পাঁচবিবির বাগজানায় বন্ধ রেল স্টেশনটি পুনরায় চালুর দাবী এলাকাবাসির

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৪:৪৫ অপরাহ্ণ

পাঁচবিবির বাগজানায় বন্ধ রেল স্টেশনটি পুনরায় চালুর দাবী এলাকাবাসির
apps

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি-হিলির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত বাগজানা রেল স্টেশনটি। এক সময় ছিলো উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলাখ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই রেল স্টেশনটি। লোকবল সংকটসহ বিভিন্ন কারনে ২০০৫ সালে রেলস্টশনটি বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। সেই বন্ধ হওয়া রেলস্টেশনটি পুনরায় চালুর দাবী করছেন এই দুই ইউনিয়ন এলাকাবসী।

প্রায় পনেরো বছর ধরে ২টি ইউনিয়নবাসীর কাছে শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে স্টেশনটি । সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্টেশনটিতে নেই আর সেই আগের মত শত শত ট্রেন যাত্রী।

জানাগেছে,রেলস্টেশনটি স্থাপনের আগে উপজেলার বাগজানা ও ধরঞ্জি ইউনিয়নের হাজার হাজার সাধারণ মানুষের যানবাহন ও রাস্তাঘাটের অবস্থা ছিল করুন। দু’টি ইউনিয়নবাসীর কষ্ট লাঘোবের কথা মাথায় রেখে নেতৃস্থানীয় আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আওফের হোসেন, মোবারক আলী, মরহুম আকরাম হোসেন, মরহুম মাহমুদুল হক, সাখাওয়াত হোসেন, দুলাল অধিকারীসহ ব্যক্তিগণ ও স্থানীয় যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে রেল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন মন্ত্রাণালয়ে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়ে ১৯৭৪ সালে কাংখিত স্বপ্ন পুরণ হয়। তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রী এবং জয়পুরহাটের কৃতি সন্তান ডাঃ মফিজ চৌধুরী বাগজানা রেল স্টেশনটি প্রথম মৌখিক ভাবে উদ্বোধন করেন।

 

এর কিছুদিন পর স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী সভার সদস্য মশিউর রহমান যাদু জয়পুরহাটের চকবরকতের জনসভায় বাগজানা স্টেশনটি পুনরায় স্থাপনের ঘোষণা দিলে স্থানীয় ব্যক্তিদের নিজস্ব উদ্যোগে বাঁশ-খড় দিয়ে তৈরী করে অস্থায়ী টিকিট ঘর।এই টিকিট ঘরটি যাত্রীদের যাতায়াতের উৎসাহ যোগায়। ক্রমান্বয়ে স্টেশনটিতে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর বেড়ে যায় সরকারের রাজস্ব আয়। এতে খুশি হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঢেউটিন দ্বারা নির্মাণ করেন টিকেট ঘরটি। নিয়োগ দেন টিকেট মাষ্টার ও পোটারম্যান। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত এই স্টেশনে ২ মিনিটের জন্য প্রায় ৮টি লোকাল ট্রেন দাড়াতেন। এদিকে যাত্রী সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি ও রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে রেল কর্তৃপক্ষ টিন সেডের বদলে পাকা টিকেট ঘর নির্মানের কাজ হাতে নেয়। ঘরটি আংশিক তৈরীও হয়। কিন্তু হতভাগা বাগজানাবাসীর সেই সুখ আর বেশী দিন রইলো না। পরে ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের শাসনামলে রেল কর্তৃপক্ষ লোকসান দেখিয়ে স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়।

পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মরহুম অলিউজ্জামান আলমের অক্লান্ত চেষ্টায় তৎকালীন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ও পাঁচবিবির কৃতি সন্তান মরহুম আবু নাছের খান ভাসানী স্টেশনটি পুনরায় চালু করেন। এভাবে কিছুদিন চলার পরে কর্তৃপক্ষ আবারও স্টেশনটি বন্ধ ঘোষণা করে। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে রেল ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুল ইসলাম এলাকার অবহেলিত মানুষের কথা বিবেচনা করে স্টেশনটি চালু করেন।

 

হঠাৎ ২০০৫ সালে রেল কর্তৃপক্ষ লোকবল আর ইঞ্জিন সংকটের কারণ দেখিয়ে পুনরায় স্টেশনটি বন্ধ ঘোষনা করে দেয়। সেই থেকে রেল স্টেশনটি আজোও বাগজানাবাসীর নিকট শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাগজানা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, দুলাল অধিকারীসহ দুই ইউনিয়নবাসীর প্রাণের দাবি জানিয়েছেন বাগজানা রেল স্টেশনটি সংস্কার করে পার্বতীপুর থেকে খুলনাগামী রকেট মেল ও পার্বতীপুর হতে রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি দাঁড় করানো উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। তাহলে আবারও এই বাগজানা স্টেশনটি ফিরে পাবে আগের সেই প্রাণ চাঞ্চল্যতা।

Development by: webnewsdesign.com