বরিশালে যুবককে বলৎকার করার অভিযোগে কারাগারে যাওয়া আইনজীবী বাদীর সঙ্গে মিমাংসার আশ্বাস দিয়ে জামিনে বেরিয়ে ভোল পাল্টে মিমাংসা না করে উল্টো ভূক্তভোগী যুবককে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসানো চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি মামলা পরিচালনা করানোর জন্য পাচ্ছে না কোন আইনজীবীর সহায়তা। তাকে বিভিন্ন সময় নানা লোক দিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভীত হয়ে ওই যুবক পালিয়ে বেরাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এতে করে সঠিক বিচার না পাওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী যুবক।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন- নগরীর মুসলিম গোরস্থান রোড এলাকার বাসিন্দা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য শামসুল হক। ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে বলৎকারের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন নগরীর কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা এক যুবক।
ওই মামলায় গ্রেফতারের পর ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর আদালতের বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে শামসুল হক আইনজীবীর মাধ্যমে মিমাংসার আশ্বাস দিয়ে জামিন লাভ করেন।
ভুক্তভোগী যুবক সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন- অভিযুক্ত শামসুল হক আইনজীবীর মাধ্যমে মিমাংসার আশ্বাস দিয়ে জামিন লাভ করেন। জামিনে বেরিয়েই তিনি ভোল পাল্টে ফেলেছেন। শামসুল হক মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন আমি নাকি তাকে হুমকি দিচ্ছি। কিন্তু তিনি জামিনে বের হওয়ার পর তার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগই হয়নি।
তিনি মিমাংসার আশ্বাস দিলেও বিষয়টি মিমাংসা না করে উল্টো তাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমনকি মামলার চার্জশীট দাখিলের পরে আদালতের মামলা পরিচালনা করানোর জন্য আইনজীবীদের কাছে গেলে সকালে তারা রাজি হলেও বিকেলে মামলা লড়তে নারাজ হয়। আবার আদালত পাড়ায় হাজিরার জন্য গেলে ওই যুবক নানা কটুক্তি ও হুমকি দেয় অভিযুক্ত শামসুল হকের লোকজন।
ওই যুবক যে আইনজীবীর কাছেই যায় সেই আইনজীবীকে অদৃশ্য ক্ষমতা বলে হাত করে ফেলে অভিযুক্ত শামসুল হক। এতে করে ভীত হয়ে সঠিক বিচার না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী যুবক। ওই যুবক একজন প্রবাসী ছিলেন কিন্তু এই মামলার কারনে সে বিদেশ যেতে পারেনি। ফলে তার ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ওই যুবককে অনেকে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ব্যক্তি বললেও তিনি তা অস্বীকার করে নিজেকে ছেলে দাবী করেছেন। তার দাবি ৮ মাস ধরে তার সঙ্গে জোর করে অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে আসছেন আইনজীবী শামসুল হক। এমন একটি ভিডিও ক্লিপও তিনি পুলিশকে দিয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করার পর ওই রাতেই আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে চার্জশীট গঠন করে আদালতের পেশ করা হয়েছে।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা এ ঘটনাকে একজন সিনিয়র আইনজীবীর নৈতিক অবক্ষয় দাবি করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি মামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ওই আইনজীবীর সনদ বাতিলের দাবি জানান।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মাসউদ বাবলু জানান, পুলিশের তদন্তে ওই আইনজীবীর অপরাধ প্রমাণিত হলে বিষয়টি নিন্দনীয় হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে এর দায় ব্যক্তির ওপর বর্তায়। আইনজীবী সমিতি কোনোভাবেই এর দায় নেবে না।
তবে যুবকের সঙ্গে অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আইনজীবী শামসুল হক।
এদিকে আইনজীবী শামসুল হককে দ্রুত সঠিক বিচারের আওতা আনতে ও নিজ কর্মস্থলে ফিরে যেতে আাদলতের বিচারকের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী যুবক।
Development by: webnewsdesign.com