মানবপাচারকারী চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১ | ৩:৪২ অপরাহ্ণ

মানবপাচারকারী চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার
apps

আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রেফতারকৃত ৪ জন হলেন-হাবিবুর রহমান, মামুনুর রশিদ, জামাল হোসেন এবং নাহিদুল ইসলাম পলাশ।

এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ২৮টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন দূতাবাস, ব্যাংক ও এজেন্সির ১৯টি সিল মোহর এবং কম্বোডিয়ার ১০টি জাল ভিসা উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এই মানবপাচারকারী চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলো। এই চক্রটি লাখ লাখ টাকা আত্মসাতও করেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিক্তিতে চক্রের ৪ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের একটি দল। শেখ ওমর ফারুক বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশ (মাল্টা, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরী মিশর মালদ্বীপ কম্বোডিয়া) পাঠানোর কথা বলে মানুষ সংগ্রহ করে। পরে তারা অনুমোদনহীন এজেন্সির মাধ্যমে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমোদনহীন ছাড়া প্রথমে ভিজিট ভিসায় ল্যান্ড চেকপোস্ট ভারতে পাঠাত।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতে নেওয়ার লোকজনদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে ভুয়া ভিসা দিয়ে পরিবারের লোকজনদের কাছ থেকে নানাভাবে টাকা সংগ্রহ করত। যারা টাকা দিতে না পারত তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতন করে টাকা আদায় শেষে জঙ্গলে ছেড়ে দিত। এই সংঘবদ্ধচক্রে বাংলাদেশ,ভারত, শ্রীলঙ্কা, ও মালদ্বীপের দালাল চক্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এছাড়াও এই সংঘবদ্ধ চক্রটি ইউরোপে নেওয়ার কথা বলে জাল ভিসা সরবরাহ করে এবং ঘন ঘন অফিস ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করত। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্নসূত্র জানতে পেরেছি, তারা এই কাজে ছয় থেকে সাত বছর ধরে করছে। তবে আরো তথ্য পেয়েছি তারা অন্তত ১শ লোককে পাচার করেছে। তবে আমরা এখনও পর্যন্ত সেসব ভিকটিমদের সন্ধান পাইনি।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে ভিকটিমদের বিআরটিসি বাসে করে বেনাপোল নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদেরকে বাস করে নেওয়া হয় কলকতায়। পরে ট্রেনে করে হায়দারাবাদ নেওয়া হয়। এরপর টলারে করে নেওয়া হয় শ্রীলঙ্কায়। সেখানে জঙ্গলে ফেলে নির্যাতন করে টাকা আদায় করা হতো। পরে ওই ভিকটিমেরা সেখান থেকে পাঠিয়ে শ্রীলঙ্কার স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে। পরে তাদের পরিবার থেকে টাকা পাঠালে তাদের দেশে ফিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শরণাপন্ন হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার হাতুড়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আহসান হাবীব। তিনি এই চক্রের কাছে প্রতারিত হয়েছেন। ভুক্তভোগী আহসান হাবীব বলেন, ইউরোপের দেশ মাল্টায় পাঠানোর কথা বলে এই চক্রের সঙ্গে ১২ লাখ টাকার চুক্তি হয়। পরে আমার কাছ থেকে বাংলাদেশ থাকাকালীন সময় আট লাখ টাকা নেয় তারা। এরপর ভারতে নিয়ে যায়। সেখানের হায়দারাবাদে নিয়ে আমাকে নির্যাতন চালায় এবং আরও চার লাখ টাকা আদায় করে। এরপর হায়দারাবাদ এলাকার একটি জঙ্গলে আমাকে ফেলে দেয়। পরে সেখানকার স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় আমি দেশে ফিরে আসি।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জাকির হোসেন এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক উপস্থিত ছিলেন।

Development by: webnewsdesign.com