সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি

বিশুদ্ধ পানির সংকট,জ্বলছে না চুলা

বুধবার, ১৮ মে ২০২২ | ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিশুদ্ধ পানির সংকট,জ্বলছে না চুলা
apps

সুরমা নদী উপচে সিলেট নগরের অভিজাত এলাকা খ্যাত শাহজালাল উপশহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর সমান। মানুষজন রাস্তায় বের হতে পারছে না। বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকে নর্দমার পানি ঢুকে গেছে।

বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রান্নাঘর তলিয়ে যাওয়ায় চুলা জ্বলছে না।
জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। গোয়াইনঘাটে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও, মাহতাবপুর, মাধবপুর, শাহপুর, সাহেবনগর, শাখারীকোনা,মাখরগাঁও, আকিলপুর, রসুলপুর, তিলকপুর, হাজারীগাঁও ও খাজাঞ্চী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকেছে। এতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সুনামগঞ্জে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, পুরাতন সুরমার পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের মেঘালয়ের ভারি বর্ষণের ফলে জেলা শহর, ছাতক পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়ক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে ঢলের পানি ঢুকেছে। সড়ক তলিয়ে গেছে। যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ২১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট নগরের অভিজাত শাহজালাল উপশহরে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকার প্রায় পুরোটাই জলমগ্ন। কোথাও কোমর সমান, কোথাও হাঁটুপানি। ডি-ব্লকে সিটি করপোরেশনের ময়লা রাখার ঘরের ভেতর পানি ঢুকে আবর্জনা রাস্তায় ভাসছে। নালার ময়লামিশ্রিত পানি বাসাবাড়িতে ঢুকছে। এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, বাড়ির ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ ট্যাংকে ময়লা পানি ঢুকে গেছে। তাঁরা খাবার পানির সংকটে পড়েছেন। ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে পথ চলতে হচ্ছে। নগরের উপশহর ও মৌবন আবাসিক এলাকায় সড়কে নৌকায় করে মানুষকে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

শুধু শাহজালাল উপশহর এলাকাই নয়, নগরের সোবহানীঘাট, তেরো রতন, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, সাদিপুর, ছড়ারপার, কালীঘাট, তালতলা, তোপখানা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, কাজিরবাজার, মোল্লাপাড়া, ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, লামাপাড়া, শেখঘাট, খারপাড়া, মজুমদারপাড়া, আখালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাত থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে। বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নগরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অনেক জায়গায় নলকূপ ও চুলা পানিতে ডুবে গেছে।

পানি বাড়ায় বিছানাপত্র রক্ষায় অনেকে খাটের নিচে ইট বিছিয়ে উচ্চতা বাড়িয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকার পীরপুর, হায়দরপুর, টুকেরগাঁও, শাহপুর, গৌরিপুর, মইয়ারচর, নওয়া খুরুমখলা, নাজিরগাঁও, শেখপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সুরমার পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে। এসব এলাকায় কোথাও চার ফুটের ওপর পানি। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী কান্দিরগাঁও ইউনিয়নে। জালালাবাদ ইউনিয়নের শিবেরবাজার এলাকার মানুষ পানিবন্দি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেট সিটি করপোরেশন নগরের সাতটি ওয়ার্ডে ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, আমাদের নগরের খাল-ছড়া-ড্রেনের পানি যেখানে সুরমায় গিয়ে পড়ার কথা, এখন উল্টো সুরমার পানি এসব খাল-নালা দিয়ে নগরে প্রবেশ করছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুটি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে, শুকনা খাবার বিতরণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তেঘরিয়া, জগন্নাথবাড়ী বাজার, উকিলপাড়া, নবীনগর এলাকার সড়ক তলিয়ে গেছে। শহরের তেঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, বিয়াম স্কুল, উপজেলা ভূমি অফিসে পানি প্রবেশ করেছে। ছাতক পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা প্লাবিত হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার ২১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাত থেকে গতকালের মধ্যে ছাতকে ১৭২, দোয়ারাবাজারে ২৩, সদর উপজেলার ২০ এবং শান্তিগঞ্জের একটিসহ ২১৬টি স্কুলে পানি প্রবেশ করেছে। এতে স্কুলের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতিসহ পাঠদানও বিঘ্নিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শামসুদ্দোহা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত আছে। সোমবার রাত থেকে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমা ছাড়িয়ে রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা আসাম, মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সাত হাজার ২০০ পরিবার হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছাতক উপজেলায় তিনটি ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় দুটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খুলে রাখা হয়েছে। আরো ২০টি প্রস্তুত আছে। এ দুটি উপজেলায় ১৫ মেট্রিক টন চাল পাঠানো হয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com