বরিশালের গৌড়নদীতে চক্ষু চিকিৎসার নামে প্রতারনা: হাতিয়ে নিয়েছে অর্থ

শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০ | ১:৪৯ অপরাহ্ণ

বরিশালের গৌড়নদীতে চক্ষু চিকিৎসার নামে প্রতারনা: হাতিয়ে নিয়েছে অর্থ
apps

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা গেটে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ চক্ষু হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে রিয়াদ চশমা ঘরের মালিক নিরীহ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনও ভুক্তভোগীরা অবৈধ হাসপাতাল ও ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বরিশাল সিভিল সার্জন, গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, গৌরনদী মডেল থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে।

স্থানীয় লোকজন, ভুক্তভোগী, ক্ষতিগ্রস্থ রোগীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মশাং গ্রামের মাহমুদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি গৌরনদী পৌর সভা থেকে রিয়াদ চশমা ঘর অ্যান্ড কসমেটিকস নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স নেন। ওই লাইসেন্স দিয়ে গৌরনদী উপজেলা সদরের উপজেলা গেটে কিছু চশমা ও কসমেটিস ব্যবসা শুরু করে। কিছু দিন যেতে না যেতে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে লিফলেট ও মাইকিং করে বরিশাল ইসলামী চক্ষু হাসপাতালের শাখা হিসেবে প্রচারণা চালায়। প্রচারণায় বলা হয়, বরিশাল ইসলামি চক্ষু হাসপাতালের শাখা ও ভিশন সেন্টার গৌরনদী উপজেলা গেটের সামনে রিয়াদ চশমা ঘরে কম্পিটর ও স্লিটল্যাম্পের মাধ্যমে চক্ষু ও মাথা ব্যাথা রোগী দেখা এবং নেত্রনালী, চোখে ছানি পড়া অপরেশন করা হয়। বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক দ্বারা রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়।

সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গৌরনদী উপজেলা সদরের উপজেলা গেটে রিয়াদ চশমা ঘর নামে একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন যাবত ভুয়া চিকিৎসক দ্বারা সাধারণ মানুষকে চক্ষু চিকিৎসা দেয়ার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংক। প্রতিষ্ঠানের চোখের পাওয়ার নির্নয়কারী (রিফ্রাকসোনিস্ট) রুবেল সোম শান্তকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে রোগীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে।

কিন্তু চোখের পাওয়ার নির্ণয়কারী (রিফ্রাকসোনিস্ট) রুবেল সোমের চিকিৎসক হিসেবে বিএমডিসির কোন সনদ নেই। ভুয়া চিকিৎসককে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রচার করে রোগী আকৃষ্ট করে প্রতারণা করা হচ্ছে। শুধুই তাই নয়, রিয়াদ চশমা ঘর বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ইসলামি চক্ষু হাসপাতালের শাখা হিসেবে পরিচয় দিয়ে চোখে অস্ত্রপচারের রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। রিয়াদ চশমা ঘরে অবৈধভাবে মেডিসিন বিক্রি করে আসছে।

সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী মেডিসিন বিক্র করতে হলে ট্রেড ও ড্রাগ লাইসেন্স প্রয়োজন। কিন্তু রিয়াদ চশমা ঘর মেডিসিন বিক্রির জন্য কোন ট্রেড লাইসেন্স বা ড্রাগ লাইসেন্স নাই। স্থানীয়রা ইসলামি চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বরিশালের ইসলামি চক্ষু হাসপাতালের গৌরনদীতে কোন শাখার নেই বলে জানান। প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ অবৈধ। ওই হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসা কিংবা চক্ষু অপারেশনের কোন বৈধতা নেই। চক্ষু চিকিৎসার নামে সাধারণ রোগীদেরকে প্রতারণার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুয়া হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রতারনার হাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।

চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রুনু আক্তারকে (৩৮) রুবেল সোম চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে পরামর্শপত্র দিয়েছেন। ওই পরামর্শ পত্রে বরিশাল চক্ষু হাসপাতালের প্যাড ব্যবহার করা হয়। রুনু আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ভুয়া ডাক্তর রুবেল চিকিৎসার নামে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। তার পরামর্শ অনুযায়ি ওষুধ খেয়ে আমার আরও ক্ষতি হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম (৫০) ও সুজন হাওলাদার (৩৩) অভিযোগ করে বলেন, চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে মাইকিং শুনে গিয়ে সেবা নেই। পরে জানতে পারি রুবেল সোম আসলে চোখের পাওয়ার নির্ণয়কারী। ইসলামী হাসপাতালের শাখার নামে মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে।

গৌরনদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এখতিয়ারভুক্ত। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহায়তা চাইলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে লিখিত পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কোন অবৈধ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ নেই, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ বলেন, শীঘ্রই টিম গঠন করে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে।’

Development by: webnewsdesign.com