পতেঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের পেট ঠেকেছে পিটে

রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০ | ৬:৫৫ অপরাহ্ণ

পতেঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের পেট ঠেকেছে পিটে
apps

আউটার রিং রোডের আওতায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ৫ কিলোমিটার জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা ছিল সিডিএ’র। এই জন্যে সৈকত এলাকার যুগের পর যুগ ধরে থাকা দোকান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্থায়ী পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সিডিএ’র জরিপের তথ্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের জাইকা’র কার্ড দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের দোকান মালিক সমিতির সাথে দফায় দফায় বৈঠকও করে সিডিএ। সেসময় সিডিএ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সৌন্দর্যবর্ধন কাজ শেষ হলে কার্ডধারীরা স্থায়ী পুনর্বাসনের আওতায় আসবে। পরে ২০১৮ সালের মার্চ থেকে কয়েক দফায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সরিয়ে নেওয়া হয় সৈকতের প্রায় সকল দোকান। দোকানগুলো অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয় আউটার রিং রোডের পাশে খালি জায়গায়।

২০১৯ সালের জানুয়ারি নাগাদ শেষ হয়েছে সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ, সিডিএ’র পুনর্বাসনের আশ্বাসেরও পার হয়েছে ৩ বছর। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের কপালে জোটেনি পুনর্বাসন।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দোকান মালিক সমবায় সমিতির উদ্যোগে জাইকা সিডিএ তালিকাভুক্ত সকল কার্ডধারী দোকান মালিকদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে বহুবার মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। কিন্তু টনক নড়েনি সিডিএ’র, আশ্বাসেই দায় সারছে সংস্থাটি-এমনটাই বলছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা।

এদিকে পুনর্বাসন সংখ্যা নিয়ে নতুন জটলা বেঁধেছে সিডিএ এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দোকান মালিক সমবায় সমিতির মধ্যে। সিডিএ বলছে, সৌন্দর্যবর্ধনকালীন উচ্ছেদকৃত শ’খানেক দোকানিকে দেওয়া হয়েছে জাইকার পুনর্বাসন কার্ড। আর সে অনুযায়ী করা হবে পুনর্বাসন। অন্যদিকে সমিতির দাবি, ৫ শতাধিক দোকানিকে সিডিএ দিয়েছে জাইকা’র পুনর্বাসন কার্ড। আর এদের সবাইকে আনতে হবে পুনর্বাসনের আওতায়।

জাইকার পুনর্বাসন কার্ডধারী কসমেটিকস দোকানি শেখ মোঃ সাগর বলেন, ‘মিষ্টি কথা শুনিয়ে, পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে আমাদের সাজানো দোকান সরিয়ে নিয়েছে। আমরা সৈকতের উন্নয়নের স্বার্থে সিডিএ’র সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখিয়ে তাদের কথা মেনে নিয়েছি। সিডিএ’র পুনর্বাসনের আশ্বাসের ৩ বছর পার হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়নের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়ছে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মত একটা জায়গায় আমরা গাদাগাদি করে আছি। আমাদের কি কোনো সমাধান দেওয়া হবে না।

সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম মাস্টার ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘সিডিএ আমাদেরকে উচ্ছেদ করার মাত্র ৩ মাসের মধ্যে পুনর্বাসন করার কথা ছিল। তৎকালীন ও বর্তমান সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে বারবার পুনর্বাসনের আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছি। পুনর্বাসন না করার কারণে সিডিএ ও জাইকার কার্ডধারী ৫ শতাধিক দোকানদার পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বিভিন্নসময় অবহেলিত দোকান মালিকদের পুনর্বাসননের দাবিতে আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবসময় আমি দোকানিদের অধিকার আদায়ে আওয়াজ তুলেছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে উল্টো হকার বাণিজ্যের অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমাদের পুনর্বাসন যদি শীঘ্রই করা না হয় তাহলে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আমি সৈকতের ওয়াকওয়েতে দোকান বসাবো।

এদিকে, দ্রুত উচ্ছেদকৃত দোকান মালিকদের পুনর্বাসন কাজ শুরুর কথা জানিয়ে সিডিএ’র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উপ-প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ বলেন, জাইকা’র কার্ডধারী ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের পুনর্বাসনের জন্য অতি শীঘ্রই নির্মাণ করা হবে মার্কেট কমপ্লেক্স। যেখানে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে দোকানিদের জন্য। আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে এই কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আমরা আশা করছি।’

রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, সিডিএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাইকার পুনর্বাসন কার্ডধারী ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের জন্য একটি মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু হবে। জায়গা নির্ধারণ ও আনুষঙ্গিক কাজ চলছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যেই এই কাজ শুরু করে দিবো।

জাইকার পুনর্বাসন কার্ডধারী দোকান মালিকের সংখ্যা নিয়ে তিনি বলেন, জাইকার নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সেসময় জরিপ করেছিলাম, যেখানে ১শ’ দোকান মালিককে আমরা কার্ড প্রদান করেছি। এসব কার্ডধারীদের ডাটাবেজ আমাদের কাছে আছে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ১০০ জনের বাইরে একজনকেও এই কমপ্লেক্সে জায়গা দেওয়া হবে না বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Development by: webnewsdesign.com