নড়াইলে মোমবাতি প্রজ্বলনেরমধ্যদিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ

মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২:২০ অপরাহ্ণ

নড়াইলে মোমবাতি প্রজ্বলনেরমধ্যদিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ
apps

নড়াইলে মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্যদিয়ে স্মরন করল ৫২’র ভাষা শহীদদের। প্রতিবছরের মত এবছর ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় শহরের কুড়িরডোব মাঠে একুশের আলো নড়াইলের আয়োজনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন কর করা হয়। সন্ধ্যায় একসাথে মোমবাতি জ্বলে উঠে সেই সাথে ‘আমার ভায়ের রক্ত রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি’ এই গানের মধ্য দিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গণসংগীত শুরু হয়। এই গান পরিবেশনের সাথে সাথে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, পিপিএম (বার) নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ রবিউল ইসলাম, পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক, মাশরাফি বিন মর্তূজার পিতা গোলাম মর্তুজা স্বপন, সমিমিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবিরসহ সংশ্লিষ্টরা। হাজারো দর্শদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে এ মাঠটি। হিন্দু-মুসলিম, বৌধ্য-খ্রিস্ট্রান, ধনী-গরীবের ভেদাভেদ ভুলে সকলে মেতে ওঠে আনন্দে। ঢাকা, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, সাতক্ষিরা, খুলনা, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শকরা নয়নাভিরাম এ দৃশ্য দেখে আনন্দিত। শুরুর কথাঃ বীর শ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি খন্দকার শাহেদ আলী শান্ত বলেন, ১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সর্ব প্রথম স্থানীয় বীর শ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদ স্মৃতি সংসদের আয়োজনে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্যক্রম শুরু করে। প্রথমদিকে উদ্দোগ নেয়া হয় ভাষা শহীদদের স্মরন করার জন্য বীর শ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদ স্মৃতি সংসদের সদস্যদের নিজ নিজ বাড়ি এবং স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালানোর মধ্যদিয়ে। এভাবে দুই বছর চলার পর প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমান, বর্তমান নাট্য ব্যক্তিত্ব কচি খন্দকার, খন্দকার শাহেদ আলী শান্তসহ স্থানীয়রা এ অনুষ্ঠান কুড়িরডোব মাঠে করার সিদ্ধান্ত নেয়। গঠন করা হয় একুশ উদয্াপন পর্ষদ। এ উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে শহরের কুড়িরডোব মাঠে প্রথমে দুই হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু করে। বর্তমান অবস্থাঃ ১৯৯৯ সালে প্রেয়াত চিত্রশিল্পী কাজল মুখার্জীর আঁকা আল্পনার মধ্যদিয়ে কুড়িরডোব মাঠে দুই হাজার মোমবাতি নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও হাটিহাটি পা পা করে প্রতি বছরই বৃদ্ধিপেতে থাকে মোমবাতির সংখ্যা। এর সাথে যোগ হয় মাটির তৈরী প্রদীপ। গত বছর ৫০ সহস্রাধীক প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানো হয়। এর সংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পেতে পেতে পরবর্তিতে জ্বালানো হয় প্রায় এক লক্ষ। যে ভাবে সাজানো হয় মাঠঃ ভাষা শহীদদের স্মরনে মাঠকে সাজানোর কাজ শুরু হয় সকাল থেকে। মাঠের চারি পাশে ঘিরে রাখা হয় বাশ এবং রশি দিয়ে। মাঠে বিভিন্ন ধরনের আঁল্পনা একে তার উপর মাটি ছিদ্র করে মোমবাতি সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়। স্থানীয় যুবকরা কোন প্রকার পারিশ্রমীক ছাড়ায় নিজ নিজ উদ্দোগে এ কাজ তারা করে থাকে প্রতিবছর। সাজিয়ে রাখা প্রদীপে সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজ্বলন শুরু করা হলে স্বেচ্ছা সেবকরা চারপাশ থেকে জ্বালানো শুরু করে। চলে দেশত্ববোধক গান। এসময় শহরের বিদ্যুৎ প্রায় এক ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। দর্শকদের প্রতিক্রিয়াঃ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শকরা প্রতিবছরের মত এ বছরও এ দৃশ্য দেখে তাদের নয়ন ভরে যায়। কলেজ ছাত্রী সংযুক্তা আক্তার বলেন, এখানের দ্বীপশিখা প্রজ্বলনের কথা শুনেছি এ বছর প্রথম দেখলাম। আগামীতে আবার আসব। গৃহবধূ ঝর্ণ বিশ্বাস বলেন, মোমবাতি প্রজ্বলন দেখার জন্য আমরা প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকি। আমার জানামতে অন্য কোথাও এতবড় আয়োজনে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হয়না। অনুষ্ঠানটি দেখতে অনেক ভালোলাগে।
খুলনা থেকে আগত কলেজ ছাত্রী লামিয়া জানান, নড়াইলের দ্বীপশিখা প্রজ্বলনের এ দৃশ্য না দেখে দুরে থাকলে জীবন থেকে অনেক বড়কিছু একটা হারিয়ে গেছে বলে মনে হত। তাই দেখতে এসেছি। মাগুরা থেকে আগত ফরহাদ হোসেন জানান, যেখানে থাকি না কেন প্রতিবছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নড়াইলে চলে আসি মোমবাতি প্রজ্বলনের দৃশ্য দেখার জন্য। সাতক্ষিরা থেকে আগত মেহেদী হাসান জানান, নড়াইলের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রদীপ প্রজ্বলন একটি সুন্দর অনুষ্ঠান যা আমার অত্যান্ত ভাল লাগছে। আয়োজকঃ একুশের আলো নড়াইলের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, প্রতিবছরের ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা এ অনুষ্ঠানটি করে আসছি। নড়াইলের সর্বস্তরের মানুষ আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার প্রথম ধাপ ভাষা আন্দোলন। আমরা মনে করি এখনও পৃথিবী থেকে সকল অন্ধকার দুর হয়নি তাই আমরা নড়াইলের মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্যদিয়ে সকল জড়তা এবং অন্ধকারকে দুর করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। তিনি আরো বলেন, অনুষ্ঠানটি একদিন আর্ন্তজাতিক মানের অনুষ্ঠান হবে বলে আমার বিশ্বস। এ রকম একটি অনুষ্ঠান সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এটি আমাদের অনুষ্ঠান নয় নড়াইল বাসীর অনুষ্ঠান।

Development by: webnewsdesign.com