‘বিএনপি ও আ’লীগ গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিয়েছে’

শনিবার, ০২ জানুয়ারি ২০২১ | ৯:০২ অপরাহ্ণ

‘বিএনপি ও আ’লীগ গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিয়েছে’
apps

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিয়েছে। জাতীয় পার্টির শাসনামলে দুর্নীতি ছিল না, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিল না, ক্ষমতার অপব্যবহার ছিল না। গেল ত্রিশ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের চেয়ে জাতীয় পার্টির শাসনামলে সুশাসন বেশি ছিল। জাতীয় পার্টির আমলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল, তাই নেতাকর্মীরা বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতি চালু করেছে। সংবিধান সংশোধন করে তারা ৭০ ধারা যোগ করেছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যে দল সরকার গঠন করে সেই দলের প্রধানই হন সংসদীয় দলের প্রধান এবং সরকারপ্রধান। আর ৭০ ধারার কারণে কোনো সংসদ সদস্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না। তাই সরকারদলীয় প্রধান যা চান তাই সংসদে পাস হয়। আবার সরকারপ্রধান যা চান না তা সংসদে পাস হয় না। এতে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে এবং সরকারের জবাবদিহিতা থাকে না। নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতায় দুর্নীতি বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট ৫ বার বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ৩০ বছর ধরে ৭০ ধারা অপব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা ভোগ করেছে। সংসদ যেখানে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেখানে সরকারই সংসদকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কোনো পথ আর নেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ডাক-চিৎকার করছে। কিন্তু বিএনপি কি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়েছে কখনো? বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মহাসচিবদ্বয় প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে বাহাস করেন। কিন্তু দুই দলই গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পরিয়ে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক স্বাদ নষ্ট করেছে।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি গণমানুষের দল। ’৯১ সালের নির্বাচনে দেশের সরকার, প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সবকিছুই জাতীয় পার্টির বিপক্ষে ছিল। নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে প্রচার চালাতে দেওয়া হয়নি। নেতাকর্মীদের জেলে পাঠিয়ে অবিচার করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। সেই অবস্থাতে দেশের জনগণ জাতীয় পার্টিকে ৩৫টি আসনে নির্বাচিত করেছে। পল্লিবন্ধু দুবার পাঁচটি করে আসনে নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করেছেন জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই জনগণের রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপি ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি। তারা চেয়েছিল জাতীয় পার্টি যেন ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় এখনো টিকে আছে আমাদের পার্টি। আগামী দিনের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি অনেক সম্ভাবনাময় দল। জাতীয় পার্টিকে ছাড়া কেউই রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারছে না।

সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এসএম ফয়সল চিশতী, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, কারি মো. হাবিবুল্লাহ বেলালী, উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, সালমা হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহজাদা, জাতীয় মহিলা পার্টির সদস্যসচিব মেহেরুন্নেসা খান হেনা পন্নি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন, জাতীয় মোটর শ্রমিক পার্টির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মীর সামছুল আলম লিপটন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভূঁইয়া সহ প্রমুখ।

সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আলমগীর সিকদার লোটন, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শেরিফা কাদের, এমএ কুদ্দুস, ড. নুরুল আজহার শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্যরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদেরের পরিচালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্যসচিব আলাউদ্দিন আহমেদ।

এর আগে সকাল ৯টায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল চত্বরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন-পায়রা উড়িয়ে দলের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর পার্টির চেয়ারম্যান শীর্ষ নেতারাসহ পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় জাতীয় পার্টির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে পল্লিবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আক্তার, আব্দুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, মেহেরুন্নেসা খান হেনা পন্নি, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, আহসান আদেলুর রহমান, মিসেস সালমা হোসেন, হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, ফখরুল আহসান শাহজাদা, বেলাল হোসেন, ইকবাল হোসেন তাপস, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল চন্দ্র দাস, হেলাল উদ্দিন, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, মিজানুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান প্রমুখ।

এদিকে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকালে শ্যামপুর বালুর মাঠে জাপার নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কাটেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বাবলা ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান সালমা হোসেন, জাপা নেতা সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জাতীয় পার্টি।

Development by: webnewsdesign.com