ফের বন্যার শঙ্কা সিলেটে

মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২ | ১:৪১ অপরাহ্ণ

ফের বন্যার শঙ্কা সিলেটে
apps

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এখনো সামাল দিতে পারেনি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেট। বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামলেও এখনো অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে আবার বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে এ জেলায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী কয়েক দিন সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে। ভারতে বৃষ্টি হলে সিলেটের দিকে পাহাড়ি ঢল নামবে। এতে আবারও পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। তবে আজ সকাল থেকে হওয়া বৃষ্টিতে জেলার নদ-নদীতে পানির উচ্চতা বাড়েনি বরং কিছুটা কমেছে।

সিলেটে আজ সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে আজ সকালে নগরের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। নগরের মাছুদীঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা মারজান আহমদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বন্যায় ঘরে কোমরসমান পানি ছিল।

সে সময় ঘর ছেড়ে এক সপ্তাহ স্বজনের বাসায় অবস্থান করেছিলাম। সে সময় বাড়ির আসবাব থেকে শুরু করে লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। এখন বাড়ি ফিরেছি প্রায় পাঁচ দিন হলো। ফের বৃষ্টি দেখে মনে শঙ্কা জাগছে। পানি বাড়লে আবার কী হবে?’

নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যান। দুই দিন আগে বাড়ি ফিরেছেন। তবে এখনো পানির কারণে কাজে যেতে পারছেন না। বাড়ি ফিরেও আয়-রোজগার না থাকায় সংসার চলছে না। এর মধ্যে ফের পানি বাড়লে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যেতে হবে। সেখানে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হবে।

সিলেটে গত দেড় মাসের ব্যবধানে দুই দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ১২ মে থেকে সিলেট শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। সে দফায় প্রায় ১০ দিন পর পানি নেমে যায়। কিন্তু ১৪ জুন থেকে টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলা প্রায় তিন দিন সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। এমন অবস্থায় জরুরিভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে উদ্ধার তৎপরতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেয় বাহিনীটি। এর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে আজ সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বানভাসিদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার তুলনায় আজ সকাল নয়টায় পানি দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমেছে। নদীর ওই অংশে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ সকাল নয়টার মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৭ মিলিমিটার। নদীর সিলেট পয়েন্টে গতকালের তুলনায় পানি কমেছে একই পরিমাণে। আজ সকাল নয়টা পর্যন্ত সিলেট পয়েন্টে পানি ছিল ১০ দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার। সিলেট পয়েন্ট এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬ মিলিমিটার।

কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। সেখানে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানি ছিল ১৬ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। আজ সকাল ৯টায় সেখানে পানি ছিল ১৬ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার। নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে পানি ছিল ১৩ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। নদীর শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক শূন্য ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সকাল নয়টায় ওই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ছাড়া লুভা নদীর পানি লুভা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর বাইরে বেড়েছে লুভা, সারি নদী ও ধলাই নদের পানি। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০ দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার থাকলেও আজ সকাল নয়টায় সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ১১ দশমিক ১২ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। ধলাই নদীর ইসলামপুর পয়েন্টে পানি গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার থাকলেও আজ সকাল ৯টায় সেটি ১০ দশমিক শূন্য ৩ সেন্টিমিটারে পৌঁছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আগামী কয় দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এতে পানি বৃদ্ধি পাবে কি না, আগেই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ভারতে বৃষ্টি হলে সিলেটে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে। এতে ফের বন্যার শঙ্কা আছে।

Development by: webnewsdesign.com