প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার টাকায় ভাগ বসালেন মাটি কাটা ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১:৩৩ অপরাহ্ণ

প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার টাকায় ভাগ বসালেন মাটি কাটা ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল
apps

রাজশাহীর মাটিকাঁটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নয়ন প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকায় ভাগ বসিয়েছেন বলে তার এলাকাতে অভিযোগ উঠেছে। এক বছরের জন্য প্রতিবন্ধীরা ৯ হাজার টাকা ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।

মাথাপিছু বাকি চার হাজার টাকা নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন চেয়ারম্যান নয়ন। এ সংক্রান্ত সকল প্রমাণাদি কাছে সংরক্ষিত আছে।

অভিযুক্ত এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম রুহুল আমিন নয়ন। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তবে প্রয়াত চেয়ারম্যান আলী আজম তৌহিদ মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। নয়ন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বলেও জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মাটিকাটা ইউপির উপকারভোগী প্রতিবন্ধীদের মাঝে সরকার প্রদত্ত প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ইউনিয়নে উপকারভোগী প্রতিবন্ধী প্রায় ৩০০ জন। এর মধ্যে এক নম্বর ওয়ার্ডে উপকারভোগী প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৫৪ জন। প্রতিবন্ধীদের মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা দেয়া হয়। আর গত জুলাইয়ে প্রতিবন্ধীদের এক বছরের টাকা এক সঙ্গে দেয়া হয়েছে।

 

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবন্ধীরা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে গিয়ে নিজেরাই ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা। কিন্তু মাটিকাটা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নয়ন নিজেই তার এক নম্বর ওয়ার্ডের সকল প্রতিবন্ধীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের স্বাক্ষরসহ প্রতিবন্ধী ভাতার বই সংগ্রহ করে আনেন।

এরপর ব্যাংক থেকে প্রত্যেক প্রতিবন্ধীর জন্য ৯ হাজার টাকা করে তোলা হলেও তাদের দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। বাকি চার হাজার টাকা চেয়ারম্যান রেখে দিয়েছেন নিজের পকেটেই। এভাবে এক নম্বর ওয়ার্ডের ৫৪ জন প্রতিবন্ধীর দুই লাখ ১৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়ন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকরা কিন্তু ভাতা বাতিল করে দেয়ার ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করতে পারছেন না।জনমনে একটাই প্রশ্ন যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধীদের ভাগ্যে উন্নয়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে সেখানে রুহুল আমিন নয়নের মতো কিছু ব্যক্তি সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতির পদে থেকেও প্রতিবন্ধীদের টাকা মেরে খাচ্ছে এই এই সব অনিয়মের বিষয়ে মাটিকাটা ইউনিয়নের লোকজন প্রশাসনের কাছে ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।

১নং ওয়ার্ডের অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন প্রতিবন্ধী ও তাদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়যে, তারা পাঁচ হাজার করে টাকা পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে সে নিজেই তাদের টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের মতো অন্যরাও চার হাজার করে টাকা কম পেয়েছেন বলে জানা যায়। কাউকে কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার নিজের বাড়িতে ডেকে পাঁচ হাজার করে টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকরা বাকি চার হাজার টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘এটা অফিস খরচ’।

১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুকুল শাহ আগে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও গ্রামে গ্রামে তেল বিক্রি করতেন। এখন সে পারেন না। অনেক ঘুরে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করতে পেরেছেন। তবে পুরো টাকা পাননি। অন্য সবার মতো তারও চার হাজার টাকা কেটে নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

মুকুল শাহ বলেন, আমাদের পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছেন চেয়ারম্যান। আমাদের নামে এসেছিল নয় হাজার টাকা। কার্ডেই এটা লেখা আছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন- কাগজপাতি কাউকে দেখাবেন না। চুপচাপ থাকবেন।

ওই ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধী মীর সাব্বির সিজারের মা বলেন, তার ছেলে প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু তিনি জানতেন ৯ হাজার টাকা পাওয়া যায়। বাকি চার হাজার টাকা ১নং ওয়ার্ডের সদস্য রুহুল আমিন নয়ন নিয়েছেন অফিস খরচ বলে। রুহুল আমিন নয়ন নিজেই টাকা তুলে এনে দিয়েছেন তার বাসায়।

প্রতিবন্ধী শিশু মো. আবদুল্লাহর মা রূপালী বেগম বলেন, তার দুই ছেলে প্রতিবন্ধী। তারা এবারই প্রথম ভাতা পেয়েছে। দুই ছেলেকে দেয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তবে তার ভাতার বইয়ে প্রতি সন্তানকে ৯ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে লেখা আছে। বাকি আট হাজার টাকা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়ন নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন রূপালী বেগম।

আরেক প্রতিবন্ধী শিশু ওয়াসিম জানায়, চেয়ারম্যান তাকে ডেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি চার হাজার টাকা তিনি নিজের কাছে রেখেছেন অফিস খরচ বলে। চেয়ারম্যান নয়নের বাড়ি থেকে তার মা নিজে গিয়ে টাকা এনেছেন। আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন নয়ন।

অথচ ব্যাংক থেকে চেয়ারম্যানকে টাকা দেয়ার কথা নয় অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে গোদাগাড়ি জনতা ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগ সাজুশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়ন নিজে টাকা তুলার এই কাজটি করেছেন ।ব্যাংক হইতে প্রতিবন্ধিদের টাকা চেয়ারম্যানের তুলার এখতিয়ার আছে কিনা এই বিষয়ে কথা বলার জন্য গোদাগাড়ি জনতা ব্যাংকের ম্যানাজার জনাব ফিরোজের সাথে মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়ন বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিবন্ধী কার্ড সংগ্রহ করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ সঠিক না। প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে চার হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবী করেন। নয়ন বলেন একটি মহল আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন যে আমরা বিষয়টি শুনেছি, সমাজ সেবো অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত কেেছ। অভিযোগটি সত্য প্রমানিত হলে নয়নের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হইবে।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনার তদন্ত করা হবে। অভিযোগটি সত্য প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গোদাগাড়ীর ইউএনও কে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে নির্দেশ প্রদান করা হইবে।

Development by: webnewsdesign.com