নড়াইল থেকে নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে। বাবুই পাখি যাকে শিল্পি পাখি বা তাতি পাখি বলেও তাদের নিখুঁত শিল্প বা কারুকাজের জন্য। নড়াইল জেলা উপজেলা পৌরসভার সহ ইত্যাদি গ্রাম-অঞ্চল ঘুরে দেখা মিলেনি বাবুই পাখি বা তার অনিন্দ্য বাসা।শিল্পের বড়াই করা পাখিগুলো যেন নড়াইল জেলা থেকে আজ বিলুপ্ত প্রায়। মানুষকে মানবিকভাবে জাগ্রত করার জন্য কবি রজনীকান্ত সেন লিখেছিলেন বাবুই পাখিকে নিয়ে “স্বাধীনতার সুখ” কবিতা। কালজয়ী কবিতাটি এখনো মানুষের মুখে মুখে। বাবুই পাখিকে নিয়ে কবির ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতাটি আজো মানুষ উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করলেও হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও বাবুই পাখির বাসা।
বাবুই পাখির বাসা আজ অনেকটা স্মৃতির অন্তরালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫/২০ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জে তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছে দেখা যেত বাবুই পাখির নিপুণ কারুকাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাসা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখন আর আগের মত বাবুই পাখির নিপুণ তৈরি করা দৃষ্টিনন্দন বাসা চোখে পড়ে না। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করত।কিন্তু সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ এ পাখিটি আমার হারাতে বসেছি।
গাছের ঝুড়ির মতো চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি জগৎ জোড়া। বাবুই পাখি মানুষের খুব কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে, বাবুই দলপ্রিয় পাখি অর্থাৎ এরা যেখানে ভ্রমন করে দল বেঁধে এক সাথে ভ্রমন করে।এদের বাসা গুলি দেখতে খুব আকর্ষণীয় হয়। এরা সাধারণত পাতা দিয়ে খুবই চমৎকারভাবে নিজেদের বসবাসের জন্য জায়গা তৈরি করে। বাসাগুলো তৈরি করে তালপাতা এবং বিভিন্ন ঘাসের খড় দিয়ে। তাল গাছ ও নারিকেল গাছে গ্যাস তৈরী করার পাত্র যেমন দেখতে হয় ঠিক সেই রকমের বাসা এরা অসাধারন নিপুন ভাবে তৈরী করে যা কিনা গাছের ডালে ঝুলে থাকে অনেকটা ঝুলানো কলসির মত। গবেষণার তত্ত্বমতে, মে মাস থেকে সেপ্টম্বর মাসের মধ্যে এদের প্রজনন হয়ে থাকে । প্রজননের সময় স্ত্রী ও পুরুষ প্রভেদ ভালোভাবেই বোঝা যায়, এই সময়ে পুরুষ পাখির মাথা উজ্জ্বল হলুদ রঙের হয়ে থাকে ।
ঠোঁট বাদামী রঙের ও পিঠের দিকটা ঘন বাদামী রঙের হয়ে থাকে এবং তাতে হলুদ রঙের ডোরা কাটা দাগ থাকে । বুকের দিকের অংশ হলুদ এবং নীচের দিকটা হালকা ক্রীম কালারের হয়ে থাকে । এই পাখির প্রধান খাদ্য হলো দানা শস্য, এছাড়া খাদ্য হিসাবে এরা ছোট শামুক, টিকটিকি, ছোট ব্যাঙ ইত্যাদি গ্রহন করে । বাসা বানানোর পর পুরুষ বাবুই পাখি এমন ভাবে পাখা মেলে থাকে যে তাতে স্ত্রী পাখিটা আকৃষ্ট হয় । যদি স্ত্রী বাবুই পাখির বাসাটি পছন্দ হয় তবে স্ত্রী বাবুই পাখিটা বাসায় প্রবেশ করে । বাসায় স্ত্রী বাবুই পাখি ২ অথবা ৪ টি ডিম পাড়ে । ডিম পাড়ার পর স্ত্রী বাবুই পাখির উপর পুরুষ বাবুই পাখির আর কোনো আশক্তি থাকে না । তখন পুরুষ বাবুই পাখিটা নতুন করে তার নতুন সঙ্গীর জন্য বাসা বুনতে থাকে । পুরুষ বাবুই তার পুরো বাসাটি তৈরি করতে সময় নেই ১৮ দিন।এদের বাসাগুলোতে শুকনো মাটি পাওয়া যায়। এরা ভিজে মাটি সংগ্রহ করে যেখানে ডিম পারে তার ঠিক পাশে রেখে দেয়। গবেষণা সূত্রে আরো জানা যায় , বাসাটি যাতে প্রাকৃতিক কারণে কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেই জন্য মাটি সংগ্রহ করে বাসায় রাখে। এই মাটি গুলি দিয়ে তারা তাদের বাসার গাঠনিক দিকটা মজবুত করে।
তারা বাসাগুলো মাটি থেকে অনেকটা এবং গাছের ডাল থেকে ঝুলন্ত তৈরি করে। এরা নিজেদের বাসার গাঠনিক দিকটা মজবুত করার জন্য প্রায় ৫০০ টা বাঁধন দেই তাই এই পাখিকে ‘ শিল্পী’ পাখিও বলে। আবার বাবুইকে তাতি পাখিও বলা হয়। বিশেষ তত্ত্বমতে জানা যায়- মিলন করার আগে ২০ থেকে ৩০ দিন খাবার সংগ্রহ ও বাসা তৈরির কাজে ব্যাস্ত থাকে। প্রথম প্রথম বাবুই পাখি মিলন করার জন্য কোনো গুহায় কিংবা কোনো নির্জন জায়গা বেছে নেই এবং জোড়া সম্পূর্ণ হলে বাসায় চলে আসে মিলন করার জন্য।
Development by: webnewsdesign.com