প্রতি কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা মেরামতে ৫৮ লাখ টাকা!

শনিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২১ | ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

প্রতি কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা মেরামতে ৫৮ লাখ টাকা!
apps

প্রতি কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা মেরামতের জন্য ৫৮ লাখ টাকার আবদার করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

একটি প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ ১৮১ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত কাজের জন্য ১০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৫৮ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্পের জন্য নতুন যানবাহন কেনারও আবদার করা হয়েছে।

জানা গেছে, যেহেতু বন্যা ও আম্পান প্রকল্পে দেশব্যাপী পুনর্বাসনের জন্য এরইমধ্যে প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, তাছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা মেরামত কাজ সম্পন্ন করা আর্থিক ও পরিকল্পনা শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে দাবি কমিশনের। এ জন্য প্রকল্পটি বাদ দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

‘টাঙ্গাইল জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশন বরাবর পাঠিয়েছে এলজিইডি। প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এই প্রকল্প নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তা মেরামতের ব্যয়সহ অন্যান্য খাতের ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৯৯ কোটি ৯৯ লাখ ৭৭ হাজার। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে এলজিইডি।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান বলেন, এলজিইডির প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হয়েছে। সভায় প্রকল্পের আওতায় প্রতি কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক মেরামতে ৫৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এটা কমাতে বলা হয়েছে। আরও কিছু বিষয় সংশোধন করতে বলা হয়েছে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, যাতে করে গ্রামে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সে কারণে প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম ২৩ দশমিক ০৪ কি.মি উপজেলা সড়ক, ৭০ দশমিক ১৩ কি.মি ইউনিয়ন সড়ক, ৫৯৬ দশমিক ২৫ কি.মি গ্রাম সড়ক, গ্রাম সড়কে ৭৪৭ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট, ২৫৫ মিটার ইউনিয়ন সড়কে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ। ২৬টি বাজার নির্মাণসহ ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ব্লক দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় ব্যক্তিগত পরামর্শক খাতে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার আবদার করা হয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা, পরামর্শকের ক্যাটাগরি অনুযায়ী নাম, সংখ্যা, জনমাস, মাসিক বেতন, সম্মানীর বিস্তারিত তথ্য নেই। এই সকল তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় একটি জিপ, ২টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ১২টি রোড রোলার, ১৫টি মোটরসাইকেল এবং ৬টি বিটুনিমন স্প্রেয়ার মেশিন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সব যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির আদৌ প্রয়োজন আছে কি না জানা প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন।

প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ১ কোটি ২৫ লাখ, অভ্যান্তরীণ প্রশিক্ষণ খাতে ৮ লাখ টাকা থোক হিসেবে সংস্থান রাখা হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সংখ্যা বা সময় উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়টি আরও আলোচনার জন্য এলজিইডিকে নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

হালনাগাদ রেট সিডিউলের আলোকে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে ৭ কোটি টাকা এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে ৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মানব সম্পদ উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ ইউনিট) হাবিবুল আজিজ বলেন, সড়ক মেরামতের ব্যয় একটা মান অনুযায়ী ধরা হয়েছে। তারপরও পরিকল্পনা কমিশন কোন পর্যবেক্ষণ থাকলে আমরা সেইভাবেই প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করবো। আমরা একটা রেট সিডিউল মেনেই ডিপিপি তৈরি করে থাকি।

এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি, গোপালপুর, ঘাটাইল, ধনবাড়ী, নাগরপুর, বাসাইল, ভূ্ঞাপুর, মির্জাপুর, মধুপুর, সখিপুর, দেলদুয়ার ও সদরে বাস্তবায়ন হবে। গ্রামীণ জনগণের জন্য গ্রাম, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়া প্রধান উদ্দেশ্য। গ্রামীণ অবকাঠামো বিশেষ করে রাস্তা, ব্রিজ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের সঞ্চার প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

Development by: webnewsdesign.com