বাউফলে ওসির সঙ্গে আসামীদের সেলফি ও ফটোসেশন: এলাকায় তোলপাড়!

মঙ্গলবার, ০৯ মার্চ ২০২১ | ৩:২১ অপরাহ্ণ

বাউফলে ওসির সঙ্গে আসামীদের সেলফি ও ফটোসেশন: এলাকায় তোলপাড়!
apps

বাউফল থানায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালনকালে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে দ্রুত বিচার আইনের মামলাসহ ছিনতাই, মাদক ও মারামারি মামলার আসামীদের সেলফি ও ফটোসেশনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপার ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত ৭ মার্চ রবিবার রাতে আসামীরা তাদের নিজেদের ফেসবুক আইডি থেকেই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে তোলা ওই সেলফি ও ফটোসেশনের ছবি পোস্ট করেছে।

জানা গেছে, সারা দেশের ন্যায় বাউফল থানায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপনের জন্য থানা চত্বরে আলোচনা সভা ও সন্ধায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী ও দ্রুত বিচার আইনের মামলার (মামলা নম্বর ২৯, তারিখ ২৫/০২/২০২১) ১ নম্বর আসামী ফয়েজ বিশ্বাস, ২ নম্বর আসামী মামুন হাওলাদার, ৩ নম্বর আসামী কবির মৃধা, ৯ নম্বর আসামী হাসান দফাদার ও ১০ নম্বর আসামী আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন সেলফি ও ফটোসেশন করেন। ওই দিন রাতেই ওই ছবি আসামীরা তাদের নিজেদের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেন।

সূত্র জানায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ওইসব আসামীসহ ১৮-২০ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামে মিজান মৃধার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। ওই ঘটনায় মিজান মৃধা বাদি হয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী আদালতে দ্রুত বিচার আইনে একটি নালিশি পিটিশন দায়ের করলে আদালত মামলা নেয়ার জন্য বাউফল থানাকে নির্দেশ দিলে ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রেকর্ড করা হয়।

মামলার বাদি মিজানুর রহমান বলেন, দ্রুত বিচার আইনে দায়েরকৃত মামলার কোন আসামী আদালত থেকে জামিন নেয়নি। আসামীরা এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। সেই আসামীদের সাথে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সেলফি ও ফটোসেশনে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে এবং সচেতন মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়েও তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ, বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বাউফল থানায় যোগদানের পর ২০২০ সালের ২৪ মে বাউফল থানা সংলগ্ন ডাকবাংলোর সামনে একটি তোড়ণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে বাউফলের মেয়র সমর্থকদের হাতে যুবলীগ কর্মী তাপস দাসকে চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অনেক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং তাৎক্ষণিক খুনিকে পাকরাও করতে পারেনি। একই বছর ২ আগস্ট কেশবপুর ইউনিয়নে দুই পক্ষের হামলায় ইউনিয়ন যুব লীগের সহ সভাপতি রুমন তালুকদার ও তার চাচাতো ভাই যুবলীগ কর্মী ইশাত তালুকদার খুন হন। ওই ঘটনার দুই দিন আগে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। উভয় পক্ষ ওই সময় থানায় অভিযোগ করলেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এলাকাবাসিরা জানান, পুলিশ মারামারির পর পদক্ষেপ নিলে জোড়া খুনের ঘটনা হয়তো ঘটতো না। জোড়া খুনের পর কেশবপুরের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটতরাজ করা হলেও পুলিশ কোন ভূমিকা নেয়নি। চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধায় মেয়র সমর্থকরা বাউফল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক ও বাউফল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য হারুন অর রশিদকে কুপিয়ে গুরুতর জখম হয়। এঘটনায় ইব্রাহিম ফারুকের বাম চোখ নস্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সে বর্তমানে ভারতে রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেন না। ফলে বাউফলে দিন দিন আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেই চলেছে।

এ ব্যপারে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ৭ মার্চ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই তার সাথে ছবি ও সেলফি তুলেছেন। তাদের মধ্যে কে আসামী আর কে আসামী না তা আমি চিনতে পারিনি। উপজেলায় চুরি,ডাকাতিসহ আইন-শৃংখলার অবনতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়।

Development by: webnewsdesign.com