প্রতিটি নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ করা উচিত

সোমবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২১ | ৮:০১ অপরাহ্ণ

প্রতিটি নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ করা উচিত
apps

বর্তমানে সারাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চলমান রয়েছে। গতবছর ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে নির্বাচন কমিশন কতৃক ঘোষিত ইশতেহারের মাধ্যমে সারা দেশে নির্বাচনের আমেজ তৈরি হয়। বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত। তবে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সত্যিই অসাধারন। এর মধ্যে নির্বাচন বাস্তবায়ন করা অনেক দুঃসাহসিক বিষয়। সাধারণত নির্বাচন কমিশন কতৃক নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার পর থেকেই দেশে নির্বাচনের একটি আমেজ শুরু হয়।

পৃথিবীর প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশেই এমনটি হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা সমালোচনা হয়েছে যা সবারই জানা। উক্ত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের রাষ্ট্রপতি পরাজিত হয়েছে। জয়ী হয়েছে বিরোধী পক্ষের প্রার্থী। প্রকৃত বিজয় হয়েছে গণতন্ত্রের তথা মানুষের ভোটাধিকারের। পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা সবথেকে জনপ্রিয় সরকার ব্যবস্থা। কেনইবা জনপ্রিয় হবে না, হওয়ার কারণ এতে যে জনগণের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে , জনগণ নিজেদের নেতাকে নির্বাচন করে।

বাংলাদেশের নির্বাচনে পদের মর্যাদা, ক্ষমতা ও দায়িত্বের কথা বিবেচনা করলে তিন স্তরের নির্বাচন হয়ে থাকে যথা ; রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণের প্রয়োজন নেই কারণ রাষ্ট্রপতি পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয় এবং নির্বাচন করে সংসদ সদস্যরা । এখানে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হল জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে জয়ী ও সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু জনগণের উচিত যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া এবং নিজ দায়িত্বে নিজের ভোট নিশ্চিত করা। নির্বাচন কমিশন ও সরকার ভোটের আয়োজন করতে পারে কিন্তু ভোট দেওয়া জনগণ কাজ।

এরপরে আছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকার প্রশাসনের কথা বলা হয়েছে এবং সেগুলো ও নির্বাচিত হতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রশাসন সংস্থাগুলো হলো সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। স্থানীয় সরকার প্রশাসন নির্বাচন ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সংস্থাগুলোতে স্থানীয় এলাকার উন্নয়ন, শান্তি-শৃংখলা, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও পরিকল্পনার বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা ও বাস্তবায়ন করে থাকে। স্থানী সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে জনগণ সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। জনগণের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত হলে স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন ও জনমতের আশারূপ ফল বাস্তবায়িত হয়।

গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদন হল ভোট দান করা। আর ভোটদানের জন্য প্রয়োজন ভোটারদের অংশগ্রহণ। পৃথিবীতে কয়েক ধরনের শাসনব্যবস্থা রয়েছে। তা হল সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও গণতন্ত্র। এর মধ্যে জনগণের প্রিয় হল গনতন্ত্র আর শাষকবর্গের প্রিয় হল রাজতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র। কারণ শাষকবর্গ রাজতন্ত্রের মাধ্যমে বংশ পরাম্পরায় ক্ষমতায় থাকতে পারে এবং সেচ্ছাচারী হতে পারে উদাহরণ হিসেবে রাজাদের ইতিহাসে দেখলে পাওয়া যায়। আর একনায়কতন্ত্রে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা যায়। যেমনটি আছেন রাশিয়া ও চীনের শাষকবর্গরা। গণতন্ত্রে সে সুযোগ নেই। এখানে শাষকবর্গকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। অর্থাৎ জনগণই পছন্দে করবে যে ক্ষমতাসীন দল সরকারের দায়িত্বে থাকবে নাকি বিরোধীদল আসবে নাকি দল আসবে। তবে সেটা বিরোধীদল অথবা অন্য কারও কথায় নয় বরং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে।

গণতন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল অযোগ্য সরকার ও ক্ষমতা বসতে পারে। যোগ্য সরকারের জন্য প্রয়োজন জনগণের আগ্রহ। রাষ্ট্রের ভোটদানের যোগ্যতা সম্পন্ন সকল নাগরিকের উপর নির্ভর করে যোগ্য সরকার হবে কি না। কারণ জনগণের প্রদত্ত কর বা রাজস্ব দ্বারা রাষ্ট্র চলে এবং সরকার সিদ্ধান্তের উপর রাষ্ট্রের উন্নয়ন, জনগণের সুখ-দুঃখ, শান্তি-শৃঙ্খলা আইনকানুন ও অন্যান্য বিষয়দি নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন জনগণকে। এছাড়াও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার উপর নির্ভর করে নিজ দেশের বৈদশিক ভাবমূর্তি। যে সকল দেশ সঠিকভাবে গণতান্ত্রিক চর্চায় এগিয়ে আছে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল সেকল দেশের অর্থনীতি আজ উন্নত। উদাহরণস্বরূপ বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি। সুতরাং দেশের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে ও সরকারের স্বার্থে প্রতিটি জনগণের উচিত সকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।

জিসান তাসফিক
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

Development by: webnewsdesign.com