শরীরের হাড়ের ভেতরে এক রকম নরম পদার্থ থাকে, যাকে ম্যারো বা মজ্জা বলে। এটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে প্রতিস্থাপন করা দরকার হতে পারে। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন মানে ডোনারের কাছ থেকে সুস্থ স্টেম সেল নিয়ে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা। এই জন্য একে স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টও (এসসিটি) বলে। রক্তের যেমন একাধিক গ্রুপ থাকে, তেমন স্টেম সেলের মধ্যেও একাধিক টিসু গ্রুপ থাকে, যাকে এইচএলএ (হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেনস) বলে। এই প্রতিস্থাপনে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে এইচএলএ ম্যাচ হওয়া জরুরি।
এক্ষেত্রে রোগী নিজেই দাতা। কোনো কোনো ক্যানসারের চিকিৎসায় রোগীকে হাই ডোজ কেমো বা রেডিয়েশন দেওয়ার আগে তার শরীর থেকে ভালো স্টেম সেল সংগ্রহ করে রাখা হয়। কেমো দিয়ে হাড়ের মধ্যে থাকা অস্থিমজ্জা সম্পূর্ণ ফাঁকা করে দেওয়ার দুদিন পরে সঞ্চয় করে রাখা সেল প্রতিস্থাপন করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগী যেহেতু নিজেই দাতা, তাই এইচএলএ ম্যাচের প্রসঙ্গ আসে না।
অ্যালোজেনিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট
এ ক্ষেত্রে দাতা হবেন অন্য ব্যক্তি। এই প্রতিস্থাপনের কয়েকটি প্রকারভেদ আছে-
* ম্যাচড সিবলিং ট্রান্সপ্ল্যান্ট : আমরা জন্মসূত্রে মা-বাবার কাছ থেকে এইচএলএ পাই। তাই ভাই-বোনের মধ্যে এইচএলএ ১০০ শতাংশ ম্যাচ হওয়া সম্ভব। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। সংখ্যায় কম হলেও কিছু ক্ষেত্রে ভাই-বোনের মধ্যে এইচএলএ ম্যাচ হয় না।
* হ্যাপলোটাইপ মিসম্যাচড ট্রান্সপ্ল্যান্ট : এক্ষেত্রে দাতা হন বাবা-মার মধ্যে যে কোনো একজন। মা এবং বাবা যেহেতু দুটি আলাদা পরিবার থেকে আসেন, তাই তাদের যে কোনো একজনের সঙ্গে সন্তানের ৫০ শতাংশ অবধি এইচএলএ ম্যাচ করানো সম্ভব হয়।
* ম্যাচড আনরিলেটেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট: এক্ষেত্রে দাতা পরিবারের বাইরের অজানা ব্যক্তি। কম্পিউটারের মাধ্যমে গ্রহীতার টিসু গ্রুপের সঙ্গে মিল আছে এমন কাউকে দাতা হিসাবে খুঁজে নেওয়া হয়। তবে এ পদ্ধতি বেশ সময় ও খরচসাপেক্ষ। কিন্তু ম্যাচড সিবলিং ট্রান্সপ্ল্যান্টের বাইরে সম্পূর্ণ সফল প্রতিস্থাপনের একমাত্র উপায় এটিই।
আমবিলিক্যাল কর্ড ব্লাড ট্রান্সপ্ল্যান্ট : এ ক্ষেত্রে নবজাতকের আমবিলিক্যাল কর্ড থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করে, প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপনের আগে ডোনারকে গ্রোথ ফ্যাক্টর ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এই ইঞ্জেকশন রক্তকে স্টিমুলেট করে স্টেম সেলকে রক্তের মধ্যে নিয়ে আসে। সেটা সংগ্রহ করে শিরার মধ্য দিয়ে রোগীর রক্তে স্টেম সেল প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়, যা রক্ত সংবহন তন্ত্রের মাধ্যমে চলে যায় দেহের সব হাড়ের ভেতরে। সেখানে প্রতিস্থাপিত হয়ে শুরু করে দেয় স্বাভাবিক রক্তকণিকার উৎপাদন। একে বলা হয় এনগ্রাফ্টমেন্ট। কেমোথেরাপির মাধ্যমে রোগীর হাড়ের ভেতরে সব মজ্জা খালি করে ফেলার দুদিন পরে স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করা হয়। এই খালি করার সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়ে শরীরে একেবারেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকায় বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হওয়ার আশংকা থাকে। অ্যালোজেনিক প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ডোনারের স্টেম সেল রোগীর নিজের সেলে পরিণত হতে প্রায় দু’-তিন সপ্তাহ লাগে। ‘ফরেন বডি’ অর্থাৎ দাতার সেল গ্রহীতার শরীরে খাপ খাওয়ানোর সময়েও শরীরে বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে। তবে অটোলোগ্যাস প্রতিস্থাপনে রোগী নিজেই দাতা, তাই এ ক্ষেত্রে জিভিএইচডির সমস্যা থাকে না। প্রতিস্থাপনের আগে ও পরে মিলিয়ে বেশ অনেক দিন মেডিক্যাল সার্পোট দিয়ে এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রোগীকে হাসপাতালে রাখা হয়।
লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট, পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি অ্যান্ড বোনম্যারো ট্রান্সপ্যালেন্ট সার্জন, এপোলো হাসপাতাল, দিল্লি ভারত।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
Development by: webnewsdesign.com