প্রতি মাসে গড়ে দশটি করে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হচ্ছে

শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৬:৩২ অপরাহ্ণ

প্রতি মাসে গড়ে দশটি করে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হচ্ছে
apps

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ছিল তিনশ’রও বেশি। ২০২০ সালের চলতি মাসে এসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২-তে। হিসেব করলে গড়ে প্রতি মাসে বন্ধ হচ্ছে দশটি করে প্রেক্ষাগৃহ। এরমধ্যে নতুন সিনেমা হল নির্মাণের খবর যেন বিরল ঘটনা! ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর ও নারায়াণগঞ্জে সবচেয়ে বেশি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। এছাড়া ফরিদপুর, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, বগুড়াসহ বেশিরভাগ জেলাতে একটি করে প্রেক্ষাগৃহ চালু রয়েছে।

অনেক সময় সেসব হলে শো চলে ঢিলেঢালাভাবে। দেশের ২৩টি জেলায় কোনো প্রেক্ষাগৃহ চালু নেই। এরমধ্যে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সীগঞ্জ, ঝালকাঠি, নরসিংদী, বরগুনা, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট অন্যতম।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্সের কোনোটাই নেই। অথচ পর্যটনখাতের সঙ্গে এক হয়ে এই জেলায় ভালো মানের বেশ কয়েকটি সিনেমা হল করা যেত।

পাল্টা প্রশ্ন এখানেই, সিনেমা হলে চালাব কী? চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতাদের মতে, সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তির সংখ্যা দিনে দিনে কমছেই। মাসে দু-তিনটা করে মুক্তি পাচ্ছে, সেগুলোরও মান নিয়ে প্রশ্ন! দর্শক এখন ভালো সিনেমা না হলে প্রেক্ষাগৃহে ভিড়ে না। লোকসান গুনতে গুনতে হতাশ হয়ে পড়ছেন প্রযোজকেরা। আয় নিয়ে সন্তুষ্ট হতে না পেরে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা। দেশের বাইরের ছবি প্রদর্শনে রয়েছে কঠোর নিয়ম। লোকসান গুনতে গুনতে যেন পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘২০০১-০২ সালেও সারা দেশে প্রায় ১ হাজার ৩০০ প্রেক্ষাগৃহ ছিল। বর্তমানে এ সংখ্যা ৬০টি। সিনেমা হলের মান বাড়ারও সুযোগ নেই। কারণ এখানে ভালো সিনেমা হচ্ছে না। ভালো সিনেমা হলে সব সম্ভব।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে অশ্লীল সিনেমা নির্মাণের কারণে সম্ভ্রান্ত পরিবার দেশীয় সিনেমাবিমুখ হয়। ফলে সিনেমা হল হারায় মধ্য থেকে উচ্চ বিত্তের দর্শক। তবে ভালো ছবি পেলে দর্শক যে আবার হলমুখী হয় তার অন্যতম উদাহরণ ‘মনপুরা’ ছবিটি। দেশের বিশাল মধ্যবিত্ত দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করেন ছবিটি দেখতে।

নিয়মিত হলের পাশাপাশি ৩৫টির মতো মৌসুম ভিত্তিক হলও রয়েছে। ভালো সিনেমা এলে এবং বিভিন্ন উত্সবে খুলে এসব প্রেক্ষাগৃহের তালা। প্রদর্শনীতে অনিয়মিত হয়ে পড়া প্রেক্ষাগৃহগুলোর মধ্যে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজমহল, বগুড়ার ধুনটের ক্লিওপেট্রা, নাটোরের ছায়াবাণী, পাতার হাটের রাজলক্ষ্মী, ফুলবাড়িয়ার উর্বশী, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার আলীম, ঠাকুরগাঁওয়ের বলাকা, লালমনিরহাটের লালমনি, লক্ষ্মীপুরের হ্যাপী ইত্যাদি। জানা যায়, সিনেমা হলে ব্যয় বহন করতে না পেরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফেনীর দুটি হলে দর্শকের দেখা নেই। হলের ভিতর পর্যাপ্ত সিট থাকলেও তা ভাঙাচোরা, ফোম উঠে গেছে। নেই দর্শকদের জন্য স্বাস্থ্যকর টয়লেটের ব্যবস্থা।

কানন সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক আরজু মিয়া বলেন, ‘এখন আর আগের মতো ব্যবসা নেই, কোনোরকম পেটে-ভাতে বেঁচে থাকা।’

দর্শকের অভাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রায় সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। বছর পাঁচেক আগে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ছবির কারণে ঝুমুর সিনেমা হলে তালা পড়ে যায়। নতুন করে ঘষেমেজে হলটি ‘সুগন্ধা’ নামে পুনরায় চালু করা হয়ে জানুয়ারিতে।

হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘হলে শুধু দেশের ছবি চালাই, তাহলে সিনেমা হল চালু রাখা মুশকিল হবে। কারণ, দেশের ছবির প্রয়োজনমতো সাপ্লাই নেই। সিনেমা হল চালাতে যে পরিমাণ নতুন ছবি দরকার তা তো নির্মিত হচ্ছে না। তাই দেশের ছবির পাশাপাশি বিদেশি ছবিও চালাতে চাই। তবে সর্বপ্রথম দেশীয় ছবির প্রাধান্য থাকবে।’

অনেক সিনেমা হল মালিকরা বলছেন, ভালো মানের চলচ্চিত্র তৈরি না হওয়ায় দর্শকরা হলে আসছেন না। এছাড়া স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে ঘরে বসে পছন্দের ছবি দেখার সুযোগ থাকায় হলে সিনেমা দেখার আগ্রহ কমে গেছে। দর্শকদের সিনেমা হলমুখী করতে হলে ভালো মানের চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে ভালো মানের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ভালো মানের সিনেমা হলের সঙ্কটকেও চলচ্চিত্র ব্যবসার ‘অপমৃত্যু’র জন্য দায়ী করছেন দর্শকরা।

ভোলা শহরের রূপসী সিনেমা হলের মালিক কচি মিয়া জানান, এফডিসি থেকে লোকজন এসে কিছু মাস আগে ভোলার সিনেমা হলগুলো পরিদর্শন করে গেছেন। সরকার অনুদান দিলে ও প্রতিমাসে ভালো সিনেমা তৈরি হলে সিনেমামুখি হবে দর্শক—এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তিনি।

Development by: webnewsdesign.com