বিরোধী দলগুলোর পরামর্শেই গঠন করতে হবে ইসি : মির্জা ফখরুল

বুধবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩:২৬ অপরাহ্ণ

বিরোধী দলগুলোর পরামর্শেই গঠন করতে হবে ইসি : মির্জা ফখরুল
apps

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা চাই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে সব বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শের ভিত্তিতেই গঠন করতে হবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দলীয় কমিশনের অধীনে নির্বাচন কতটা নিরপেক্ষ হয় তার বড় প্রমাণ বর্তমান ইসি। সবার মত উপেক্ষা করে সরকার একতরফাভাবে আজ্ঞাবহ ইসি পুনর্গঠন করলে তা জনগণ মেনে নেবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

আজ বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। এ সময় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে লাশ থাকা না থাকা নিয়ে সৃষ্ট ইস্যু, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, আগামী নির্বাচনে প্রস্তুতি, দল পুনর্গঠন, আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, করোনা প্রতিরোধে সরকারের নানা ব্যর্থতাসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে সৃষ্ট ইস্যু প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মাজার রয়েছে এটা ঐতিহাসিক সত্য। এর আগে তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন তো তারা এ নিয়ে কিছু বলেনি। দীর্ঘ এক যুগ ধরে তারা ক্ষমতা দখল করে আছে কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।

তাহলে হঠাৎ করে কেন এ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এর পেছনে বহুবিধ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এর একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, কোনো কিছু করতে পারছে না, দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে জনগণকে নন-ইস্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া। আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে-প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টির সামনে জিয়ার মাজার। এটাকে উনি সহ্য করতে পারছেন না। এটাকে কিভাবে তোলা যায় সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে পারেন। সরকারের হীন কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে-জিয়াউর রহমানের মাজার সরানোই তাদের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন-মজার ব্যাপার হচ্ছে, শেরেবাংলা নগরে লুই কানের করা সংসদ ভবনের যে প্ল্যান সেটা পাকিস্তানের পতাকার আদলে। সংসদ ভবনটা অনেকটা তারার মতো। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউটা ছিল ফাঁকা জায়গা। যেটা ছিল অনেকটা পাকিস্তানি পতাকার মতো। সরকার লুই কানের নকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাকিস্তানি পতাকাকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কোনো ইস্যু দলীয় বা ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। জিয়াউর রহমান এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটা প্রতীক। বাংলাদেশ এবং জিয়াউর রহমান অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটাকে বিভাজন করা যায় না। এ দেশের মানুষের হৃদয়ে জিয়াউর রহমান বিশাল জায়গাজুড়ে আছে। তাই এটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। তাকে নিয়ে অন্যায়ভাবে কিছু করা হলে তা মানুষের আবেগে আঘাত লাগে। যা বর্তমানে হচ্ছে।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন করেছি। কিন্তু তাদের অধীনে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয়েছে তা দেশবাসী দেখেছে। তারা দিনের ভোট রাতে করেছে। তাই বর্তমান সরকার যদি আগামীতে নির্বাচনকালীন সময়ে থাকে তাহলে তাদের অধীনে নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। তাই নির্বাচনের আগে এ সরকারকে সরে যেতে হবে। দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি নিরপেক্ষ একটা কমিশন গঠন করতে হবে। তাহলেই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারব। ইসি পুনর্গঠনের আগে সব দলের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা পরিস্থিতিই বলবে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যদি আমাদের এ দাবি মেনে না নেয় তাহলে অবশ্যই আমরা আন্দোলনে যাব। আমরা বর্তমানেও একই দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে রয়েছি। ভবিষ্যতে তা আরও জোরালো করা হবে।

আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জাতীয় স্বার্থ নিয়েই আন্দোলন করে থাকি। এ আন্দোলনে অবশ্যই জনগণের সমর্থন এবং তাদের সম্পৃক্ততাও রয়েছে। কিন্তু গুলি, হামলা, মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জনগণকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়। আমাদের চেষ্টা থাকবে জনগণ যাতে সেই ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আমাদের আন্দোলনে শরিক হন।

নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। যে কোনো সময়ে নির্বাচনে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি এ দলের রয়েছে। তাছাড়া নির্বাচনের জন্য বিশেষ সময় নয়, সারা বছরই প্রস্তুতি নিতে হয়। জনগণের পাশে থাকতে হয়। এ করোনাকালীন সময়ে সারা দেশের নেতাকর্মী জনগণের পাশে রয়েছে।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বিএনপির সামনে মূলত চ্যালেঞ্জ একটিই। সেটা হচ্ছে-গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এরচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর আমাদের কিছু নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, বর্তমানে দেশে যে অনির্বাচিত সরকার রয়েছে তাদের হটাতেও প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। আমরা সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। গত নির্বাচনের আগেও আমরা রাজনৈতিক মেরুকরণ করেছিলাম। যার ফলশ্রুতিতে গঠন করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এবারও আমরা সেই উদ্যোগ নেব। আগামী নির্বাচনের আগে আরও বৃহত্তর ঐক্য দেখা যাবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে কোনো দূরত্ব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো তো এ দুটি জোট আছে। ভেঙে দেওয়া হয়নি। করোনাসহ নানা কারণে শরিকদের মধ্যে যোগাযোগ কিছুটা কম হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, জোট ভেঙে যাচ্ছে বা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এটা যারা বলে তাদের উদ্দেশ্য অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়। এ দুটি জোটকে অক্ষুণ্ন রেখেই আরও বৃহত্তর পরিসরে জাতীয় ঐক্যে গড়ে তোলা হবে। জামায়াতের জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের জোট তো এখনো অক্ষুণ্ন আছে। জোট তো ভেঙে দেওয়া হয়নি।

বারবার উদ্যোগ নেয়ার পরও সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করা সম্ভব হচ্ছে না কেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংগঠন গুছিয়ে ওঠতে পারছি না এটা ভুল ধারণা। আমরা কাজ করছি। করোনার কারণে আমরা কিছুটা সময় কাজ করতে পারেনি। এখন পুরোদমে পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। সংগঠন গুছিয়ে ওঠছে। ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ একটার পর একটা নতুন কমিটি দেওয়া হচ্ছে। অঙ্গ সংগঠনগুলোও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার বা সমালোচকরা বারবার বলছেন বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, কোনো কিছুই করছে না। এটা সরকারের পক্ষ থেকে অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের তো কোনো কিছুই হচ্ছে না।

আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশটিতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তা নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলে একটা বড় ঘটনা। দক্ষিণ এশিয়ার গোটা রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করি। আমাদের কারও সঙ্গে কোনো বৈরিতা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত।

বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকায় করোনা মহামারির মধ্যেও চলছে লুটপাট। লোক দেখানো কয়েকজনকে আটক করা হলেও রাঘব বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

তিনি বলেন, কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। শেয়ারবাজার, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। দেশে কোনো বিনিয়োগ না থাকায় অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এসবের দিকে তাদের নজর নেই। তারা ব্যস্ত বিরোধী মত দমনে। যারাই সরকারের সমালোচনা করছে তাদের ওপর নেমে আসছে দমনপীড়ন। কিন্তু এভাবে ভয় দেখিয়ে মানুষকে বেশিদিন চুপ রাখা যাবে না। ইতিহাস বলে, দেশের স্বার্থে জনগণ ঠিকই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

Development by: webnewsdesign.com