বেপরোয়া গতি নাকি ফিটনেসবিহীন যানবাহন দায়ী

বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২:১৫ অপরাহ্ণ

বেপরোয়া গতি নাকি ফিটনেসবিহীন যানবাহন দায়ী
বেপরোয়া গতি নাকি ফিটনেসবিহীন যানবাহন দায়ী
apps

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে দুর্ঘটনার হার। এই মহাসড়কের বরিশাল অংশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

চালক ও শ্রমিকরা বলছেন, মহাসড়কে স্বল্প গতির অবৈধ যানবাহন ও অপরিপক্ক চালকের কারণে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিআরটিএ সূত্র বলছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে মহাসড়কে। আর পুলিশ বলছে, অধিক গতি ও বেপরোয়া চালনাই সড়কে দুর্ঘটনার কারণ। সব মিলিয়ে সড়ক প্রশস্তকরণসহ কিছু উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন যানবাহন সংশ্লিষ্টরা।

বরিশাল-ঢাকা রুটের নিয়মিত বাসচালক নয়ন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ অনেকটাই বেড়ে গেছে। এখন এমন অবস্থা নছিমন, টমটম, করিমন, আলমসাধু জাতীয় একটি অবৈধ থ্রি-হুইলার যদি দ্রুতগামীর একটি যানবাহনের সামনে থাকে তাহলে বিপরীত পাশের সড়ক খালি না থাকলে দীর্ঘসময়েও ওভারটেক করা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে ওভারটেক করতে হয় চালকের নিজের ঝুঁকিতে। হিসেবে কোনো গড়মিল হলেই দুর্ঘটনা। আবার ভুরঘাটা থেকে বরিশাল পর্যন্ত মহাসড়কের সাথেই বেশ কিছু বাজার রয়েছে, যেখান থেকেও ধীরগতিতে যানবাহন চালনা করতে হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অনেক চালকই বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে যানবাহন চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

এজন্য অবৈধ যানবাহন ও মহাসড়কে চলাচল রোধ ও মহাসড়ক প্রশস্ত করার পাশাপাশি মহাসড়কের পাশ থেকে বাজার সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবহন চালকরা।

যদিও মহাসড়ক কেন্দ্রিক প্রাইভেট গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, পণ্য ও যাত্রীবাহী দূরপাল্লার পরিবহনের বাইরে বরিশাল-ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচলকারী লোকাল বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে রয়েছে অপরিপক্ক (লাইসেন্সবিহীন) চালক। যারা মহাসড়কে যানবাহন চালাতে বিভিন্ন বাতি নির্ভর সাংকেতিক নিয়মই জানেন না। খেয়ালখুশি মতো যানবাহন চালিয়ে অন্যকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন তারা। এছাড়া লোকাল বাসগুলোর মধ্যে বেশির ভাগেরই নেই কোনো ফিটনেস, চেসিস বাঁকা বাসের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে মহাসড়কে।

বিআরটিএ সূত্রও বলছে, বরিশালের বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী বাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫০ ভাগের ফিটনেস রয়েছে। যদিও শ্রমিক আন্দোলন ও ধর্মঘটের ভয়ে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় না বিআরটিএ। তবে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিআরটিএ বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান।

যদিও সর্বশেষ গত ৭, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি এ মহাসড়কের মাত্র ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ঘটা ৫টি আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অধিক গতিকে দায়ী করছে হাইওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে ৭ ফেব্রুয়ারি উজিরপুরের ইচলাদিতে লোকাল ও দূরপাল্লার দুটি বাস, প্রাইভেট কার, অবৈধ ট্রলি, মাহিন্দ্রাসহ ৫ যানবাহনের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি বরিশাল নগরের কাশিপুরে দূরপাল্লার বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, একইদিন গৌরনদীর কটকস্থলে বিআরটিসি বাসের চাপায় অবৈধ নছিমনের চালক এবং গৌরনদীর বাটাজোরে লোকাল ও দূরপাল্লার দুই বাসের মাঝে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। সবশেষ ১৫ নভেম্বর উজিরপুরের আটিপাড়ায় দূরপাল্লার দুটি বাসের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

হাইওয়ে মাদারীপুর জোনের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, গত কয়েকদিনের ৫টি দুর্ঘটনার পেছনের মূল কারণ ছিল অধিক গতি। এজন্য চালকদের গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে যানবাহন চালাতে হবে।

নিজেদের সক্ষমতা কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, জনবলের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের যানবাহন সংকট রয়েছে। তবে আমরা মহাসড়কের নিয়ম ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। বিগত দিনের থেকে বর্তমানে মাদারীপুর জোনের আওতায় সড়ক আইনে প্রচুর মামলা হচ্ছে। এর মধ্যে অধিক গতি, ফিটনেস না থাকা, কালো ধোঁয়া, কাগজপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে। তবে চালকরা সচেতন না হলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চাপ দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই হিসেবে সড়কের সক্ষমতা এখনও বাড়েনি। ভবিষ্যতে সক্ষমতা বাড়বে এবং আমাদের কাজের পরিধিও বাড়বে। সেই চিন্তা করে বরিশাল ও পটুয়াখালীর যে অংশে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই সেই সব মহাসড়ক মিলিয়ে আরও ২-৩টি হাইওয়ে থানা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com