নবীনগরে মহেশ ভট্টাচার্যের ভিটায় সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প

প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০ | ৬:৩৫ অপরাহ্ণ

নবীনগরে মহেশ ভট্টাচার্যের ভিটায় সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প
apps

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর তথা বৃহত্তর কুমিল্লার খ্যাতিমান ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মহেশ ভট্টাচার্যের বসতভিটায় সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী। ইতিমধ্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এলাকার লোকজন। এরপরও সরকারের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ না হলে তারা কঠোর আন্দোলনের ও ট্রাস্টিদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুমকি দেন তারা। আজ শনিবার স্থানীয় এমপি এবাদুল করিম বুলবুলের সাথে এবিষয়ে কথা বলবেন আন্দোলন কারীরা।

নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রামে মহেশ ভট্টাচার্যের রেখে যাওয়া বসতভিটাসহ ৭৪ শতক সম্পতি সরকার খাস খতিয়ান ভুক্ত করে সেখানে মুজিববর্ষে গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য ৩২টি ঘর নির্মাণ করছে। এরই প্রতিবাদে মহেশ ভট্টাচার্যের স্মৃতি রক্ষায় মঙ্গলবার বিকালে বিটঘর এলাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

বিটঘর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাইয়ুমের সভাপতিত্বে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে কয়েকশ লোক উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ বক্তারা মহেশ ভট্টাচার্যের রেখে যাওয়া বসতভিটাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রক্ষায় প্রথানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়াও মানববন্ধন ও মিছিল করে এলাকাবাসী ।

এই পরিস্থিতিতে বিটঘরের গৃহনির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফ আহমেদ রাসেল, নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) ইকবাল হাসান।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফ আহমেদ রাসেল বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের মধ্যে ৩২টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে এখানে। পুরো জায়গাটিই এখন সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত। তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে আলোচনা করবেন বলেও জানান।

মহেশ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্রের সদস্য অসীম দত্ত বলেন, “বিটঘরের আশপাশের ১৪টি গ্রামে অনেক খাস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। তবু কেন মহেশ ভট্টাচার্যের স্মৃতি নষ্ট করে আশ্রয়ন প্রকল্প করা হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়।

তিনি আরো বলেন, মহেশ ভট্টাচার্যের সম্পত্তি দেখার জন্যে তিন সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড আছে। এই বোর্ডের ম্যানেজিং ট্রাস্টি হচ্ছেন সাবেক অ্যটর্নি জেনারেল নিখিলেশ দত্ত। আমরা শিগগির এই কাজ বন্ধ করতে এবং খাস খতিয়ান থেকে ফিরিয়ে দিতে হাই কোর্টে রিট করব। শুধু নবীনগরেই নয় কুমিল্লা শহরেও ট্রাস্টের অনেক সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন অসীম দত্ত।
নবীনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অজন্ত ভদ্র বলেন, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ৩২টি ঘর নির্মাণকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু দানবীর মহেশ ভট্টাচার্যের স্মৃতি ধ্বংস করে তা করা উচিৎ নয়।

উল্লেখ, সমাজ সেবক মহেশ ভট্টাচার্য- বাংলাপিডিয়ায় দেওয়া তথ্যে জানা যায়, মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৮৫৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ঈশ্বরদাস তর্কসিদ্ধান্ত ছিলেন একজন পণ্ডিত। তার মায়ের নাম রামমালা দেবী।

চরম দারিদ্র্যের কারণে মহেশচন্দ্রের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ হয়নি। তবে তিনি ঘরে বসে লেখাপড়া করেছিলেন। তিনি বঙ্গ বিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৮৮৩ সালে পঞ্চান্ন টাকা পুঁজি করে ব্যবসায়ের লক্ষ্যে কলকাতা যান তিনি। সেখানে ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন। পরিশ্রম ও অধ্যবসায় বলে তিনি এ ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন।

আজীবন সমাজসেবক মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বাবার স্মৃতি রক্ষায় ১৯২৩ সালে কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বর পাঠশালা। ১৯২০ সালে কুমিল্লা শহরের উপকণ্ঠে শাকতলা পল্লীতে রামমালা ছাত্রাবাস এবং ১৯৩৫ সালে রামমালা গ্রন্থাগার স্থাপন করেন। নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কুমিল্লায় নির্মিত হয় নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় ও নিবেদিতা ছাত্রীনিবাস।

তার নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষা সংসদ। তিনি কাশীধামে প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বর পাঠশালা টোল। তার প্রচেষ্টায় ১৯৩৫ সালে স্থাপিত হয় রামমালা রোড ও রামমালা ডাকঘর। গ্রামের লোকের পানীয় জলের অভাব দূরীকরণের জন্য নিজ গ্রামে একটি পুকুর খনন করেন। তিনি বারানসীতে তার সহধর্মিণী হরসুন্দরী দেবীর নামে একটি ধর্ম শালা প্রতিষ্ঠা করেন।

Development by: webnewsdesign.com