনি তাকে দিবেন শীতে কষ্ট না পাওয়ার প্রতিশ্রুতি, বিনিময়ে ওই মানুষটি দেবে তার হৃদয়ের উষ্ণতা। আর সেই উপলব্ধি থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক দল শীত বস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ হাতে নেয়। প্রতিবছর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়। শীতার্ত এইসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু শুধুমাত্র এই সেচ্ছাসেবীদের পক্ষে একা তা করা সম্ভব নয়। তাই এই কার্যক্রমকে সফল করার জন্য সকলের আন্তরিকতা এবং একাগ্রতা শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
আমাদের যাদের পুরনো গরম কাপড়, সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, চাদর রয়েছে সেগুলো দিয়েও আমরা সহায়তা করতে পারি। এছাড়াও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রমকে আরও সহজ করে তুলবে এবং আপনার/আপনাদের আর্থিক সাহায্য অথবা প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই মানবিক কাজকে সফল করবে।
পরিশেষে বলতে চাই, বেশি নয়, শুধু আপনার এক দিনের হাত খরচটুকু বৃদ্ধ/বৃদ্ধা মা/বাবাকে উপহার দিন। সাময়িক হলেও অন্তত এক বিন্দু হাসিতো আমরা ফুটাতে পারব তাদের মুখে। আসুন, আমরা দেশের শীতার্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসি। একটি কাপড় দিয়ে একটি শিশু কিংবা একজন বৃদ্ধকে রক্ষা করি। সবার প্রতি আন্তরিক অনুরোধ এই শীতে দরিদ্র অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ করে মানবিক মূল্যবোধের পরিস্ফুটন ঘটাতে এগিয়ে আসুন। ভালোবাসুন শীতার্ত মানুষকে, তাদের প্রতি একটু সদয় হন। সম্পাদক দৈনিক আমাদের হরিপুর ও সভাপতি হরিপুর অনলাইন প্রেসক্লাব
Development by: webnewsdesign.com