মধ্যপ্রাচ্যে থেকে সাত মাসে রেমিটেন্স এসেছে ৬৩৪ কোটি ডলার

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১০:০৪ অপরাহ্ণ

মধ্যপ্রাচ্যে থেকে সাত মাসে রেমিটেন্স এসেছে ৬৩৪ কোটি ডলার
apps

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ে মন্দাভাব কাটিয়ে উঠেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে এ অঞ্চলের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৬৩৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিটেন্স নগদ প্রণোদনা, নানা উদ্যোগ ও ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ হাজার ১০৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৬৩৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলার- যা মোট আহরিত রেমিটেন্সের ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর বিশ্বের অন্য দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৪৭০ কোটি ৬ লাখ ডলার।প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশের মধ্যে পাঁচটি হল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। এর মধ্যে সাত মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। চলতি অর্থবছরে দেশটি থেকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ২২৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার- যা মোট আহরিত রেমিটেন্সের ২০ দশমকি ৬০ শতাংশ।বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রেমিটেন্স পাঠানোয় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে অন্য দেশগুলো হচ্ছে আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর।

অর্থবছরের সাত মাসে রেমিটেন্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার। তৃতীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার । চতুর্থে থাকা কুয়েত থেকে এসেছে ৮৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে পাঠিয়েছে ৮৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।

মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৭৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এছাড়া ওমান থেকে ৭১ কোটি ৮৪ লাখ, কাতার থেকে ৬৫ কোটি ৫৩ লাখ, ইতালি থেকে ৪৯ কোটি ৩ লাখ এবং বাহরাইন থেকে ২৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এসেছে।রেমিটেন্সের প্রণোদনার অর্থ যেন সহজে প্রবাসীরা পাঠাতে পারে সেজন্য বেশ কিছু শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি এক সার্কুলারে দেড় লাখ টাকার রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কাগজপত্র লাগবে না বলে জানিয়েছে। আগে ১৫০০ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে বিনা প্রশ্নে প্রণোদনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের বোঝার সুবিধার্ধে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি দেড় লাখ টাকার ওপরে রেমিটেন্সের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে।এদিকে দেড় লাখ টাকা বা দেড় হাজার ডলারের বেশি রেমিটেন্স প্রেরণকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হয়। আগে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রেমিটেন্সের কাগজপত্রাদি দাখিলের সময়সীমা ছিল।

এটি বাড়িয়ে ১৫ কার্যদিবস করা হয়েছে।জানা গেছে, দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংকের শাখায় পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতার দেয়া নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে হয়।

রেমিটেন্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দিতে হয়।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠায়- যা অর্থবছরের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ। তারও আগে চার বছরের মধ্যে দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল। সে সময় রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার।

এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার- যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

Development by: webnewsdesign.com