পণ্য ছাড়াই রাজশাহী ছাড়ল কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন

শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২:১৬ অপরাহ্ণ

পণ্য ছাড়াই রাজশাহী ছাড়ল কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন
apps

কম খরচে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষিপণ্য পৌঁছে দিতে বিশেষ ট্রেন চালু করেছে রেলওয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেল স্টেশনে উদ্বোধন করা হয় রাজশাহী কৃষি স্পেশাল ট্রেন।

ট্রেনটির উদ্বোধন করেন রেলওয়ে পশ্চিম রাজশাহীর ট্রেন ইন্সপেক্টর (টিআই) শামিম আহম্মেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমার্শিয়াল অফিসার (এসিও) নূরে আলম।

রহনপুর রেল স্টেশনের বুকিং সহকারী রাকিব জানায়, কৃষি স্পেশাল ট্রেনটিতে কোনো পণ্য বুক করেনি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে পণ্য ছাড়াই ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। রাজশাহী রেল স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন বলেন, ট্রেনটিতে প্রারম্ভিক স্টেশন রহনপুর থেকে পণ্য ছাড়াই ছেড়ে এসেছে। রাজশাহীসহ পথে ট্রেনটিতে কোনো পণ্য বুক হয়নি। পণ্য ছাড়াই রাজশাহী রেল স্টেশন ছেড়েছে ট্রেনটি।

পশ্চিম রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম রেলে ৩টি কৃষিপণ্য ট্রেন চালু করেছ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। এর মধ্যে গত ২২ অক্টোবর যশোর থেকে প্রথম আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন। ২৬৮ কেজি পণ্য নিয়ে যশোর ছেড়ে যায় ট্রেনটি। ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় থেকে উদ্বোধন করা হয় পঞ্চগড় কৃষি স্পেশাল ট্রেন। পণ্য ছাড়াই ট্রেনটি উদ্বোধন শেষে গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। শনিবার উদ্বোধন করা রাজশাহী কৃষি স্পেশালের একই দশা। এই ট্রেনটিও পণ্য ছাড়াই ছেড়ে গেছে।

তথ্যানুযায়ী প্রতি কৃষি স্পেশাল ট্রেনে আপ ও ডাউনে জ্বালানি তেল খরচ হয় ২৪০০ লিটর। আর সব মিলিয়ে রেলের ব্যয় ২ লাখের অধিক টাকা।

কৃষিপণ্য চাষী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহী থেকে ঢাকায় কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য কেজিপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা। প্রতি কেজি পণ্য ট্রেনে পরিবহন করতে ভাড়ার পাশাপাশি কুলি, মাঠ থেকে স্টেশন ও স্টেশন থেকে মোকামের আলাদা পরিবহন খরচ পড়ে যাচ্ছে কেজি প্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকার বেশি। অথচ সড়কপথে ট্রাকে পণ্য পরিবহন করতে তাদের খরচ হয় কেজিপ্রতি দুই-আড়াই টাকা।

এছাড়া ট্রেনের সময় সকালে হওয়ায় বাজারজাত নিয়েও আছে শঙ্কা। অন্যদিকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়সহ নানা কারণে সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে না পারলে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা আছে। এছাড়া কাঁচা পণ্য ঘেমে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলাম বলেন, ট্রেনগুলোতে প্রতিদিন ১২০ টন পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধা মিলবে। প্রতি কেজি সবজি ও কৃষিপণ্য বহনে খরচ পড়বে ১ টাকা ৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৭ পয়সা। ট্রেনের অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে ফল ও সবজি পরিবহন করা যাবে। এছাড়া রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত পণ্য মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহন করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী ডলার বলেন, ‘ট্রেনের মূল ভাড়া কম। তবে ফসলের মাঠ থেকে স্টেশন এবং স্টেশন থেকে প্লাটফরম থেকে ট্রেনে উঠা ও নামানে কুলি ভাড়া, আবর স্টেশন থেকে বাজারের মোকামে আলাদা যানবাহনে পণ্য পরিবহন করতে বাড়তি খরচ আছে। এছাড়া ট্রেনে পণ্য ওঠানো ও নামানোয় কুলিরা যে যার ইচ্ছামতো টাকা নেয়। অন্যদিকে, সড়কপথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ঢাকার বাজারে পণ্য পাঠাতে খরচ হয় প্রতি কেজিতে দুই থেকে আড়াই টাকা। আর ট্রেনে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে যাচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে টাকারও বেশি। এর সঙ্গে ভোগান্তি তো আছে। এজন্য ট্রেনে পণ্য পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেউ।’

পশ্চিম রেলের চীফ কমার্শিয়াল অফিসার সুজিত বিশ্বাস বলেন, আমরা কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। রাজশাহী অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে আর ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে। এতে প্রতি কেজি কৃষিপণ্য খরচ পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে ১৩টি স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে তেজগাঁও স্টেশনে থামবে। ট্রেনটি নাচোল, আমনুরা জং, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ রোড, আড়ানি, আব্দুলপুর, আজিমনগর, ঈশ্বরদী বাইপাস, চাটমোহর, বড়ালব্রিজ, জয়দেবপুরে থামবে। এছাড়া সব আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত আছে।

Development by: webnewsdesign.com