ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
ব্রেইন টিউমারের কথা শুনলেই আমরা ভয়ে কুঁকড়ে যাই। চিন্তায় পড়ি। অন্য টিউমার নিয়ে যতটা না চিন্তা, ব্রেইন টিউমার নিয়ে তার চেয়ে বেশি দুচিন্তা ও ভয় কাজ করে মনে। বেশি দুশ্চিন্তা কাজ করে-এর চিকিৎসা আছে কিনা? দেশে এর চিকিৎসা করা সম্ভব কিনা।
সাধারাণত মস্তিষ্কে বেনাইন টিউমার বেশি হয়। অর্থাৎ মস্তিষ্ক ছাড়া অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়ে না। কিন্তু সমস্যা হলো মস্তিষ্কে যেহেতু জায়গা কম, তাই টিউমার প্রভাব ফেলতে পারে সহজেই। লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাড়াতাড়ি। এর সুবিধাও আছে। এতে রোগী দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে। মস্তিষ্কে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে। অন্য কোনো অঙ্গ থেকেও ক্যানসার মস্তিষ্কে আসতে পারে। যেমন-স্তন ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, কিডনির ক্যানসার, অন্ত্রের ক্যানসার, মেলানোমা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে তা খুব কম।
যাদের হয় মস্তিষ্কের টিউমার : টিউমার হওয়ার বয়স নেই। ছোট থেকে বৃদ্ধ-সবার মস্তিষ্কের টিউমার হতে পারে। শিশুদের টিউমারগুলো মারাত্মক হয় বেশি। যে কারণে হয় : কেন মস্তিষ্কে টিউমার হয় তার কারণ অজানা। তবে কিছু কিছু কারণে টিউমারের ঝুঁকি বাড়ে।
জাতি : কিছু টিউমার কিছু মানুষের বেশি হয়। যেমন-গ্লায়োমা টিউমারগুলো ফর্সা মানুষের বেশি হয়। আর মেনিনজিওমা হয় কালো বর্ণের মানুষের। রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা : অতিরিক্ত মাত্রার রেডিয়েশনের কারণে ক্যানসার হতে পারে। এর চিকিৎসায় যে রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়, তা কিন্তু মস্তিষ্কের টিউমারের কারণ হতে পারে। পারমানবিক শক্তি থেকেও এ টিউমার হতে পারে।
বংশগত : মস্তিষ্কের কিছু টিউমার বংশগত কারণে হতে পারে। যেমন-নিউরোফাইব্রোমেটোসিস, ভন হিপ্পেল লিনডু সিন্ড্রোম, লি-ফ্রাউমেনি সিন্ড্রোম ইত্যাদি।
লক্ষণ : মাথাব্যথা মূল লক্ষণ। তবে মাথাব্যথা মানেই মস্তিষ্কের ক্যানসার নয়। মাথাব্যথার যত কারণ আছে, তার বেশিরভাগই অন্য। মস্তিষ্কের টিউমারের মাথাব্যথার ধরন একটু ভিন্ন। সারাক্ষণ মাথাব্যথা থাকে। পুরো মাথায় হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যথা থাকে। হাঁচি-কাশি দিলে মাথাব্যথা বাড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠলে ব্যথা বেশি হয়। মাথাব্যথার সঙ্গে বমি হতে পারে। টিউমারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন-মস্তিষ্কের সামনের দিকে টিউমার হলে আচরণে অস্বাভাবিকতা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, মনযোগে ঘাটতি হতে পারে। শরীরের একপাশ ধীরে ধীরে অবশ হওয়া, চোখে দেখার সমস্যা, হাঁটতে সমস্যা, ভারসাম্যহীনতা, কথা বলার সমস্যা, খিঁচুনি, কানে শোনার সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে।
চিকিৎসা : মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে আছে-মেডিক্যাল চিকিৎসা, সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি প্রয়োজন। চিকিৎসা দেশে সম্ভব কিনা : মস্তিষ্কের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা দেশেই হয়ে থাকে। ওষুধের পাশাপাশি সব ধরনের অপারেশনের জন্য দেশে ভালো মানের সার্জন আছেন। যেটা জরুরি তা হলো, লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। লেখক : সহকারী অধ্যাপক; ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
Development by: webnewsdesign.com