সরকার গত মাসে মূল্যস্ফীতির হার প্রকাশ করেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত মাসে অন্তত ৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর আগে এই হার ছিল ৬.৭ শতাংশ। এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় নিম্নআয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ চরম বিপর্যয়ে দিনযাপন করছেন।
নিম্নবিত্তের অনেক মানুষ এই সংকটের ফলে দরিদ্রের কাতারে নেমে এসেছেন। মধ্যবিত্তরা কাটাচ্ছেন স্মরণকালের কঠিন সময়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক মাসে ভাঙানোর হার বেড়েছে কিন্তু সরকারের বিক্রয়ের হার অনেক কমেছে। এতে সরকারি তহবিলের স্থিতিও কমবে। আর্থিক সংকটের আরও প্রমাণ হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাম্প্রতিককালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
বর্তমানে সঞ্চিত তহবিল দিয়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মূল উৎস রেমিট্যান্স গত কয়েক মাসে পড়তির দিকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের রপ্তানি আয়ের মূল উৎস তৈরি পোশাক রপ্তানিও ব্যাহত হবে। এতে আমাদের রপ্তানি আয় কমবে। এটিও রিজার্ভ তহবিলের ঘাটতি হওয়ার একটি কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এদিকে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
এই সংকটকালে সরকারকে চাল, চিনির মতো পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। তা ছাড়া বর্তমান সরকার দেশের দরিদ্র মানুষের একটি বড় অংশকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের আওতায় এনে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, এতেও সরকারি ব্যয় বেড়ে চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চলতি বাজেটে ধার্যকৃত তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে এখনো সক্ষম হয়নি। সরকার আইএমএফ, এডিবির কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করছে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমেও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে অর্থনীতি সাময়িকভাবে সংকট কাটিয়ে উঠলেও ভবিষ্যতের জন্য বড় বিপর্যয় তৈরি হতে পারে। কেননা যত সহজ শর্তই হোক ঋণের টাকা সময়মতো পরিশোধ করার চাপ থাকবে। এতে বাজেটের ওপর চাপ বাড়বে এবং উন্নয়ন সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ কমে আসবে। অথচ বর্তমানে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানো জরুরি।
করোনাকালে এই সামর্থ্য থাকায় সরকার বিপর্যয় সামাল দিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই সামর্থ্য অনেক হ্রাস পেয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে আরও বড় বড় মহামারীর দুর্যোগ আসতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও বাড়তে থাকবে। এই দুই বিপদের কথা স্মরণ রেখে বাংলাদেশকে একটি আপৎকালীন তহবিল গঠন করতে হবে।
যেহেতু সংকটগুলো বৈশ্বিক তাই ভবিষ্যতে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ এখনকার মতো থাকবে না। আমাদের মনে হয় বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাস্তবতা মাথায় রেখে সরকারের উচিত হবে সঠিক নীতি প্রণয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণ। তা হলেই আমাদের পক্ষে সংকট মোকাবিলা করে নিজেদের অগ্রগতি বজায় রাখা সম্ভব হবে।
Development by: webnewsdesign.com