বাল্যবিয়ে করতে এসে কুড়িগ্রামের গণধোলাইয়ের শিকার খাদ্য কর্মকর্তা

বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২ | ৫:২৪ অপরাহ্ণ

বাল্যবিয়ে করতে এসে কুড়িগ্রামের গণধোলাইয়ের শিকার খাদ্য কর্মকর্তা
apps

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বাল্যবিয়ে করতে এসে জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও-এর রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ (৫৪)’র বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে জনতার রোষানল থেকে ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন রৌমারী সদর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু।

স্থানীয়দের দাবি, প্রথম স্ত্রী’র ভূয়া অনুমতি সনদ ও কিশোরীকে ফুসলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে আসায় ওই কর্মকর্তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে। ইসকে আব্দুলাহ দিনাজপুর সদরের সুইহারী (খালপাড়া) গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।শৌলমারী ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য ইউনূছ আলী জানান, ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় শৌলমারী এমআর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ। এর সুবাদে কেন্দ্রেই পরিচয় হয় একএসএসসি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে। পরে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল নম্বরও নেন ওই কর্মকর্তা।

এরপর বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে কল দিয়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন তিনি। প্রেমের সম্পর্ক গভীর হলে মঙ্গলবার (৯ আগষ্ট) সন্ধ্যার দিকে তিন সদস্যের বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে। বিধি মোতাবেক প্রথম স্ত্রীর ভূয়া অনুমতির প্রত্যয়নপত্র নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে আসা দুই খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (কুড়িগ্রাম সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ও নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান) বিয়েতে সাক্ষী হতে রাজি হননি। এমনকি তার কোনো স্বজনও আসেননি এবং ওই শিক্ষার্থীর বিয়ের বয়স না হওয়ায় তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এসময় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায় তাকে গণধোলাই দেয়। পরে জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু।

রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, ওই কর্মকর্তা বিয়ে করতে এসে জনতার রোষানলের শিকার হয়েছেন। পরে বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার স্ত্রী কামরুন আরার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘তাদের ঘরে দুই কন্যা সন্তান ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে এক মেয়ের বিয়েও দেওয়া হয়েছে। আরেক মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ণরত এবং ছেলে সন্তান দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি আরও জানান, তার স্বামী কিছু দিন ধরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেন এবং বিয়েতে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। এনিয়ে দিনাজপুর থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে মামলাও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার প্রথম স্ত্রীর দু’টি অপারেশনের কারনে সে শারীরিকভাবে অপারগ। ফলে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে আসছি। মেয়ের বয়স কম এটা আমার জানা ছিলনা। (১০ আগষ্ট) বুধবার কোর্টের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করবেন বলেও জানান তিনি।’ ওই কর্মকর্তার সঙ্গে বর যাত্রী হিসেবে আসা কুড়িগ্রাম সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ও নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘তিনি তাঁর এক আত্মীয়র বাড়িতে দাওয়াতের কথা বলে আমাদেরকে রৌমারীতে নিয়ে আসেন। পরে দেখি তিনি বিয়ে করার উদ্দেশ্যে এসেছেন। এসময় আমাদের দু’জনকেই বিয়ের সাক্ষী হতে বলেন। আমরা সরকারি কর্মকর্তা, বাল্য বিয়েতে সাক্ষী হতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের সাথে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

এসময় রৌমারী সদর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালুর সহযোগিতায় আমরা ঘটনাস্থল থেকে সরে আসি।’ ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘কুড়িগ্রাম সদরে ৩০ শতক জমিতে বাড়ি করে দেবেন। ১০ভরি স্বর্ণাঙ্কারসহ মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আমার কোমলমতি মেয়েকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সুবাদে তার প্রথম স্ত্রী’র ভূয়া অনুমতি সনদসহ দু’জনলোককে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে আসেন। এসময় গ্রামবাসীর সঙ্গে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।’ এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দু’দিনের ছুটিতে রয়েছেন। এ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।’

Development by: webnewsdesign.com