‘নাসার কয়েন’ দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা লোপাট!

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১ | ৬:৪২ অপরাহ্ণ

‘নাসার কয়েন’ দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা লোপাট!
apps

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কয়েন কিনে তা বিক্রি করলেই পাওয়া যাবে কয়েক কোটি টাকা। এমন লোভ দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। হাতেনাতে তারা ধরা পড়েছে পিবিআইয়ের জালে।

সম্প্রতি এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ধাতব কয়েন, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে পিবিআই-এর সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই জানায়, পুরনো ধাতব মুদ্রা, টক্কর (এক প্রকার গিরগিটি) এবং সীমান্ত পিলারকে এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা মূল্যবান বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে। সেগুলো বিক্রির নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো তারা। প্রতারক চক্র দাবি করত যে, পুরনো এসব ধাতব পদার্থ নাসায় গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে ধাতব মুদ্রা চড়া দামে নাসা কিনে নেয় এবং এগুলো বিক্রি করে কয়েক মিলিয়ন ডলার পাওয়া সম্ভব। আর এই ফাঁদেই পা দিত অনেকে।

ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বরে এ প্রতারণার ঘটনা ঘটে। এর প্রায় বছর খানিক আগে প্রতারক চক্রের এক সদস্যের সঙ্গে পরিচয় হয় আনন্দ গ্রুপ নামে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের সঙ্গে। ওই ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে এসে আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, যার পরিচয় হিসেবে বলা হয় যে তিনি পৃথিবী ঘুরে বেড়ান। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে তার ব্যবসা পরিচালনা করেন। এছাড়া ব্যবসায়িক কাজে তিনি কুয়েত, স্পেন, দুবাই, মালয়েশিয়া, লন্ডন – এসব জায়গায় ঘুরে বেড়ান বলেও দাবি করা হয়।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, তারা তদন্ত করে জানতে পেরেছেন যে আসলে দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি এসএসসি পাস এবং পেশায় একজন পেয়ারা ব্যবসায়ী। একপর্যায়ে দ্বিতীয় ব্যক্তি ব্যবসায়ীকে বলেন যে, তার কাছে একজন ক্রেতা আছেন, যিনি নাসাসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত। তিনি বিদেশে থাকেন, তবে পুরনো ধাতব মুদ্রা কিনতে চান।

আর এমন একজন বিক্রেতা রয়েছেন, যিনি সীমান্ত এলাকায় থাকেন এবং ভারত থেকে এসব জিনিস নিয়ে আসেন। পুরো লেনদেনটি যেহেতু মিলিয়ন ডলারের ব্যাপার, তাই আনন্দ গ্রুপের ওই ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়।

বনজ মজুমদার জানান, যে ব্যক্তিকে ক্রেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে, তিনি আসলে একজন শাড়ি ব্যবসায়ী। আর যে ব্যক্তি বিক্রেতা, তিনি পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ঝিনাইদহে একটি বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করেন।

এই চক্রের আরেক সদস্য, যাকে মুদ্রার ক্রেতার ব্যক্তিগত সচিব বা পিএস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, তিনি আসলে টুকরো কাপড় ঝুটের ব্যবসায়ী বলে জানায় পিবিআই।

পিবিআই বলছে, এই ঘটনার পর প্রতারণার শিকার ব্যক্তির পক্ষ হয়ে কাজ করছেন এমন একজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতারক ব্যক্তিটি ক্রেতা সেজে চুয়াডাঙ্গায় যায় ধাতব মুদ্রাটি দেখতে। সেখানে তাদের একটি ভল্ট এবং একটি টেকনিক্যাল রুম দেখানো হয়।

আর তখন পুরো বিষয়টি বিশ্বাস করতে শুরু করে প্রতারকের টার্গেটরা। মুদ্রাটির দাম ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। যে ব্যক্তি মুদ্রাটি কিনবেন, তিনি তখন সাড়ে আট কোটি টাকার একটি চেক দেন বিক্রেতাকে। তবে বাকি দেড় কোটি টাকা তার কাছে নেই বলে জানালে ঝিনাইদহে বসে সেই টাকা দিয়ে দেন আনন্দ গ্রুপের পক্ষে এক কর্মকর্তা।

পরে কয়েনটি নিয়ে চলে যান আনন্দ গ্রুপের ওই কর্মকর্তা। এর তিন দিন পর যিনি কয়েনটি বিক্রি করেছিলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে জানান তারা যে কয়েনটি কিনেছেন সেটি আসল নয়, নকল। তবে আসল কয়েনটি তার কাছে রয়েছে এবং সেটি পেতে হলে ১০ কোটি টাকা দিতে হবে।

তখন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বুঝতে পারেন যে, পুরো বিষয়টি ভুয়া, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই পূর্ব-পরিচিত এবং এরা কেউই মার্কিন নাগরিক কিংবা নাসার সদস্য নয়। পরে চলতি মাসের ৬ তারিখ প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক বাদী হয়ে ঝিনাইদহের সদর থানায় মামলা করেন। এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়া হলে তারা এই অভিনব কায়দায় প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারে।

এর তদন্তের জের ধরে যশোর, ঝিনাইদহ ও ঢাকা থেকে পাঁচজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ভল্ট, দুটি পুরনো মুদ্রা বা কয়েন, নগদ টাকা ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় বলে পিবিআই জানিয়েছে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এরা এত লাভ দেখায় এবং মানুষ এমন সম্মোহনের মধ্যে পড়ে যায় যে সম্পূর্ণরূপে প্রতারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এরা বুঝতে পারে না। এমনকি প্রতারণার শিকার হওয়ার অনেক দিন পরও বুঝতে পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন লজ্জায় কাউকে বলেও না।

এই চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে বলেও জানানো হয়। এদিকে, একই সংবাদ সম্মেলনে আরেকটি চক্রের তিন সদস্যকে আটক করার কথা জানানো হয়, যারা আয়ারল্যান্ডের ভিসা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগে রয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com