একবিংশ শতাব্দীর দুর্দান্ত ঘটনাগুলোর একটি হচ্ছে ইথিওপিয়ার দ্রত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। তবে এমন লক্ষণ রয়েছে যে দেশটির এই উত্থান বেশিদিন স্থায়ী নাও হতে পারে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে দেখা গেছে, উৎপাদনশীলতার উন্নতি হয়নি, বরং সরকারের ব্যয়নীতির কারনেই দেশটির অর্থনীতি জোরদার হয়েছে। যদি সরকারের বিনিয়োগগুলি ফলপ্রসূ প্রমাণিত না করে এবং করের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি না পায় তবে ইথিওপিয়ার অর্থনীতির বিষ্ময়কর প্রবৃদ্ধি থেমে যেতে পারে।২০০০ সালে, আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ ইথিওপিয়া ছিল বিশ্বের তৃতীয়-দরিদ্রতম দেশ।
মাথাপিছু এর বার্ষিক জিডিপি ছিল প্রায় ৬২০ ডলার (২০১১ সালে)। জনসংখ্যার ৫০% এরও বেশি লোক দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেছিল, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের হার। তারপর থেকে যা ঘটেছে তা অলৌকিক। বিশ্বব্যাংকের অনুমান অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত, ১ কোটি বা তার বেশি নাগরিক আছে এমন দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু জিডিপি’র হিসাবে ইথিওপিয়া ছিল বিশ্বের তৃতীয়তম উন্নয়নশীল দেশ।এটি কেবল ধনী ব্যক্তিদের আরও সমৃদ্ধ হওয়ার বিষয় হয়ে ওঠে নি। সমৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বিস্তৃতভাবে সবার মধ্যেই হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে দেশটির দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে ৩১ শতাংশে নেমে যায় ইথিওপিয়ার দারিদ্র্যের স্তর মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংকের দেয়া সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী। সেখানে গড় আয়ু ২০০০ সালে যেখানে ছিল প্রায় ৫২ বছর, ২০১৭ সালে তা বেড়ে ৬৬ বছরে উন্নীত হয়েছিল। একই সময়ে শিশু মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে।
এ জাতীয় অগ্রগতি যে কোনও দেশে উদযাপনের কারণ হতে পারে, তবে আকার, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যের তীব্রতার কারণে, ইথিওপিয়ার উন্নতি পুরোপুরি অনুভ‚ত হয়নি। জাতিসংঘের হিসাবে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০ কোটি ৫০ লাখের বেশি হবে।
বর্তমানে ইথিওপিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ। জনসংখ্যার দিক থেকেও এটি বিশ্বের দ্রুততম বর্ধমান বড় দেশগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে।তবুও এখন ইথিওপিয়ার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে যেতে থাকবে কিনা সে সম্পর্কে আসলে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে দেশটির প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে ভবিষ্যতবাণী করেছিল তাতে পরিবর্তন এনেছে। তারা ২০২০ সালে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.৩ শতাংশ নির্ধারণ করেছে এবং ২০২১ সালের জন্য দেশটির প্রবৃদ্ধি লক্ষমাত্রা ৮.২ শতাংশ থেকে ৬.৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
বিশ্বব্যাংকগুলি জানিয়েছে যে, ‘মুদ্রাস্ফীতি রোধের লক্ষ্যে কঠোর রাজস্ব ও আর্থিক নীতিমালার ফলে’ এই মন্দা আসবে। তবে ইথিওপীয় সরকার ২০২০ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশেরও বেশি অর্জিত হবে বলে এখনও আশা করছে।
আইএমএফ আফ্রিকার পরিচালক আবেবে আম্রো সেলেসি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ইথিওপিয়ান ইকনোমিক এসোসিয়েশনে দেয়া বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, ২০০০ সালের দিকে ইথিওপিয়ার প্রবৃদ্ধির প্রায় অর্ধেকই অর্জিত হত শ্রমিক প্রতি উৎপাদনশীলতার উন্নতির কারণে। বাকী প্রবৃদ্ধির পেছনে ভ‚মিকা রেখেছিল নিযুক্ত জনসংখ্যা এবং মূলধনী বিনিয়োগের অংশবৃদ্ধি।
Development by: webnewsdesign.com