বরগুনায় চোখের সামনেই বাবাকে কুপিয়ে হত্যা, পরীক্ষার হলে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে সানজিদা

বুধবার, ০৩ মে ২০২৩ | ৮:৪৭ অপরাহ্ণ

বরগুনায় চোখের সামনেই বাবাকে কুপিয়ে হত্যা, পরীক্ষার হলে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে সানজিদা
বরগুনায় চোখের সামনেই বাবাকে কুপিয়ে হত্যা, পরীক্ষার হলে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে সানজিদা
apps

চোখের সামনেই বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে উল্লাস করেছে সন্ত্রাসীরা। বাবার মৃত্যুর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে মেয়ে। তারপরও বুধবার সকালে বাবার মরদেহ মর্গে রেখে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় বসে সানজিদা। পরীক্ষার হলেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।

ঘটনাটি বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের। ওই পরীক্ষার্থীর নাম সানজিদা ইসলাম রিয়া (১৭)। সে পাকুরগাছিয়া এলাকার নিহত সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পনু আকনের মেয়ে। সানজিদা একই ইউনিয়নের জর্জিয়া কিন্ডারগার্টেন থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের পাকুরগাছিয়া এলাকায় নির্বাচনী প্রতিহিংসার জেরে দুই পক্ষের মধ্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে স্ত্রী ছবি আকতার, ছেলে হৃদয়, মেয়ে সানজিদার সামনেই কুপিয়ে-পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শফিকুল ইসলাম পনু আকনকে। এ ঘটনায় দুইপক্ষের ৬ জন গুরুতর জখম হন।

আহতরা মুমূর্ষু অবস্থায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পনু আকনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার দুপুর আড়াইটায় বরগুনা থেকে নিজ বাড়ি পাকুরগাছিয়া নেওয়া হয়েছে। বুধবার আসর জানাজা হবে।

সানজিদা জানায়, সকালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে বাবাকে শেষ দেখা দেখে আয়লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ করি। আমার বাবার রক্তাক্ত মুখটি আমার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠে। ভালো লিখতে পারিনি। আমার বাবাকে আমাদের চোখের সামনেই কুপিয়ে পিটিয়ে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।

সে বলে- আমার বাবা আমাদের নিয়ে রাতে ভাত খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ দক্ষিণ দিক দিয়ে রামদা ছেনা চলা টেঁটা নিয়ে আমাদের ঘরে ঢুকে বাবাকে টানাহেঁচড়া করে ঘর থেকে বের করে কোপাতে থাকে দুর্বৃত্তরা। বাবার চিৎকারে আকাশ ভারি হলেও আমি মা ভাই ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেনি। আমার বাবা পানির জন্য চিৎকার করলে বাবার মুখে প্রস্রাব করে দেয় সন্ত্রাসীরা।

ছবি আক্তার বলেন, মঙ্গলবার রাতে ২০ থেকে ২৫ জন লোক রামদা, টেঁটা দিয়ে আমাদের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও ওরা মারধর করে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

আয়লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ধীমান চন্দ্র রায় বলেন, জর্জিয়া কিন্ডারগার্টেনের পরীক্ষার্থী সানজিদা আমাদের এখানে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা তাকে যথেষ্ট মানসিক সাপোর্ট দিয়েছি। ভালোভাবেই পরীক্ষা দিয়েছে সানজিদা।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ইতোমধ্যে উভয়পক্ষের ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেফতার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী কোন কোন পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছে- এমন অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Development by: webnewsdesign.com