পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের বন্ধন কেমন হবে

শনিবার, ১০ জুন ২০২৩ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের বন্ধন কেমন হবে
পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের বন্ধন কেমন হবে
apps

ডা. সাইফুন নাহার

যখন সন্তানের সঙ্গে পিতা-মাতার একটি নিরাপদ সংযুক্তি তৈরি হয়, তখন শিশু নিরাপদ বোধ করে। শিশুরা তাদের জীবনের প্রাথমিক বছরগুলোতে নিরাপদ সংযুক্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হলে, পরবর্তী জীবনে তাদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের আচরণগত সমস্যা এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা তৈরি হতে পারে।

* সংযোগ তৈরি করতে হবে

শিশুরা জৈব রাসায়নিক স্তরে অন্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে শক্তিশালী। এ সংযোগ প্রথমে তাদের নিকটবর্তী পরিবারের সঙ্গে এবং তারপর চারপাশের বৃহত্তর সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘটে। যদি সেই সংযোগটি না ঘটে, তবে মস্তিষ্কের যথাযথ বিকাশ নাও হতে পারে।

* সন্তানকে সম্মান প্রদর্শন করুন

মানুষ হিসাবে, শিশুরা একই বিবেচনার দাবি রাখে যা আমরা বড়দের ক্ষেত্রে সমর্থন করি। শিশুদের সঙ্গে চিন্তাশীল, সুশীল এবং সৌজন্যমূলক আচরণ করা জরুরি, যেমন আমরা অন্য বয়সিদের সঙ্গে করি। গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চাদের স্নেহশীল, লালন-পালনকারী পিতামাতারা একটি বড় হিপ্পোক্যাম্পাস তৈরি করে, যা আরও ভালো স্মৃতিশক্তি, শেখার এবং মানসিক চাপের সময় যথাযথ প্রতিক্রিয়া বাড়ায়। অতএব, যখন আমরা শিশুদের লালন-পালন করি এবং ইতিবাচক হই, তখন আমরা শিশুর মনকে সম্মান করি। যখন আমরা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যথা না দেওয়ার জন্য তাকে আঘাত না করা বেছে নেই, তখন আমরা শিশুর দেহ এবং মর্যাদাকে সম্মান করি। আমরা তার ব্যক্তিত্বকে সম্মান করি, যখন আমরা তাকে তার নিজস্ব গতিতে অন্বেষণ এবং বিকাশ করার জন্য সুযোগ দেই। আমরা তার আত্মাকে সম্মান করি, যখন স্বীকার করি যে প্রতিটি শিশু তার নিজস্ব অনন্য চেতনা নিয়ে আসে, যাকে সম্মান করতে হবে।

* সক্রিয় প্যারেন্টিং করতে হবে

সক্রিয় পিতামাতা একটি সমস্যা গুরুতর হয়ে ওঠার আগেই, প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ দেখেই সম্ভাব্য সমস্যাজনিত আচরণ শনাক্ত করতে এবং সমাধান করতে পারেন এবং করেন। সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অতিরিক্ত সময় দিয়ে, শিক্ষা দিয়ে, আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে উদ্ভূত অনেক সমস্যাকে শুরুতেই শেষ করে দিতে পারি। প্রোঅ্যাকটিভ প্যারেন্টিং বা সক্রিয় সন্তান প্রতিপালনের অর্থ হলো পিতামাতা তাদের সন্তানদের আচরণে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সাড়া দেন। এর জন্য একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপের পাশাপাশি কীভাবে সাড়া দেবেন সে সম্পর্কে পূর্ব ধারণা থাকা প্রয়োজন। যেখানে প্রতিক্রিয়াশীল পিতামাতা আবেগপ্রবণভাবে কাজ করেন, সাড়া প্রদানকারী পিতামাতা সেখানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তাদের পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে সক্ষম হন।

* সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে

এক্ষেত্রে পিতামাতা সন্তানের সবকিছু মেনে নেবেন, তাহলে তারা ইতিবাচক পিতামাতা থাকবেন, বিষয়টি এমন নয়। পিতামাতাই তাদের শিশু সন্তানের সবকিছুর নেতৃত্ব দেবেন, পথপ্রদর্শক হবেন, কিন্তু একটু ভিন্নভাবে।

প্রকৃতপক্ষে, এই বড়, নতুন পৃথিবীতে তাদের যাত্রাপথে তাদের পথপ্রদর্শনের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব না থাকা শিশুদের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব দেওয়ার অর্থ হলো পিতামাতা তাদের নির্ধারিত সীমানার ভেতরে থেকে, তাদের সন্তানের সঙ্গে এমনভাবে সম্পর্ক স্থাপন করবেন, এমনভাবে আচরণ করবেন, যেন শিশুরা বুঝতে পারে যে তাদের পিতামাতা তাদের শুনছেন, তাদেরকে বুঝতে পারছেন। এতে শিশুদের আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে, তারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে পারবে, যা তাদের জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে। তাছাড়া, এতে পিতামাতার ওপর তারা ভরসা করতে পারবে, বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে, যা পিতামাতার সঙ্গে তাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াস্ট্রিট ও সাইকোথেরাপিস্ট, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।সূত্র : যুগান্তর 

Development by: webnewsdesign.com