পুঠিয়ায় পানি প্রবাহের খালে বাঁধ: হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি

বুধবার, ০৭ অক্টোবর ২০২০ | ৪:৩২ অপরাহ্ণ

পুঠিয়ায় পানি প্রবাহের খালে বাঁধ: হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি
apps

রাজশাহীর পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নে যত্রতত্র ভাবে ১ হাজার অবৈধভাবে পুকুর খনন করা এবং বিল খাল দখল করে মাছচাষ করার কারণে পানি প্রবাহের খালে বাঁধ দেওয়ায় ইউনিয়নের ৯ হাজার পরিবার বন্যার পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করার অভিযোগ উঠেছে।

এতে বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দখল মুক্ত করা হবে। স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পুঠিয়া-দুর্গাপুর এলাকার আওয়ামী লীগের এক নেতার গ্রামের কিছু মানুষ বিল খাল অবৈধভাবে মাছচাষ করার জন্য। উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের কার্তিকপাড়া উত্তরবিল এবং কাশিয়াপুকুর পশ্চিমবিলের পানি বাহির হওয়া খালের কালর্ভাটের মুখে বাঁধ দিয়েছে কিছু জায়গায় লোহার নেট ও সুতির জাল দিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া ভাগলপুর সুইজগেট সড়গাছি উত্তরপাড়া কাশিয়াপুকুর ব্রিজের নিচে সুতি জাল দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

বিলের পানি আটকে রাখার ফলে মানুষের ঘরবাড়ি ভেতর ঢুকে পড়ছে। একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনকে বলার পরও উক্ত বিলের পানি বাহির হওয়া অবৈধ স্থানগুলি খোলা হচ্ছে না। বিলের পাশে বসবাস করা হাজার হাজার মানুষ গত দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবযাপন করছে। বাধ্য হয়ে অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আতীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। শতশত একর ফসলি জমির ফলস পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। বুধবার (০৭/১০/২০) তারিখ সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ৫টি গ্রামের রাস্তা ঘাট, বাড়িঘর এবং পানের বরজসহ ফসলি জমিতে পানি জমে যাওয়ায় এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দুই বিলের পানি আটকে রাখার কারণে শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের কাশিয়াপুকুর কাজুপাড়া কার্তিকপাড়া খলিশাকুড়ি তেবাড়িয়া বড়বড়িয়া মঙ্গলপাড়াসহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামের হাজার হাজার ঘরবাড়িতে বন্যা পানি ঢুকে পড়েছে। খালে বাঁধ দেওয়া মাছচাষি মোহন জানান, ‘আমি বাঁধ দিইনি। সেখানে যাদের পুকুর আছে তারা দিয়েছে। তবে আমারও সেখানে পুকুর আছে, আমিও তাদের সাথে আছি।’ মাছচাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যেটা দেওয়া আছে সেটা বাঁধ না। তবে মূল পানি প্রবাহের জায়গায় মোহন বাঁধ দিয়ে রেখেছে। সেই বাঁধ কেটে দেওয়া হলে আমাদেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে।’ বড়বড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র সরকার বলেন, পানি বন্দি মানুষগুলো বিশুদ্ধ পানিপান করা এবং রান্নাবান্না করা নিয়ে ভীষণ কষ্টের ভেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী কোনো সাহায্য সহযোগিতা পানি বন্দি মানুষেরা পায়নি।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি রহিম মোল্লা বলেন, সঠিক সময়ে অবৈধ পুকুর খনন রোধ করতে পারলে। আমাদের ইউনিয়নে বন্যায় এত ক্ষতি করতে পারত না। ছত্রারপাড়া আমার নিজ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। দ্রুত পানি বাহির করতে না পারলে। আগামীতে এই এলাকায় কোনো রবিশস্য ফসল করা সম্ভব হবে না। শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল বলেন, উপজেলার ভেতর একমাত্র আমার ইউপিতে বন্যার পানি ঢুকতে পারে। এই ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার অবৈধভাবে নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে।

পুকুর খননের কারণে বিল দিয়ে পানি বাহির হতে পারচ্ছে না। রাতুয়াল মালিপাড়া গোড়াগাছি পমপাড়া ছত্রারপাড়াসহ ইউনিয়নের প্রায় ৯ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজ বলেন, একটা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে, যারা আইন পরিপন্থী কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়াও অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের দখল মুক্ত করা হবে ।

Development by: webnewsdesign.com