আসুন ভাই আসুন একবার খাইলে আবার খাইতে মন চাইবে। ছিল্লা কাইট্টা লবন লাগাইয়া দিমু মাত্র ৫ টাকা। এভাবেই চিৎকার করে আমড়া খেতে আহবান জানালেন। হবিগঞ্জের মাধবপুরে বাসষ্ট্যান্ড এলাকার হকার সোহেল মিয়া। সোহেল মিয়ার সঙ্গে কথা হয় তিনি একজন সিজনাল হকার যখন যে ফলের মৌসুম তিনি বিক্রি করেন। এখন আমড়ার সিজন চলছে তাই আমড়া বিক্রি করছেন।
সিজনাল ফলের ব্যবসায় নাকি লাভ বেশি। তাই বরিশালের আমড়া অনেক মিষ্টি ও সুস্বাধু ফল। বাসষ্ট্যান্ডের যতগুলো গাড়ি থামে সেগুলো তারা হাতে কঞ্চি নিয়া এগুলো বিক্রি করে। তাদের এ ছিল্লাছিল্লিতে কাষ্টমারদের কানে শব্দ দূষণ হয়। সকাল থেকে সারাদিন তারা এসব করে থাকে। খাটিতে বসানো আমড়া নিয়ে যখন ছুটাছুটি করে তখন জিব্বায় জল রাখা দায়।
ফলগুলোতে ওরা বিশেষ ভাবে কেটে পরিবেশন করে। দেখতে দারুন। এব বিশেষ আকর্ষন মনে হবে। এ যেন শিল্পীর কারুকাজ। লুফে নিতে ইচ্ছে করবে বার বার সে আমড়া বাঙালির অতি প্রিয় একটি ফলের নাম। টক মিষ্টি মিশ্রণে ভিন্ন এক স্বাদ। কচি অবস্থায় টক। পরিপক্ক হলে খেতে বেশ লাগে। পাকা ফল খুবই মিষ্টি। আমড়ার সিংহভাগ কাঁচা খাওয়া হলেও ভর্তা, আচার, চাটনি আর পরিপক্ক ফল দিয়ে তৈরি করা যায় জুস, জেলি এবং মোরব্বার মতো লোভনীয় খাবার। গ্রামাঞ্চালের কেউ কেউ গোশতের সাথে আমড়া রেধে খান।
ডালের সাথেও খাওয়া যায়। আমড়ার শসাস সাদা। পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। যে কারণে একে গোল্ডেন আপেল বলে। মাঘ-ফাল্গুন আমড়ার মুকুল আসে। এর পরে ফল কচি অবস্থায় ফলের বিচি নরম থাকে। পরিপক্ক হলে আটি বেশ শক্ত হয়। অগ্রহায়ণ ফল পাকে। পাকা ফলের গন্ধ চমৎকার। আমড়া সারা দেশেই চাষ করা যায়। তবে বরিশালের আমড়া সারাদেশে নামকরা। দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানির জন্য এর ফলন ও গুণসম্মত মান হয়। প্রসিদ্ধ হিসেবে সবাই বরিশালের আমড়া বললেও আসলে রাজশাহী আমড়ার রাজধানী বলা যায়।
কারণ ওখানকার ফলন হয় সবচেয়ে বেশি। ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা এবং বরগুনাতেও ভালো জন্মে। বাংলাদেশে দুই প্রজাতির আমড়া চাষ হয়। দেশি এবং বিলাতি। বিলাতি আমড়ার অপর নাম বরিশালের আমড়া। দেশি আমড়া খেতে টক, বিচি বড়। বিলাতি আমড়া খেতে মিষ্টি বিচিও ছোট। ভালো ফলনের জন্য আমড়ার উচ্চফলনশীল জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি আমড়া-,. এবং বারি আমড়া-২। বারি-আমড়া-১ বারো মাসি। গাছ বামনাকৃতির হয়। তাই বাড়ির ছাদেও লাগানো যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। নাম এফটিআইপ বাউ আমড়া-১। বিশেষজ্ঞদের মতে পুষ্টিগুণ আমড়ার পুষ্টিগুণে টইটম্বুর। ভিটামিন সিথর পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লৌহ। লৌহের অভাবে আমাদের রক্তস্বল্পতার সৃষ্টি হয়। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় এ উপসর্গ দেখা দেয় না। অভাব বেশি হলেই কেবল শারীরিক দুর্বলতা অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ঘন ঘন অসুস্থতা এসবের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
তখন বড়দের কর্মদক্ষতা কমে যায়। অপরদিকে শিশুদের মস্তিষ্ক হয় বাধাপ্রাপ্ত। ফলে স্কুলের পড়া সহজে শিখতে পারে না। অথচ বাচ্চাসহ বড়রা লৌহসমৃদ্ধ অন্য খাবারের পাশাপাশি আমড়া খেলে এসব সমস্যা এড়ানো সম্ভব। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে এর প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে শর্করা ১৫ গ্রাম আমিষ ১ দশমিক ১ গ্রাম, চর্বি ০ দশমিক ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৫ মিলিগ্রাম, খনিজ পদার্থ ০ দশমিক ৬ গ্রাম, লৌহ ৩ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ১ খ ০ দশমিক ০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সিথ ৯২ মিলিগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬৬ কিলোক্যালরি।
মাধবপুর প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি হীরেশ ভট্টাচার্য্য হিরো মাধবপুর বাস ষ্ট্যান্ডে আমড়া বিক্রেতা সোহেল এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, তার আর্থিক অনটনের জন্য প্রতি বছর মৌসুমী ফল যেমন, আমড়া, আনারস, কাঁঠাল, জাম বিক্রি করে মা সহ ৪ বোন ২ ভাইয়ের সংসার চালিয়ে কোনরকমে জীবন যাপন করছে।
মহামারী করোনাকালীন সময়েও থেমে নেই তার এসব ব্যবসা। কারণ কেউ কোন খোঁজ রাখে না তাদের এ হাল অবস্থার কথা। এ ব্যাপারে মাধবপুর সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ আশরাফ জানান, মেম্বার অথবা চেয়ারম্যান দ্বারা কোন প্রত্যয়ন আসলে আমরা তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
Development by: webnewsdesign.com