বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে মন্দা ও নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষ লোকজনের চাহিদা বেড়েই চলেছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই গত আড়াই বছরে প্রযুক্তির ওপর তাদের নির্ভরতা ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু দক্ষ কর্মী না পাওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা, সফটওয়্যার উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন সেবা বা ডেটা বিশ্লেষণ কাজের অনেক পদ খালি রয়ে গেছে। সম্প্রতি কারিগরি প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম ‘কোডিংডোজো’ প্রযুক্তি খাতের নিয়োগসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বর্তমানে কোন কোন প্রযুক্তিকাজের চাহিদা বেড়েছে, তা প্রকাশ করেছে। এ তালিকা তৈরি করতে কোডিংডোজোর পক্ষ থেকে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি অনুসন্ধানের প্ল্যাটফর্ম গ্লাসডোরের সেরা ৫০টি চাকরির তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখে নিন কোডিংডোজোর করা সেই তালিকা—
তথ্য নিরাপত্তা প্রকৌশলী:
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন পদ এখন তথ্য নিরাপত্তা প্রকৌশলী বা ইনফরমেশন সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার। করোনা মহামারির সময় থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্লাউড প্রযুক্তির ওপর জোর দিয়েছে। ফলে সাইবার হামলার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় তথ্য নিরাপত্তা বিষয়ে দক্ষ কর্মীর চাহিদা এখন তুঙ্গে। এটি মূলত মধ্যপর্যায় থেকে জ্যেষ্ঠ কর্মীর পদ, যেখানে একজন কর্মীকে প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ও সফটওয়্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিস্টেম ডিজাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। এ পদে দক্ষ হতে হলে লিনাক্স, ইউনিক্স, জাভা সিস্টেমে দক্ষতার পাশাপাশি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয়। এ পদে গড় বেতন ১ লাখ ১৯ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি।
ফুল-স্ট্যাক প্রকৌশলী:
বর্তমানে ডিজিটাল সেবা ও পণ্য তৈরির সঙ্গে যুক্ত যেকোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য সফটওয়্যার ও ওয়েব ডেভেলপার পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই দক্ষ ফুল-স্ট্যাক প্রকৌশলীদের বিশাল চাহিদা রয়েছে। কারণ এ পেশায় কর্মীদের ফ্রন্টএন্ড (ওয়েবসাইট বা ইউআই) এবং ব্যাকএন্ড (সার্ভার) উভয় কাজই করতে পারেন। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এখন এমন কর্মী নিয়োগ দিতে চান, যিনি সব ধরনের কাজ পারেন। তাঁরা আলাদা করে ফ্রন্টএন্ড বা ব্যাকএন্ডের জন্য আলাদা প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে চান না। যাঁরা ফুল-স্ট্যাক প্রকৌশলী হিসেবে দক্ষ তাঁরা দ্রুত আয় বাড়িয়ে নিতে পারেন ও প্রতিষ্ঠানের বড় পদে যেতে পারেন।
ডেটাবিজ্ঞানী:
বর্তমানে চাহিদাসম্পন্ন প্রযুক্তি দক্ষতার ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ডেটাবিজ্ঞানী। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান মেশিন লার্নিং ও ডেটা বিশ্লেষণে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। গ্রাহক তথ্য বিশ্লেষণ ডেটাবিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেওয়ার বিকল্প নেই। এ কাজে একেবারে প্রাথমিক স্তরের কর্মীরাও বছরে ৯০ হাজার ডলারের বেশি আয় করেন। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়লে তাঁদের আয়ও দ্রুত বাড়তে থাকে।
মেশিন লার্নিং প্রকৌশলী:
একজন মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার হলেন মাঝারি থেকে জ্যেষ্ঠ স্তরের ডেটাবিজ্ঞানী, যিনি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে বিশেষজ্ঞ। বছরে ১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে ৩ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করেন তাঁরা। প্রযুক্তি দক্ষতার দিক থেকে তাঁদের চাহিদা আরও বাড়ছে।
জাভা ডেভেলপার:
জাভা এখনো জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা। কোডিংডোজোরের ২০২২ সালের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার তালিকায়ও রয়েছে এটি। সফটওয়্যার নির্মাতারা এখনো এ ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, ডেস্কটপ অ্যাপ, স্মার্ট টিভিসহ নানা ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গ্লাসডোরে ৮০ হাজারের বেশি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি রয়েছে জাভা ডেভেলপারের। যুক্তরাষ্ট্রের স্যালারি ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বছরে ১ লাখ ১৪ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি বেতন পান জাভা ডেভেলপার।
ডেটা প্রকৌশলী:
ডেটা প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, বাছাই ও বিতরণ করতে সহায়তা করেন। এটি এমন একটি পদ, যেটি মূলত মেশিন লার্নিং প্রকৌশলীর কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ডেটা প্রকৌশলীদের বেতন বছরে ১ লাখ ১৬ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। ডেটা প্রকৌশলী কয়েক ধরনের কাজ করতে পারেন বলে এ পদের চাহিদা বাড়ছে।
সেলসফোর্স প্রকৌশলী:
সেলসফোর্স হলো অত্যন্ত জনপ্রিয় গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা (সিআরএম) প্ল্যাটফর্ম, যা প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহক ও সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। সেলসফোর্স প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানের সিআরএমের প্রয়োজনে থার্ড পার্টি অ্যাপ যুক্ত করা বা সফটওয়্যার ত্রুটি দূর করতে কাজ করেন। সেলসফোর্স প্রকৌশলীদের জাভা বা সিশার্পে ভালো দক্ষ হতে হয়। বছরে ১ লাখ ৫ হাজারের মার্কিন ডলারের বেশি বেতন পান একজন সেলসফোর্স প্রকৌশলী।
অটোমেশন প্রকৌশলী:
প্রতিষ্ঠানের যে সমস্যাগুলো অটোমেশনের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে, তা ঠিক করতে অটোমেশন প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল দলের সঙ্গে কাজ করেন। অটোমেশন এমন একটি ক্ষেত্র, যার কাজ গুণমান নিশ্চিত করা। অটোমেশন প্রকৌশলীকে তাই অটোমেশন পরীক্ষার সফটওয়্যার যেমন ল্যাম্বডাটেস্ট, রেইনফরেস্টের মতো বিষয়ে দক্ষ হতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান অটোমেশন নিয়ে কাজ শুরু করায় এ পদের চাহিদা এখন বাড়ছে।
ক্লাউড প্রকৌশলী:
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্লাউড বিশেষজ্ঞরা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। ঘরে বসে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের অ্যাপ ও কর্মকর্তাদের কাজের বিষয়গুলো ক্লাউডে রাখতে শুরু করেছে। ক্লাউড প্রকৌশলীদের সাধারণত লিনাক্স, মাইএসকিউএল, জাভা, পাইথনের মতো প্রোগ্রামিং সম্পর্কে দক্ষ হতে হয়। এর পাশাপাশি আমাজন, গুগল ক্লাউড বা মাইক্রোসফট আজুরের মতো জ্ঞানও প্রয়োজন হয়।
ব্যাকএন্ড প্রকৌশলী:
ব্যাকএন্ড প্রকৌশলী মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরির সব খুঁটিনাটি কাজ করেন। নতুন কোনো পণ্য বা সেবা তৈরির কাজেও তিনি যুক্ত থাকেন। বর্তমানে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য ব্যাকএন্ড প্রকৌশলীদের ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে।
সূত্র: জেডডিনেট
Development by: webnewsdesign.com