মসজিদমুখী করার কর্মসূচি যুবকদের

বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ | ৩:৫০ অপরাহ্ণ

মসজিদমুখী করার কর্মসূচি যুবকদের
apps

মুসলিম বিশ্বের বহু যুবক এমন পরিবেশে বেড়ে উঠছে, যেখানে তারা উপযুক্ত ধর্মীয় শিক্ষা, ঈমানি প্রশিক্ষণ ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেড়ে উঠছে না। আর এমনটি হচ্ছে দ্বিনবিমুখ শিক্ষা ও পরিবেশ, পারিবারিক অঙ্গনে দ্বিনের পরিপালন না থাকা, পাপোপকরণের সহজলভ্যতার কারণে। দ্বিনের ধারক-বাহক আলেম দায়িত্ব হলো যুবকদের জন্য উপযুক্ত দ্বিনি পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দ্বিন পালনে তাদের সহযোগিতা করা। বিশেষত ইসলামী বিধি-বিধানের বিকৃতি, দ্বিন পালনে শিথিলতার পরিণাম ও দ্বিনের ওপর অটল থাকার গুরুত্ব তাদের সামনে তুলে ধরা আবশ্যক।

আর তা সহজ হবে, যখন প্রতি মহল্লার মুসলিম যুবকদের মহল্লার মসজিদের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে এবং মসজিদের ইমাম, মাদরাসার আলেম ও দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিতদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। এদের সংস্পর্শে যুবকরা দ্বিন সম্পর্কে জানতে পারবে, দ্বিন পালনে অনুপ্রেরণা পাবে এবং দ্বিনের ওপর তাদের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পাবে।

মসজিদের গুরুত্ব : মুসলিম সমাজে মসজিদের বহুমুখী ভূমিকা তুলে ধরে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) লেখেন, ইসলামের সোনালি যুগে মসজিদগুলো মুসলমানদের দ্বিনি কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র এবং তাদের শিক্ষাদীক্ষা, সংস্কার, সংশোধন ও ধর্মীয় দিকনির্দেশনা লাভের উৎস পরিণত হয়েছিল। মসজিদেই মুসলমানের সামাজিক ও ধর্মীয় সমস্যাগুলোর সমাধান হতো, জীবনের নানা শাখায় বিভিন্ন কর্মতৎপরতার প্রয়োজনীয় বিধান এখানেই প্রণীত হতো। …মুসলমানদের জীবনধারা একে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো। জ্ঞান ও হিদায়াতের উৎস, সংস্কার ও সংশোধন, ধর্মীয় আন্দোলন সব কিছুই মসজিদ থেকেই সৃষ্টি হতো এবং তা চতুর্দিকে বিস্তার লাভ করত। (তামিরে হায়াত)

কেন মসজিদমুখী করতে হবে?

আলেমরা যুবকদের মসজিদমুখী করার কয়েকটি উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন। তা হলো—

১. যুবকদের দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা ও আনুগত্যে উৎসাহিত করা।

২. যেন কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহর আরশের ছায়া লাভ করে। যেদিন আর কোনো ছায়া থাকবে না।

৩. তাদের সামনে জ্ঞানগত, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল্যবোধ তুলে ধরা।

৪. ইসলামী জ্ঞান ও মূল্যবোধের সঙ্গে তাদের দূরত্ব স্পষ্ট করা।

৫. সামাজিক জীবন ও সামাজিক শিষ্টাচারের গুরুত্ব তুলে ধরা।

৬. দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা স্পষ্ট করার জন্য।

৭. বৈধ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা। যেন তারা বিনোদনের অন্বেষণে বিপথগামী না হয়।

মসজিদমুখী করার নানা কর্মসূচি

যুবকদের মসজিদমুখী করতে নানা ধরনের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এসব কর্মসূচির ভিত্তি হবে ইসলামী শরিয়ত এবং তার কেন্দ্র হবে স্থানীয় মসজিদ। নিম্নে এমন কিছু কর্মসূচির বিবরণ তুলে ধরা হলো—

১. সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড : ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে যুবকদের উজ্জীবিত করা যেতে পারে। তা এভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে যে প্রত্যেক মহল্লায় প্রতি সপ্তাহে যুবকদের জন্য সাংস্কৃতিক আয়োজন হলো এবং মাস শেষে প্রধান মসজিদে সম্মিলিত আয়োজন হলো। সাংস্কৃতিক আয়োজনে স্বরচিত কবিতা ও গদ্য পাঠ, ইসলামী সংগীত পরিবেশন, আরবি ও বাংলা হাতের লেখা চর্চা, ক্যালিগ্রাফি ও বৈধ চিত্রকলার চর্চা হতে পারে।

২. জ্ঞানগত কর্মসূচি : একই পদ্ধতিতে ইসলামী জ্ঞানচর্চার আসর হতে পারে। যেখানে যুবকরা ঈমান ও ইসলামের নানা দিক নিয়ে আলোচনা, কোরআনের বিশুদ্ধ পাঠচর্চা, কোরআনের অর্থ ও মর্মের পাঠগ্রহণ, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা ও হাদিস মুখস্থ করতে পারে। একজন প্রাজ্ঞ আলেমের তত্ত্বাবধানে এমন ইলমি মজলিস হওয়া আবশ্যক। যেন তিনি যুবকদের সামনে ঈমান-ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারেন এবং তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারে। এসব বৈঠকে কোরআন, সুন্নাহ ও ফিকহের পাশাপাশি ইসলামের অতীত ইতিহাস, অবদান ও ঐতিহ্য তাদের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। এতে তাদের হীনম্মন্যতা দূর হবে এবং দ্বিনি কাজে অগ্রসর হওয়ার সাহস পাবে।

৩. আধ্যাত্মিক কর্মসূচি : যুবকদের জীবনে নীতি-নৈতিকতা ও সংযমের গুরুত্ব অপরিসীম। তাদের চারিত্রিক শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক দীক্ষার জন্য আত্মশুদ্ধিমূলক মজলিসের আয়োজন করা প্রয়োজন। যেখানে যুবক বয়সের পাপ-প্রবণতা তুলে ধরে আত্মসমালোচনা হতে পারে। পাশাপাশি আত্মার ব্যাধি ও আত্মপরিশুদ্ধির পথ ও পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। বিশেষত সেখানে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি মাসনুন জিকির ও দৈনন্দিন জীবনের নফল আমলের অনুশীলন হতে পারে।

৪. খেলাধুলা ও শরীরচর্চা : শারীরিক সুস্থতা ও সুঠাম দেহ সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুবকদের মসজিদমুখী করতে বৈধ খেলাধুলা ও শরীরচর্চার আয়োজন করা যেতে পারে। বিশেষত ফজরের নামাজের পর। এ ধরনের আয়োজন তাদের শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখবে।

৫. সামাজিক কর্মসূচি : আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য দূরত্ব—এই মূলনীতির ভিত্তিতে যুবকদের সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করতে হবে। যার মধ্যে অসহায় মানুষের সহযোগিতা, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে জনকল্যাণমূলক কাজ, সামাজিক বনায়ন, অসুস্থ ও বিপদগ্রস্ত প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়া, সমাজের বিভিন্ন স্তরে দ্বিনের দাওয়াত পৌঁছানো, সামাজিক অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ইত্যাদি থাকতে পারে। সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মসজিদে মসজিদে সমাজকল্যাণ তহবিল গঠন করা যেতে পারে।

সাংগঠনিক কাঠামো : যুবকদের মসজিদমুখী করতে এবং মসজিদভিত্তিক সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্বার্থে ‘যুবসংঘ’ গড়ে তোলা যেতে পারে। এসব সংঘের সদস্য হবে ১৫ থেকে ২০। সমাজের সবচেয়ে সৎ ও দ্বিনদার যুবকদেরই এখানে জায়গা দিতে হবে। বিশেষত তাদের ভেতর তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। তা হলো ক. যারা দ্বিনদার ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী, খ. যারা অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, গ. সংঘের কর্মসূচি বাস্তবায়নের মানসিকতা পোষণ করে।

Development by: webnewsdesign.com